সোজা পথে কুড়ি কিলোমিটার। তবে মাঝে পাহাড় থেকে নেমে আসা চেল নদী বইছে। সেতু না থাকায় সোজা পথে যাতায়াত সম্ভব নয়। ঘুরপথে জঙ্গলের মধ্যে দিয়ে প্রায় ৪০ কিলোমিটার পেরিয়ে মালবাজার এবং ক্রান্তির মধ্যে যোগাযোগ করতে হয় বাসিন্দাদের। চেল নদীতে সেতুর দাবি স্থানীয় বাসিন্দাদের দীর্ঘ দিনের হলেও, তা উপেক্ষিত বলে বাসিন্দারা জানান।
মহকুমা শাসক নারায়ণ বিশ্বাস বলেন, “সেতু তৈরি নিয়ে স্মারকলিপি পেয়েছি। সেতু তৈরির যৌক্তিকতাও রয়েছে। বিষয়টি প্রশাসনিক আলোচনা স্তরে রয়েছে।”
যদিও, চলতি বছরের শুরুতে উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন মন্ত্রী গৌতম দেবের চেল নদী পরিদর্শনের পরে এলাকার বাসিন্দাদের মধ্যে আশার সঞ্চার হয়েছে। সেতুর নিয়ে উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন দফতর থেকে পৃথক ভাবে প্রকল্প গ্রহণ করা হতে পারে বলেও একটি সূত্রে জানা গিয়েছে।
মালবাজার ব্লকের দক্ষিণে অবস্থিত ক্রান্তি এলাকায় রয়েছে চারটি কৃষি অধ্যুষিত বর্ধিষ্ণু গ্রাম পঞ্চায়েত। ক্রান্তি, রাজাডাঙা, চাপাডাঙা ও চেংমারিতে বাসিন্দার সংখ্যা প্রায় ৬০ হাজার। মালবাজারে যোগাযোগ করার জন্য সেতু না থাকায় প্রতিদিনই সমস্যায় পড়তে হয় এই এলাকার বাসিন্দাদের। বিশেষত গ্রামে কেউ অসুস্থ হয়ে পড়লে, ঘুরপথে তাঁকে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার মতো দুর্ভোগ প্রতিদিনই ঘটে চলছে বলে স্থানীয় বাসিন্দারা জানিয়েছেন। তেমনই ডুয়ার্সের কৃষি বলয় বলে পরিচিত কৃষকদের উৎপাদিত ফসল হাটে নিয়ে যেতে সমস্যায় পড়তে হয়। ক্রান্তি থেকে ঘুরপথে মালবাজার যাওয়ার দুটি পথ রয়েছে, একটি লাটাগুড়ি দিয়ে অন্যটি ওদলাবাড়ি হয়ে। দুটি পথেই অন্তত ৬ কিলোমিটারের বেশি জঙ্গল রয়েছে। গরুমারা এবং বৈকুন্ঠপুরের কাঠামবাড়ির জঙ্গল পার হয়ে সন্ধের পরে এ পথে যাতায়াতে মানুষ নিরাপত্তাহীনতায় ভোগেন। মালবাজারের সঙ্গে ক্রান্তি এলাকাকে পৃথক করা পাহাড়ি চেল নদীতে শীতের মরসুমে জল কমে গেলে শুকনো নদী খাত দিয়ে সাইকেল, বাইক ছোট গাড়ি পার হয়ে যেতে পারে। এই সুবিধে অন্য সময়ে থাকে না। ক্রান্তির বাসিন্দা পেশায় শ্রমিক মহম্মদ দিলদার অথবা ক্রান্তি দেবীঝোড়া উচ্চ বিদ্যালয়ের করণিক শুভঙ্কর বিশ্বাস বলেন “সেতু হলে যাতায়াতে সুবিধে হবে। যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নতি হলে কর্মসংস্থানের সুযোগও বাড়বে।” একই মত সেতুর দাবিতে আন্দোলন করা সংগঠনেরও। সিনিয়র সিটিজেন ফোরামের মুখপাত্র শান্তিরঞ্জন ভট্টাচার্য বলেন, “কয়েক দশক ধরে মানুষ এই সেতুর দাবি করছেন। সেতু নির্মিত হলে মালবাজার শহরের ব্যবসা বহু গুণ বেড়ে যাবে।” মালবাজারে মার্চেন্টস ওয়েলফেয়ার অ্যাসোসিয়েশন যুগ্ম সম্পাদক মোহিত শিকদারের কথায়, “দীর্ঘদিন ধরে সেতুর দাবি থাকলেও, কবে তা নির্মিত হবে জানি না। সেতু হলে মালবাজার মহকুমা ব্যবসায় আরএ সমৃদ্ধ হবে।” |