এসইজেড তকমা চাই-ই, ফের বলল ইনফোসিস
বিশেষ আর্থিক অঞ্চলের (এসইজেড) তকমা ছাড়া এ রাজ্যে তারা যে কোনও ভাবেই প্রকল্প গড়বে না, তা আরও এক বার স্পষ্ট করে দিল ইনফোসিস। শনিবার কলকাতায় দাঁড়িয়েই এ কথা জানিয়ে গেলেন সংস্থার কো-চেয়ারম্যান এস গোপালকৃষ্ণন। আরও জানালেন, রাজ্যের শিল্পমন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায় ক’মাস আগে বেঙ্গালুরু গিয়ে ইনফোসিস কর্তাদের সঙ্গে কথা বলে হাতে হাত মিলিয়ে সমস্যা সমাধানের কথা বললেও তার পর থেকে কাজ কিছুই এগোয়নি।
ফলে সব মিলিয়ে নতুন সরকারের নীতির জটে ইনফোসিসের প্রকল্প ঘিরে অনিশ্চয়তার মেঘ আরও ঘন হল। এটা ঠিক যে পশ্চিমবঙ্গ থেকে প্রকল্প গোটানোর কথা এ দিনও সরাসরি বলেননি গোপালকৃষ্ণন। সরকারি ভাবে তেমন কিছু তাঁরা মহাকরণকেও জানাননি। কিন্তু পরিস্থিতি যা, তাতে ইনফোসিস বিদায়ের সম্ভাবনা প্রবল বলেই সংশ্লিষ্ট মহলের মত।
শনিবার প্যান-আইআইটি সম্মেলনের ফাঁকে ইনফোসিসের প্রকল্প নিয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নের উত্তরে গোপালকৃষ্ণন বলেন, “এসইজেড তকমা ছাড়া প্রকল্প গড়া সম্ভব নয়। আমাদের বাকি কেন্দ্রগুলিও এ ভাবেই তৈরি।” মাঝে এক বার কথা উঠেছিল, দেশের বাজারের চাহিদা মেটাতে কলকাতার প্রস্তাবিত কেন্দ্রটি ব্যবহার করতে পারে ইনফোসিস। তাতে এসইজেড তকমার প্রয়োজন হবে না। গোপালকৃষ্ণন কিন্তু এ দিন স্পষ্ট জানিয়ে দেন, সেটা সম্ভব নয়।
ইনফোসিস কর্তাদের সঙ্গে বৈঠক করতে কয়েক মাস আগে বেঙ্গালুরু গিয়েছিলেন শিল্পমন্ত্রী। আলোচনার পর দু’পক্ষই জানিয়েছিল, হাতে হাত মিলিয়ে সমস্যার সমাধান খোঁজা হবে। সেই বিষয়টি আদৌ এগিয়েছে কিনা জানতে চাওয়া হলে গোপালকৃষ্ণনের উত্তর, “কিছুই হয়নি।”
গোপালকৃষ্ণনের এই সব মন্তব্যের পরিপ্রেক্ষিতে রাজ্যের শিল্পমন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়কে প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন, “গোপালকৃষ্ণন আমার বিশেষ বন্ধু। ওঁর সঙ্গে কথা বলেই যা বলবার বলব। তবে আমি চাই ইনফোসিস এ রাজ্যে থাকুক।”
সংশ্লিষ্ট দফতর সূত্রে অবশ্য খবর, আপাতত যা পরিস্থিতি, তাতে এসইজেড নিয়ে নিজের অবস্থানেই অনড় থাকবে রাজ্য। বস্তুত, এসইজেড নিয়ে তৃণমূলের ঘোষিত অবস্থান থেকে যে কোনও মতেই সরে আসা হবে না, সেটা বারবার স্পষ্ট করে দিয়েছেন খোদ মুখ্যমন্ত্রী।
