নয়া বিনিয়োগ টানার দৌড়ে হাতছাড়া হতে শুরু করেছে প্রতিশ্রুত লগ্নি। অনিশ্চিতের পিছনে ছোটার ফলে ঘোড়া পালিয়ে যাওয়ার পরে আস্তাবলের দরজা বন্ধ করার প্রবচনই সত্যি প্রমাণিত হচ্ছে। অন্তত সেটাই মনে করছে শিল্পমহল। পরিস্থিতি সামাল দিতে তাই এ বার তৎপর হয়েছে রাজ্য। দুটি সংস্থা বিনিয়োগ না-করে ফিরে যাওয়ার পরেই সোনারপুর হার্ডওয়্যার পার্ক দ্রুত লগ্নিকারীদের হাতে তুলে দেওয়ার উপযুক্ত করতে ওয়েবেলকে নির্দেশ দিল রাজ্য। কোষাগারে টানাটানি সত্বেও এ বাবদ টাকা বরাদ্দ করেছে রাজ্য।
সোনারপুর ছাড়া আরও তিনটি হার্ডওয়্যার পার্ক তৈরির সিদ্ধান্ত নিয়েছে রাজ্য। শিল্প তথা তথ্যপ্রযুক্তি মন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায় জানিয়েছেন রাজ্যের কাছে জমিও আছে। কিন্তু প্রকল্প ঘোষণার বাইরে কাজের কাজ বিশেষ হয়নি। পার্থবাবুর অবশ্য দাবি, কাজ শুরু হয়ে যাবে দ্রুত। তিনি বলেন, “সোনারপুরে নির্মাণ কাজ শীঘ্রই শুরু হবে। এ ছাড়াও কেন্দ্রীয় সরকারের টাকায় নৈহাটিতে আরও বড় হার্ডওয়্যার পার্ক তৈরি হবে।”
সফটওয়্যারে লগ্নি টানার দৌড় দেরিতে শুরু করেছিল পশ্চিমবঙ্গ। সেই ভুল হার্ডওয়্যার শিল্পের ক্ষেত্রে শুধরে নিতে চেষ্টা করেছিল বাম সরকার। বর্তমান সরকার আর এক ধাপ এগিয়ে হার্ডওয়্যার শিল্পের তালিকায় নিয়ে এসেছে সৌর বিদ্যুৎ তৈরির যন্ত্রপাতিও। এমনকী নয়া তথ্যপ্রযুক্তি নীতিতেও এই শিল্পকে বিশেষ জায়গা দেওয়া হয়েছে। তবুও এই শিল্পে দেশের বাজারে রাজ্যের ভাগ প্রায় নেই বললেই চলে। বিশেষজ্ঞদের মতে, ২০১৫ সালের মধ্যে দেশের ইলেকট্রনিক্স বাজার দাঁড়াবে ৩৬,৩০০ কোটি ডলার। সেই বাজার এখনও রাজ্যের অধরা।
২০১০ সালে বাম জমানাতেই সোনারপুর হার্ডওয়্যার পার্কের শিলান্যাস হয়। প্রায় ৯ কোটি টাকা দিয়ে জমি কেনা হয়। পূর্ব পরিকল্পনা মতো ১১ একরের পার্কে ২০টি সংস্থার জায়গা হওয়ার কথা। ৩টি সংস্থা জমি নেওয়ার আগ্রহ প্রকাশ করে টাকাও জমা দেয়। কিন্তু শিলান্যাসের পরে খাতায়-কলমেই পার্ক থেকে যায়। ভোট ও সরকার পরিবর্তনের ডামাডোলে পার্কের কাজ বিশেষ এগোয়নি।
শিল্প তালুকে লগ্নি করার আগে যে-সব ন্যূনতম পরিষেবা দেখে নেন বিনিয়োগকারী, তার কিছুই তৈরি হয়নি এখানে। ইতিমধ্যেই দু’টি সংস্থা জমি নেওয়ার আবেদন প্রত্যাহার করে নিয়েছে। আটকে গিয়েছে বিনিয়োগের পাশাপাশি কর্মসংস্থানের সুযোগও। সরকারি সূত্রের খবর, সোনারপুর হার্ডওয়্যার পার্ক চালু হলে প্রায় হাজার দুয়েক প্রত্যক্ষ কর্মসংস্থানের সুযোগ তৈরি হবে। কমপক্ষে দশ হাজার মানুষ কাজ পাবেন পরোক্ষ ভাবে।
কিন্তু পরিকাঠামো না-থাকলে যে বিনিয়োগ আসবে না, এই সহজ সত্যটা বুঝতে বর্তমান প্রশাসনকে মূল্য দিতে হল দু’টি সংস্থার বিনিয়োগ। আর তারপরেই পার্কের রাস্তাঘাট, নিকাশি ব্যবস্থা, বিদ্যুৎ সংযোগের মতো ন্যূনতম পরিকাঠামো গড়ে তুলতে রাজ্য প্রায় ৮ কোটি টাকা মঞ্জুর করেছে। লগ্নিকারীদের হাতে তুলে দেওয়ার মতো পরিকাঠামো তৈরির দায়িত্ব ওয়েবেলকে দেওয়া হয়েছে। সংশ্লিষ্ট সূত্রের খবর শীঘ্রই ওয়েবেল বিভিন্ন নির্মাণ সংস্থার কাছ থেকে দরপত্র চাইবে। দেড় থেকে দু’বছরের মধ্যে হার্ডওয়্যার পার্ক তৈরি হয়ে যাওয়ার কথা।
বছর তিনেক আগে সম্ভাবনার ভিত্তিতে যে-ছ’টি রাজ্যকে বেছে নিয়েছিল ইন্ডিয়ান সেমি-কন্ডাক্টর অ্যাসোসিয়েশন, তার মধ্যে অন্যতম ছিল পশ্চিমবঙ্গ। বাকিগুলির মধ্যে ছিল তামিলনাড়ু, কর্নাটক ও অন্ধ্রপ্রদেশ যারা ইতিমধ্যেই সংশ্লিষ্ট শিল্পে পাকা জায়গা করে নিয়েছে। কিন্তু শিল্পমহলের মতে শিল্পের নিছক আগ্রহকে লগ্নিতে বদলে দিতে হার্ডওয়্যার ও চিপ ডিজাইনিং-এর মতো বিষয়ে কলকাতা কিছুটা পিছিয়ে। এ রাজ্যে চিপ ডিজাইনিং সংস্থা নেই বললেই চলে। সেই বিনিয়োগ টানতে ‘ইন্ডিয়া ডিজাইন সেন্টার’ নামে এ ধরনের শিল্পের জন্য আলাদা একটি কেন্দ্র তৈরির পরিকল্পনাও নেয় রাজ্য। কিন্তু সেই পরিকল্পনা এখনও ফাইলবন্দি। |