গোয়েন্দাদের দাবি, এখন পশ্চিমবঙ্গে মাওবাদীদের যাবতীয় সাংগঠনিক কাজকর্মের সমন্বয় সাধনের দায়িত্বে তিনি। পুলিশের হাত এড়াতে তিনি নাকি এখন নিজের বাড়িতেও থাকছেন না।
বছরখানেক আগে জেল থেকে বেরোনো সেই চণ্ডী সরকার কিন্তু রবিবার টেলিফোনে আনন্দবাজারের কাছে দাবি করলেন, বর্তমানে তিনি পার্টির কোনও রকম কার্যকলাপের সঙ্গে যুক্ত নন। এবং তিনি কোথাও পালিয়ে যাননি, বহাল তবিয়তে কৃষ্ণনগরে নিজের বাড়িতেই আছেন। প্রসঙ্গত, মাওবাদীদের সিটি কমিটির সদস্য জয়িতা দাসকে শুক্রবার রাতে গ্রেফতার করার পর কলকাতা পুলিশের স্পেশ্যাল টাস্ক ফোর্স (এসটিএফ) জানিয়েছিল, চণ্ডী সরকার বর্তমানে এই রাজ্যে মাওবাদীদের সাংগঠনিক কাজকর্মের গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্বে রয়েছেন।
৬৬ বছরের চণ্ডীবাবু এ দিন বলেন, “আমি পালিয়ে থাকতে যাব কেন? তবে এটা ঠিক, চাষের কাজকর্ম দেখাশোনার জন্য প্রায়শই আমাকে কৃষ্ণনগর থেকে আমার গ্রাম মহারাজপুরে যাতায়াত করতে হয়। তা ছাড়া, আমার বিরুদ্ধে এখনও যে-সমস্ত মামলা চলছে, সেগুলোর জন্য আদালতে হাজিরা দিতে আমাকে অন্য জেলাতেও যেতে হয়।” চণ্ডীবাবু আরও বলেন, “২০০৫-এর সেপ্টেম্বরে পুলিশের হাতে ধরা পড়ার আগে আমি মাওবাদীদের রাজ্য কমিটির সদস্য ছিলাম। অথচ পুলিশের কেউ কেউ মনে করেন, আমি নাকি পার্টির পলিটব্যুরো সদস্য ছিলাম। এটা ভুল। তা ছাড়া, গত বছর জেল থেকে বেরোনোর পর আমার সঙ্গে পার্টির কোনও সম্পর্ক নেই। আমি গণতান্ত্রিক অধিকার রক্ষা সমিতি (এপিডিআর) এবং বন্দিমুক্তি কমিটির বিভিন্ন কাজকর্মের সঙ্গে যুক্ত। আর এটা তো সবাই জানে।”
প্রতিবাদ-বিক্ষোভ বন্ধ করার জন্যই তাঁর বিরুদ্ধে এই ধরনের অপপ্রচার চালানো হচ্ছে বলে অভিযোগ করেন চণ্ডীবাবু। তাঁর মতে, এর পর কী পদক্ষেপ করা হবে, সেটাও এই সমস্ত ‘মিথ্যা’ প্রচার থেকে বোঝা যাচ্ছে। তিনি বলেন, “গত মাসে আমার মেয়ের বিয়েতে আত্মীয়স্বজন ও কয়েক জন বন্ধুবান্ধব এসেছিলেন। অথচ পুলিশ দাবি করছে, সেখানে নাকি মাওবাদীরা এসেছিল!”
এপিডিআর-এর কর্মী তাপস চক্রবর্তী বলেন, “চণ্ডী সরকার আমাদের সংগঠনের বিভিন্ন কাজকর্মের সঙ্গে যুক্ত। প্রতিবাদ-মিছিলে তিনি অংশ নেন। কিন্তু মাওবাদী কার্যকলাপের সঙ্গে চণ্ডী সরকার জড়িত বলে এসটিএফ দাবি করলে তাদের জানানো উচিত, তিনি ঠিক কী ধরনের মাওবাদী কার্যকলাপ করছেন।”
এসটিএফ কিন্তু দাবি করছে, চণ্ডী সরকার যে বর্তমানে মাওবাদীদের সাংগঠনিক কাজকর্মে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নিচ্ছেন, তার ইঙ্গিত মিলেছে জয়িতার কাছ থেকে উদ্ধার হওয়া একটি চিঠি থেকেই। এক তদন্তকারী অফিসার বলেন, “এক মাওবাদী নেতা সংগঠনের অন্য এক নেতাকে ওই চিঠিটি লিখেছেন। চণ্ডী সরকার যে এই রাজ্যে এখন পার্টির গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্বে রয়েছেন, সেটা ওই চিঠি থেকেই বোঝা যাচ্ছে। তা ছাড়া, আরও কিছু তথ্য আমাদের হাতে এসেছে। কিছু দিন আগে চণ্ডী সরকারের বাড়িতে কয়েক জন মাওবাদী নেতা দেখাও করতে গিয়েছিল। জয়িতাও নিয়মিত তাঁর বাড়িতে যেত।”
তবে এসটিএফের হেফাজতে জয়িতা কার্যত মুখে কুলুপ এঁটেছেন বলে গোয়েন্দারা জানাচ্ছেন। এসটিএফ সূত্রের খবর, এক অফিসার যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের ওই প্রাক্তন ছাত্রীকে বারবার প্রশ্ন করার পর এক সময়ে জয়িতা বলেন, ‘আপনি আপনার কাজ করে যান। আমার কাজ হল হল উত্তর না-দেওয়া।’
কিন্তু জয়িতার মতো চণ্ডী সরকারকেও পুলিশ গ্রেফতার করছে না কেন? এসটিএফের এক কর্তা বলেন, “চণ্ডী সরকারের বিরুদ্ধে আমরা কিছু তথ্য ও সূত্র পেয়েছি। কিন্তু তাঁকে গ্রেফতার করার জন্য আরও কিছু প্রমাণ হাতে আসা প্রয়োজন। আমরা সে সব জোগাড় করারই চেষ্টা করছি।” |