রাজ্যের তথ্যপ্রযুক্তি শিল্পমহলের পাল্টা প্রশ্ন, ইনফোসিসই বা নিজেদের ব্যবসার নীতি পাল্টে এসইজেড তকমা ছাড়া প্রকল্প গড়ার ঝুঁকি নিতে যাবে কেন? বিশেষ করে বর্তমান পরিস্থিতিতে। যেখানে গত কয়েকটি ত্রৈমাসিকে তাদের আর্থিক ফলাফল প্রত্যাশার ধারেকাছে যায়নি। এবং তার সঙ্গে যুক্ত হয়েছে আমেরিকা, ইউরোপের নড়বড়ে অর্থনীতি।
এসইজেড তকমা না-হলেও তার তুল্যমূল্য আর্থিক সুবিধার ব্যবস্থা ইনফোসিসকে করে দেওয়া যেতে পারে বলে রাজ্য সরকারের বিভিন্ন সূত্রে বলা হচ্ছিল। গোপালকৃষ্ণন কিন্তু এ দিন বলেন, “এখনও পর্যন্ত এ ধরনের কোনও প্রস্তাব আমাদের কাছে আসেনি।” তা ছাড়া ঘটনা হল, এসইজেড তকমা থাকলে যে সুযোগ-সুবিধা কেন্দ্র দিতে পারে, তা রাজ্যের পক্ষে দেওয়া অসম্ভব। কারণ, পরিষেবা কর, শুল্ক, কোম্পানি কর ইত্যাদিতে ছাড় পায় বিশেষ আর্থিক অঞ্চল। যা দেওয়ার এক্তিয়ার রাজ্যের নেই।
তবে রাজ্য জুড়ে লগ্নি-খরার মাঝে ইনফোসিসের প্রকল্প যে ভাবমূর্তি শোধরানোর কাজে আসতে পারে, তা তৃণমূল সরকার বিলক্ষণ জানে। কিন্তু সংঘাত বাধছে তার রাজনৈতিক অবস্থানের সঙ্গে। যা বদলাতে কোনও ভাবেই রাজি নন মুখ্যমন্ত্রী। এই অবস্থায় ‘এসইজেড তকমা দিতে না হয়, আবার লগ্নিও না-যায়’ গোছের রাস্তা হাতড়াচ্ছে রাজ্য। কখনও কেন্দ্রের কাছে পরোক্ষে আর্জি জানানো হয়েছে, রাজ্যের আবেদন ছাড়াই ওই তকমা দিয়ে দেওয়ার জন্য। আবার কখনও বলা হয়েছে সরাসরি এসইজেড না-বলেও সমতুল্য সুবিধা দেওয়ার কথা। শাপুরজি-পালোনজির জমিতে প্রকল্প সরিয়ে আনা নিয়েও জল্পনা হয়েছে। ইতিমধ্যেই এসইজেড তকমা পাওয়া ওই প্রকল্প তৈরি করতে আর আগ্রহী নয় শাপুরজি-পালোনজি। কিন্তু সেই পথেও বিশেষ অগ্রগতি হয়নি।
এসইজেড ছাড়া অন্য কোনও পথে অগ্রগতির সম্ভাবনা যে ক্ষীণ, শনিবার তা স্পষ্ট করে গেলেন গোপালকৃষ্ণন।

অনিশ্চিতের পথ
সেপ্টেম্বর, ২০০৫
রাজ্যে লগ্নিতে আগ্রহ ইনফোসিসের।
ফেব্রুয়ারি, ২০০৬
চাইল ১০০ একর জমি।
অগস্ট, ২০০৯
জমি তৈরি, জানাল রাজ্য।
নভেম্বর, ২০১০
রাজারহাটে ৫০ একর বরাদ্দের চিঠি বাম সরকারের।
২০১২
ফেব্রুয়ারি: এসইজেড তকমা না পেলে জমি ফেরত দিয়ে টাকা নেওয়ার কথা জানাল ইনফোসিস। তকমায় নারাজ তৃণমূল সরকার।
এপ্রিল: এসইজেড বিতর্কে আপাতত স্থগিত প্রকল্প।
সেপ্টেম্বর: বেঙ্গালুরুতে পার্থ। রাজ্যের মত মেনেই লগ্নিতে রাজি সংস্থা, দাবি তাঁর।
৮ ডিসেম্বর

এসইজেড তকমা ছাড়া প্রকল্প গড়া সম্ভব নয়।
আমাদের বাকি কেন্দ্রগুলিও এ ভাবেই তৈরি।
এস গোপালকৃষ্ণন



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.