শিল্প চাইলে জমি জোগাড়ের দায়িত্ব রাজ্য সরকারকেই নিতে হবে বলে জানিয়ে দিলেন ইনফোসিসের এগ্জিকিউটিভ ভাইস চেয়ারম্যান সেনাপতি গোপালকৃষ্ণন। শিল্প মহলে ক্রিস গোপালকৃষ্ণন নামেই বেশি পরিচিত ইনফোসিস-কর্তার সাফ কথা, জমি সমস্যা মেটানোর দায় শিল্পসংস্থার নয়। রাজ্যকেই এ নিয়ে সক্রিয় হতে হবে।
গত ১ অগস্ট মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় যখন মুম্বইয়ে শিল্পপতিদের মুখোমুখি হয়েছিলেন, তখন বণিকসভা সিআইআই-এর প্রাক্তন প্রেসিডেন্ট আদি গোদরেজ জমি সমস্যার দিকে তাঁর দৃষ্টি আকর্ষণ করেন। মুখ্যমন্ত্রীকে তিনি বলেছিলেন, “আপনাদের বিকল্প জমি নীতির কথা ভাবা উচিত।” সোমবার সিআইআই-এর বর্তমান প্রেসিডেন্ট হিসেবে কলকাতায় এসে প্রায় একই কথা বলে গেলেন ক্রিস। তাঁর মতে, রাজ্য যদি সত্যি বড় শিল্প চায়, তা হলে জমি সমস্যার সমাধান করতে হবে সবার আগে। জোর দিতে হবে পরিকাঠামো গড়ায়। দেখতে হবে, জমি-জটে যেন আটকে না-যায় রাস্তার মতো গুরুত্বপূর্ণ পরিকাঠামো তৈরির কাজ। ক্রিসের বক্তব্য, জমি-সমস্যা মেটাতে এক এক রাজ্যের কৌশল এক এক রকম হতেই পারে। কিন্তু তার সমাধান জরুরি। |
সাংবাদিক বৈঠকে ক্রিস গোপালকৃষ্ণন। —নিজস্ব চিত্র |
মুম্বইয়ের শিল্পসভায় মুকেশ অম্বানী-সহ এক ঝাঁক শীর্ষস্থানীয় শিল্পপতিকে পশ্চিমবঙ্গে লগ্নির জন্য অনুরোধ জানালেও জমি প্রশ্নে নতুন কোনও কথা শোনাননি মুখ্যমন্ত্রী। বরং সম্মেলনের পরে সাংবাদিক বৈঠকে তাঁর এত দিনের অবস্থান থেকে সরে না-আসার ইঙ্গিত দিয়েছিলেন। মমতার বক্তব্য, জমি জোগাড় করে নিতে হবে শিল্প সংস্থাকেই। সরকার বিন্দুমাত্র হস্তক্ষেপ করবে না। কোনও সংস্থার পক্ষে হাজার হাজার জমি মালিকের সঙ্গে রফা করে জমি কেনা যে সম্ভব নয়, তা ইতিমধ্যেই বারবার বলেছে শিল্প মহল। তৃণমূল তবু অনড়।
মুখ্যমন্ত্রী অনড় বিশেষ আর্থিক অঞ্চলের (সেজ) তকমা না-দেওয়ার প্রশ্নেও। এই নিয়ে টানাপোড়েনে আটকে রয়েছে ক্রিসের সংস্থারই প্রকল্প। সেজ-এর সমান সুযোগসুবিধা না-পেলে তাঁদের পক্ষে যে রাজারহাটে প্রকল্প গড়া সম্ভব নয়, সে কথা এ দিন ফের বুঝিয়ে দিয়েছেন ইনফোসিস-কর্তা। বণিকসভার মঞ্চ থেকে আলাদা করে নিজের সংস্থার প্রকল্পের ভবিষ্যৎ নিয়ে মন্তব্য করতে না-চাইলেও ক্রিস বলেন, সেজ থেকে প্রাপ্য সুবিধার বিকল্প কিছু না-পেলে কেউ লগ্নি করতে আগ্রহী হবে না। তাঁর কথায়, “এ ব্যাপারে রাজ্যের মনোভাব স্পষ্ট। ভাল কথা। কিন্তু কিছু বিকল্প সুবিধা চাই।”
তবে, সেজ-এর বেশির ভাগ সুবিধাই যে হেতু কেন্দ্র দেয়, রাজ্যের পক্ষে তার কতটা পূরণ করা সম্ভব, তা নিয়ে ধোঁয়াশা রয়েছে। ইনফোসিসের সঙ্গে দফায় দফায় আলোচনাতেও সেই সমস্যার জট কাটাতে পারেনি রাজ্য। এ দিনই শিল্পমন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায় জানিয়েছেন, আজ, মঙ্গলবার গোপালকৃষ্ণনের সঙ্গে তাঁর কথা হবে।
তবে প্রকল্পের ভবিষ্যৎ অনিশ্চিত হলেও রাজারহাটে তাঁদের হাতে থাকা ৫০ একর জমি রাজ্যকে ফিরিয়ে দেওয়ার কোনও পরিকল্পনা যে এই মুহূর্তে তাঁদের নেই, সে কথাও এ দিন জানিয়ে দিয়েছেন ক্রিস।
জমি অধিগ্রহণ, জমির ঊর্ধ্বসীমা আইন, আইনশৃঙ্খলা ইত্যাদি নানা সমস্যার জেরে বড় শিল্প যখন বিমুখ, তখন ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্পের উপরে জোর দেওয়ার কথা বলছে সরকার।
কিন্তু সেটা কতটা আন্তরিক, তা
নিয়ে ইতিমধ্যেই প্রশ্ন তুলেছেন স্টেট ব্যাঙ্কের চেয়ারম্যান প্রতীপ চৌধুরী। তাঁর মতে, এ ক্ষেত্রে সত্যিই জোর দিতে চাইলে, এই শিল্পের উপযুক্ত পরিবেশ ও জায়গা করে দিতে হবে রাজ্যকে। এ দিন নিজের বক্তব্যে শিল্পের এই সমস্ত চাহিদাই ফের তুলে ধরেছেন ক্রিস। জোর দিয়েছেন কৃষি বিপণন আইন সংস্কার, খুচরো ব্যবসায় বিদেশি লগ্নির উপরেও। সরাসরি রাজ্য সরকারের দিকে অভিযোগের আঙুল তিনি তোলেননি ঠিকই। কিন্তু শিল্প মহলের অনেকেই মনে করিয়ে দিচ্ছেন যে, শিল্পের চাহিদার সঙ্গে রাজ্যের অবস্থান প্রায় সব ক্ষেত্রেই সম্পূর্ণ বিপরীত মেরুতে।
মুখ্যমন্ত্রীর শিল্প-বৈঠককে অবশ্য স্বাগত জানিয়েছেন ক্রিস। তিনি বলেন, “ভোট হয়ে গিয়েছে। রাজ্যে শক্তিশালী সরকার রয়েছে। আশা করি, তারা উন্নয়নে উদ্যোগী হবে।” |