শিশুর মুখে বুলি ফোটাতে শিবির
ছোট্ট শিবম যখন এক পার করে দেড় বছরে পড়ল তখনও ‘বা-বা, মা-মা’ ছাড়া অন্য কোনও কথা ফুটল না দেখে চিন্তায় পড়ে গিয়েছিলেন পাণ্ডব দম্পতি। শুধু তাই নয়, তাঁদের আশঙ্কা ছিল শিবম হয়ত কানেও শুনতে পাচ্ছে না। লড়াইয়ের সেই শুরু। প্রথমে ডাক্তারের পরামর্শ মতো দু’কানে ‘হিয়ারিং এইড’ লাগানো হল। কিন্তু তাতেও রা কাড়ল না শিবম। তারপরেও চলেছিল একের পর এক চেষ্টা। শেষমেষ তাঁরা খোঁজ পেলেন দুর্গাপুরের ‘স্পিচ অ্যান্ড হিয়ারিং অ্যাকশন সোসাইটি’র (সাহস)-এর। তাঁদের পরামর্শ মতো ‘স্পিচ থেরাপি’র সাহায্যে কথা বলায় ক্রমশ উন্নতি করে শিবম। তাতেই সাত বছরে এসে স্বাভাবিক ভাবেই কথা বলতে পারছে সে।
এমন পদ্ধতি থেকে শিক্ষা নিয়ে সন্তানসম অন্য মূকবধির শিশুদেরও সমাজের মূলস্রোতে ফেরাতে উদ্যোগী হয়েছেন তপন পাণ্ডব এবং তাঁর স্ত্রী সাগরিকাদেবী। এই পাণ্ডব-দম্পতির উদ্যোগে এবং ‘সাহস’-এর সহযোগিতায় রবিবার মেদিনীপুর শহরের বক্সীবাজারে এক শিবির হয়। সেখানে শিশুদের বধিরতা নির্ণয় করা হয়। ওই শিবিরে শেখানো হয়, ‘স্পিচ থেরাপি’র মাধ্যমে কী ভাবে মূকবধির শিশুরা ক্রমশ একেবারে স্বাভাবিক হয়ে যাচ্ছেন। পাণ্ডব-দম্পতির কথায়, “সন্তান মূক-বধির হলে, সেটা যে কী যন্ত্রনা তা আমরা বুঝি। তাই এই উদ্যোগ।”

বাবা-মার সাথে শিবম।—নিজস্ব চিত্র
কিন্তু কী করে স্থায়ী ভাবে দূর হতে পারে প্রতিবন্ধকতা? শিবিরের অন্যতম উদ্যোক্তা তপনবাবুর কথায়, “একমাত্র স্পিচ থেরাপির মাধ্যমেই কথা বলার ওই সমস্যা দূর হতে পারে। অথচ, অনেকেরই ওই থেরাপি সম্পর্কে কোনও ধারণা নেই। এই পদ্ধতিতে মূলত প্রতিবন্ধকতা আছে এমন শিশুর শব্দ সচেতনতা ও ভাষা শিক্ষায় জোর দেওয়া হয়। প্রথমে অভিভাবক নিজে স্পিচ থেরাপির শিক্ষা নেবেন, তারপর তিনি সন্তানকে তা অভ্যাস করাবেন।” তবে তিনি সতর্ক করেন, “সন্তানের বয়স ৫ বছর হয়ে গেলে তখন ওই পদ্ধতিতে প্রশিক্ষণ দেওয়া শক্ত।” তপনবাবুর স্ত্রী সাগরিকাদেবী যোগ করেন, “সাহস-এর কাছেই আমরা প্রথম ওই ‘স্পিচ থেরাপি’র কথা জানতে পারি। এখন আমাদের ছেলে শিবম সম্পূর্ণ সুস্থ। ছবি আঁকার জন্য গত বছর ও রাজ্য সরকারের কাছ থেকে ‘ক্রিয়েটিভ চাইল্ড’ পুরস্কার পেয়েছে।” নিজেরা হাতেনাতে ফল পেয়ে পাণ্ডব দম্পতি দুর্গাপুরের ওই সংস্থার কর্মকর্তাদের মেদিনীপুর শহরে শিবির করার অনুরোধ করেন। সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দেন তাঁরাও।
নিজ সন্তানদের নিয়ে শিবিরে এসেছিলেন দুই মেদিনীপুরের বেশ কয়েকজন অভিভাবক। শিশুদের ভীড়ে মিশে ছিল উৎসব মাল, সার্থক সাঁতরা, ঝিনুক পাল, অহনা দাসরা। অহনার মা সুদেষ্ণাদেবীর কথায়, “মেয়েকে নিয়ে মাঝেমধ্যেই চিন্তা হয়। ও পুরো কথা বলতে পারে না। শিবিরে এসে অনেকের সঙ্গে পরিচয় হল। যাঁদের অনেকের সন্তানই শব্দ সচেতনতা ও ভাষা শিক্ষার মাধ্যমে সমাজের মূলস্রোতে ফিরছে। আমিও ‘স্পিচ থেরাপি’ শিখব।
মেদিনীপুরে ‘বিকাশ’ নামে এক প্রতিবন্ধী সংস্থার কর্মকর্তা অলোক ঘোষের কথায়, “ছেলেমেয়ে প্রতিবন্ধী হলে বাবা-মায়ের কষ্টের শেষ থাকে না। অনেকেরই ‘স্পিচ থেরাপি’ সম্পর্কে কোনও ধারণা নেই। এমন শিবিরের ফলে তাঁদের সচেতন করা যাবে।”



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.