বারাসতের কামদুনিতে কলেজছাত্রীকে গণধর্ষণ ও খুনের পরে তাঁর পরিবার মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের কাছে গিয়েছিল। আবার মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করতে চাইছেন ওই পরিবারের লোকজন। ঘটনার সিবিআই তদন্ত এবং অন্যতম অভিযুক্ত আনসার আলি ও অন্যদের কঠোরতম সাজার দাবিতেই তাঁরা ফের মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করতে চান বলে ওই ছাত্রীর বাড়ির লোকেরা জানিয়েছেন।
দ্বিতীয় বর্ষের ওই কলেজছাত্রীকে যেখানে ধর্ষণ ও খুন করা হয়েছিল, সেই জমির কেয়ারটেকার ছিল আনসার। তার চরম শাস্তির দাবি নিয়ে মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে সাক্ষাতের ব্যাপারে রবিবার মধ্যমগ্রামে উত্তর ২৪ পরগনা জেলা তৃণমূল কার্যালয়ে রাজ্যের খাদ্যমন্ত্রী তথা শাসক দলের জেলা পর্যবেক্ষক জ্যোতিপ্রিয় মল্লিকের সঙ্গে কথা বলেন নিহতের বাড়ির লোকজন। ওই ছাত্রীর মা ও দুই ভাই এ দিন মন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করেন। |
খাদ্যমন্ত্রী জ্যোতিপ্রিয় মল্লিকের সঙ্গে দেখা করলেন কামদুনিতে নিহত
কলেজছাত্রীর পরিজনেরা। রবিবার। —নিজস্ব চিত্র |
কামদুনি কাণ্ডের তদন্ত করছে সিআইডি। তদন্তকারীরা আদালতে জানান, ঘটনার সময় আনসার-সহ বেশ কয়েক জন উপস্থিত থাকলেও সইফুল নামে এক দুষ্কৃতীই ওই ছাত্রীকে ধর্ষণ করেছিল। কিন্তু নিহতের বাড়ির লোকজন এবং গ্রামের অন্য অনেক বাসিন্দাই তা মানতে নারাজ। তাঁদের বক্তব্য, এ ভাবে আনসারকে আড়াল করার চেষ্টা হচ্ছে। তাঁদের মতে, গোটা ঘটনার মূলে আছে আনসারই।
এ দিন মন্ত্রীর সঙ্গে সাক্ষাতের পরে নিহতের দাদা বলেন, “সিআইডি তদন্তে আমাদের ভরসা নেই। মূল অপরাধী আনসারকে আড়াল করা হয়েছে। আমরা চাই, ঘটনার তদন্তভার সিবিআইয়ের হাতে তুলে দেওয়া হোক। সেই সঙ্গে পলিগ্রাফ পরীক্ষা করে আনসারকে ফাঁসি দিতে হবে। এই দাবিই মুখ্যমন্ত্রীকে জানাতে চাই।”
মন্ত্রী জ্যোতিপ্রিয়বাবু জানান, কামদুনির ঘটনা নিয়ে রাজনীতি চলছে বলে নিহতের দাদা এ দিন তাঁর কাছে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন।” মন্ত্রী বলেন, “কামদুনিতে নিহত ছাত্রীর বাড়ির লোকজন তাঁদের কিছু সমস্যার কথা মুখ্যমন্ত্রীকে জানাতে চান। মুখ্যমন্ত্রীকে সে-কথা জানানো হবে। মৃতার কাকা আমাকে বলেছেন, অভিযুক্তদের সঙ্গীরা তাঁকে হুমকি দিচ্ছে। তাঁর নিরাপত্তার ব্যবস্থাও করা হবে।”
নিহতের দাদা অবশ্য বলেন, “রাজনীতি চলছে বলে আমরা মন্ত্রীর কাছে কোনও ধরনের ক্ষোভ জানাইনি। এ-সব বিষয়ে কোনও আলোচনাও হয়নি। ঘটনাটি নিয়ে আমরা, গ্রামবাসীরা সকলে আন্দোলন করছি। তার সঙ্গে রাজনীতির যোগ নেই।” নিহতের দাদার বক্তব্য, ঘটনার পরে মুখ্যমন্ত্রী জানিয়েছিলেন, এক মাসের মধ্যে দোষীদের ফাঁসি হবে। সেই তদন্ত কোন পথে এগোচ্ছে, তা জানতে এবং এ ক্ষেত্রে আইনি পরামর্শের জন্যই মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে আর এক বার দেখা করতে চান তাঁরা। সেই বিষয়ে তাঁরা গ্রামে আলোচনা করছিলেন। তা জানতে পেরে খাদ্যমন্ত্রী তাঁদের ডেকে পাঠান। ছাত্রীটির দাদা বলেন, “মন্ত্রীকে জানিয়েছি, আমরা মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে আরও এক বার দেখা করতে চাই।”
গত ৭ জুন কামদুনিতে গণধর্ষণের পর খুন করা হয় ওই ছাত্রীকে। তাঁর দু’ভাইয়ের সঙ্গে ১২ জুন মহাকরণে দেখা করেন মুখ্যমন্ত্রী। ১৭ জুন মুখ্যমন্ত্রী কামদুনি যান। জ্যোতিপ্রিয় বলেন, “কামদুনিতে গিয়ে মুখ্যমন্ত্রী বারাসত থানা ভেঙে চার থানা গড়ার কথা জানান। সোমবার তিনটি নতুন থানার উদ্বোধন হবে। এতে অপরাধ নিয়ন্ত্রণ করতে সুবিধা হবে পুলিশের।”
|