আইনের জটে থমকে যেতে বসেছে কালনা মহকুমার খেলাধুলো।
গোটা কালনা মহকুমায় একমাত্র স্টেডিয়াম শহরের অঘোরনাথ পার্ক। বর্তমানে তা প্রায় খেলার অযোগ্য। মাঠের বেশিরভাগ জায়গা থেকে ঘাস উধাও। নষ্ট হয়ে গিয়েছে নিকাশি ব্যবস্থা। গ্যালারি সংস্কারের প্রয়োজন। বৃষ্টি হলে মাঠের অবস্থা হয় দেখার মতো। থকথকে কাদায় আটকে যাওয়া বলের দখল নিতে দম বেরিয়ে যায় ফুটবলারদের। চোট পান অনেকেই। চলতি বছরে এই মাঠে অনুষ্ঠিত হল মহকুমা নার্সারি লিগ। আয়োজকেরা জানাচ্ছেন, প্রায় প্রতি খেলাতেই চোট পেয়েছে খুদে ফুটবলাররা।
মাঠের এমন হাল কেন? মহকুমা ক্রীড়া দফতর সূত্রে খবর, মূল সমস্যা মাঠের জমির মালিকানা নিয়ে। প্রথমে মাঠটির মালিক ছিল কালনা পুরসভা। ১৯৮৪ সালে পুরসভা জমিটি মহকুমা ক্রীড়া সংস্থাকে দানপত্র (গিফট ডিড) করে দেয়। কিন্তু তার পরে দীর্ঘদিন কেটে গেলেও জমি হস্তান্তর সংক্রান্ত সরকারি নথিভুক্তির বিষয়ে উদ্যোগী হয়নি মহকুমা ক্রীড়া সংস্থা। সম্প্রতি তারা জমি নথিভুক্তির জন্য যোগাযোগ করে ভূমি ও ভূমি সংস্কার দফতরে। নথি নাড়াচাড়ার পরেই মাথায় হাত মহকুমা ক্রীড়া কর্তাদের। কারণ, জানা যায়, সরকারি নথিতে ওই জমি এখনও কালনা পুরসভার নামে। নাম সংশোধন করতে গেলে বকেয়া খাজনা বাবদ ৬৪ হাজার টাকা দিতে হবে। |
গত বছর সুপার সকার কাপের ফাইনালের দিন স্টেডিয়ামে উপস্থিত হয়ে রাজ্যের ক্রীড়ামন্ত্রী মদন মিত্র মাঠের উন্নয়নের প্রতিশ্রুতি দেন। সেই মতো ক্রীড়া দফতর অর্থও বরাদ্দ করে। কিন্তু জমি হস্তান্তরের জটে সেই টাকাও খরচ করা যাচ্ছে না। মহকুমা ক্রীড়া সংস্থার সম্পাদক অমরেন্দ্রনাথ সরকার বলেন, “খেলার মাঠ তো কারও ব্যক্তিগত সম্পতি নয়। তাই দানপত্র পাওয়ার পরে সেই সময়ের পদাধিকারীরা জমি হস্তান্তরের আইনি দিকটি নিয়ে ভাবেননি। এখন আমরা সমস্যায় পড়ছি। খাজনার এত টাকা কোথা থেকে পাব?” তাঁর সংযোজন, “মাঠ অবিলম্বে সংস্কার করা প্রয়োজন। সরকারি টাকাও বরাদ্দ হয়ে পড়ে রয়েছে। কিন্তু মালিকানা বদল না হলে কিছুই সম্ভব নয়।”
স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, অঘোরনাথ পার্ক স্টেডিয়ামে সারা বছর ধরেই নানা টুর্নামেন্ট হয়। ফুটবল ছাড়াও ক্রিকেট, ভলিবল, অ্যাথেলেটিক্সের আসর বসে। প্রায় প্রতি বছরই খেলতে আসে কলকাতার প্রথম সারির খেলোয়াড়েরা। এ ছাড়াও মাঠে বসে সবলা মেলা, বইমেলা। এ বছর আদৌও এই মাঠে কোনও টুর্নামেন্ট হবে কি না, সে নিয়ে প্রশ্ন উঠে গিয়েছে। কিছু দিনের মধ্যে মহকুমা সিনিয়র লিগ শুরু হওয়ার কথা। তার আগে মাঠের কিছুটা সংস্কার নিজেদের তহবিল থেকে করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে মহকুমা ক্রীড়া সংস্থা।
সরকারি আইনের প্যাঁচে ফাঁপড়ে স্থানীয় খেলোয়াড়েরাও। সম্তু দাস নামে এক ফুটবলার বলেন, “মাঠের যা অবস্থা তাতে ভালো ফুটবল সম্ভব নয়। খেলতে নামার আগে শুধু প্রার্থনা করি, যাতে চোট না পাই।” সমস্যা স্বীকার করে কালনার পুরপ্রধান বিশ্বজিৎ কুণ্ডু বলেন, “ক্রীড়া দফতর থেকে পুরসভাকে চিঠি পাঠিয়ে দ্রুত জমি হস্তান্তরের জন্য বলা হয়েছে।” তাঁর দাবি, “জমির ব্যাপারে পুরসভার আর কোনও ভূমিকা নেই। মহকুমা ক্রীড়া সংস্থাকে যে অঙ্কের খাজনা দিতে বলা হয়েছে তার পরিমাণ কমানোর চেষ্টা চলছে।” |