এক দল ছেলে স্কুলের পথে ছাত্রীদের উত্ত্যক্ত করছে বলে খবর পেয়েছিলেন তিনি। বেশ চিন্তায় পড়ে গিয়েছিলেন। কিন্তু মাথায় হাত দিয়ে বসে না থেকে আত্মরক্ষায় ছাত্রীদের সাবলম্বী করতে স্কুলে কুংফু প্রশিক্ষণ চালু করেছেন রূপনারায়ণপুর হিন্দুস্তান কেব্লস হাইস্কুলে অধ্যক্ষ সুভাষ বিশ্বাস। উৎসাহ পেয়ে গিয়েছে ছাত্রীরাও। দলে দলে তারা যোগ দিয়েছে প্রশিক্ষণ শিবিরে।
সুভাষবাবু জানান, বহু দিন ধরেই কানাঘুঁষো শুনছিলেন, জনা কয়েক যুবক স্কুলে যাওয়া-আসার পথে ছাত্রীদের উত্যক্ত করছে। কয়েক জন ছাত্রীকে জিজ্ঞাসাবাদ করলে তারাও তাঁকে সে কথা জানায়। কোন কোন এলাকায় ছাত্রীদের বিরক্ত করা হচ্ছে তা জানতে সুভাষবাবু নিজেও স্কুল শুরুর সময়ে রাস্তায় রাস্তায় ঘুরেছেন। পুলিশের কাছেও ব্যবস্থা নেওয়ার আবেদন করেছেন। পুলিশ টহল দিলেও যুবকদের পুরোপুরি বিরত করা যায়নি। কোনও দিন বড় অঘটন ঘটে যেতে পারে বলে আশঙ্কা জন্মায় অধ্যক্ষের মনে। তাই তিনি ঠিক করেন, আগে ছাত্রীদের আত্মরক্ষায় স্বাবলম্বী করা প্রয়োজন।
|
সুভাষবাবু বলেন, “ভেবেচিন্তে কুংফু প্রশিক্ষণ দেওয়ার কথা মাথায় এল। পরিচিত লোকজনের সঙ্গে আলোচনা করে এক প্রশিক্ষকের সঙ্গে যোগাযোগ করলাম। তিনি শিবির করতে রাজি হয়েছেন।” তিনি জানান, ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কথা বলে তাঁদের সম্মতিও আদায় করেছেন। মাস দুয়েক আগে থেকে স্কুলের ছাত্রী বিভাগে শুরু হয়েছে এই প্রশিক্ষণ শিবির। সপ্তাহে দু’দিন, সোম ও শুক্রবার প্রশিক্ষণ চলছে। প্রাথমিক ভাবে জনা পঞ্চাশেক ছাত্রী তাতে যোগ দিয়েছে। শিবির চালাতে ছাত্রী পিছু খরচ হচ্ছে একশো টাকা। স্কুল জোগাচ্ছে ৫০ টাকা করে। বাকিটা দিচ্ছে ছাত্রীরা।
সোমবার স্কুলে গিয়ে দেখা যায়, প্রশিক্ষকের নজরদারিতে কসরত করছে ছাত্রীরা। প্রশিক্ষক পাপুন পালের কুংফুতে ‘ব্ল্যাক বেল্ট’ খেতাব রয়েছে। তিনি জানালেন, এর আগে পটনা, নাসিক ও কলকাতার দু’একটি স্কুলে তিনি ছাত্রীদের প্রশিক্ষণ দিয়েছেন। কিন্তু আসানসোল শিল্পাঞ্চলে এই প্রথম বার। আদতে অটোমোবাইল ইঞ্জিনিয়ার এই প্রশিক্ষক বলেন, “আত্মরক্ষার উপায় হিসেবে এই বিদ্যা বেশ উপযুক্ত। তাই স্কুল কর্তৃপক্ষের প্রস্তাবে রাজি হয়ে গিয়েছি।”
যাদের জন্য এই আয়োজন, সেই ছাত্রীরাও মহানন্দে কুংফুর প্যাঁচ শিখছেন। নবম শ্রেণির মায়াকুমারী কুণ্ড, অষ্টম শ্রেণির উমা পণ্ডিতেরা জানায়, রাস্তায় আসা-যাওয়ার পথে মাঝে-মধ্যেই কটূক্তি শুনতে হয় তাদের। তারা বলে, “কুংফুর মাধ্যমে আত্মরক্ষার উপায় শিখব। কেউ আক্রমণ করলে পাল্টা মার দিতে পারব।”
স্কুলের এহেন উদ্যোগে খুশি অভিভাবকেরা। জয়ন্ত মণ্ডল, সোমনাথ দত্তেরা জানান, উৎপাদন শূন্য কেব্লস কারখানা এলাকার রাস্তাঘাট এখন বেশির ভাগ সময়েই সুনসান থাকে। মেয়েদের একা হাঁটাচলায় কিছুটা ঝুঁকি থাকে। তবে স্কুলে মেয়েদের কুংফু শেখানো শুরু হওয়ায় তাঁরা খানিকটা নিশ্চিন্ত। এ বার থেকে ফাঁকা রাস্তায় কেউ অসভ্যতা করলে মেয়েরা আত্মরক্ষা করতে পারবে বলে মনে করছেন তাঁরা। |