রাজ্য সরকার প্রস্তাব নিয়েছিল ১২ বছর আগে। বেড়ে চলা নারী নির্যাতন-সহ নানা অপরাধ রুখতে অবশেষে আজ, সোমবার থেকে বারাসত থানা ভেঙে চালু হচ্ছে তিনটি নতুন থানা দত্তপুকুর, আমিনপুর এবং মধ্যমগ্রাম।
২০১১ সালের ১৪ ফেব্রুয়ারি দিদির সম্ভ্রম রুখতে গিয়ে মাধ্যমিক পরীক্ষার্থী রাজীব দাস খুন হওয়ার পর থেকে বারাসতে একের পর এক অপরাধ ঘটেই চলেছে। সেই তালিকায় সর্বশেষ সংযোজন কামদুনি-কাণ্ড। তার পরেই বারাসত থানা ভাগ
করার পুরনো প্রস্তাবটি রূপায়ণে তড়িঘড়ি উদ্যোগী হয় রাজ্য সরকার। সম্প্রতি কামদুনিতে দাঁড়িয়েই মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ১২ বছরেও বারাসত থানা ভাগ না হওয়ায় আগের বাম সরকারকে দুষে আশ্বাস দিয়েছিলেন, “অপরাধ সামলাতে বিশাল বারাসত থানাকে শীঘ্রই ভেঙে তিনটি নতুন থানা করা হবে।” |
পঞ্চায়েত ভোট মিটতেই সেই তোড়জোড় শুরু হয়ে যায়। বারাসত থানার অধীনে এত দিন দত্তপুকুর, শাসনের আমিনপুর এবং মধ্যমগ্রামে তদন্তকেন্দ্র ছিল। সেই পুরনো পরিকাঠামোতেই চালু হচ্ছে নতুন তিন থানা। থানাগুলি সামলাবেন আইসি পদমর্যাদার পুলিশ অফিসার। এর ফলে, অপরাধ সামলাতে দ্রুত ঘটনাস্থলে পৌঁছনোর পাশাপাশি বারাসত থানার চাপও কমবে বলে দাবি করেছেন পুলিশ সুপার সুগত সেন।
এত দিন বারাসত থানা এলাকার আয়তন ছিল ২৮৪ বর্গ কিলোমিটার। বিশাল এই এলাকায় পড়ছিল পাঁচটি বিধানসভা কেন্দ্র, দু’টি পুরসভা এবং ২০০টি গ্রাম। তা ছাড়া, উত্তর ২৪ পরগনা জেলা সদর হওয়ার সুবাদে বারাসত শহরে রয়েছে জেলাশাসক, পুলিশ সুপার এবং জেলা পরিষদ অফিস। রয়েছে বিশ্ববিদ্যালয়, জেলা হাসপাতাল, আদালত, স্টেডিয়াম থেকে শুরু করে সমস্ত সরকারি দফতর। সেই সব অফিসে ঘেরাও-বিক্ষোভ লেগেই রয়েছে। রয়েছে মন্ত্রী বা ভিআইপি-দের যাতায়াত, ধর্মীয় অনুষ্ঠান, ৩৪ ও ৩৫ নম্বর জাতীয় সড়কে দুর্ঘটনা।
এ সব সামলাতেই দিনের অনেকটা সময় চলে যায় বারাসত থানার পুলিশের। পাশাপাশি থাকে আদালতে অপরাধীদের নিয়ে যাওয়া-আসা ছাড়াও কাগজ-কলমের কাজও।
আর এত দায়িত্ব সামলে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে তাঁরা যে রীতিমতো হিমশিম খাচ্ছিলেন তা স্বীকার করেছেন বারাসত থানার অনেক পুলিশকর্মীই। চারটি ফাঁড়ি এবং তিনটি ক্যাম্প নিয়ে গড়া ওই থানায় পুলিশকর্মী রয়েছেন ১১৪ জন।
প্রতিদিন থানায় দেড়শোরও বেশি সাধারণ ডায়েরি হয়। গত ছ’মাসে এফআইআর হয়েছে প্রায় দেড় হাজার। পুলিশকর্মীরা মেনে নিয়েছেন, গাড়ি কম থাকা-সহ পরিকাঠামোগত নানা সমস্যায় এত দিন দূরবর্তী এলাকায় অনেক ক্ষেত্রেই সময়ে পৌঁছনো যাচ্ছিল না। নেওয়া যাচ্ছিল না অপরাধ রুখতে ঠিকমতো সতর্কতামূলক ব্যবস্থাও।
নতুন তিনটি থানা চালু হওয়ায় এলাকার আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির উন্নতি হবে বলে বারাসতের পুলিশকর্মীদের মতোই আশা প্রকাশ করেছেন সেখানকার স্থানীয় বাসিন্দারাও। |