ঋণের বকেয়া কিস্তি মেটাতে না-পারায় বছর তিনেক আগে তাঁদের বাড়িটাই বাজেয়াপ্ত করে নিয়েছিলেন ব্যাঙ্ক কর্তৃপক্ষ। তখন থেকে ভাড়ায় থাকতে শুরু করে সোনারপুর গ্রিন পার্কের সাউ পরিবার। কিছু দিন আগে তাদের গাড়িটাও ঋণের ফেরে ব্যাঙ্কের হাতে চলে যায়। এর পরেই মনমরা হয়ে গিয়েছিলেন গৃহকর্তা রাজেশ সাউ। রবিবার সকালে ভাড়া বাড়ি থেকেই রাজেশ (৪৮), তাঁর স্ত্রী সন্ধ্যা (৩৯), দুই মেয়ে গোর্কি (১৩) ও গ্রেসি (৮)-র দেহ উদ্ধার করল পুলিশ।
প্রাথমিক তদন্তের পরে পুলিশের অনুমান, শনিবার রাতে স্ত্রী ও দুই মেয়েকে খুন করে রাজেশ আত্মঘাতী হয়েছেন। পুলিশ জানায়, আদতে ভাগলপুরের বাসিন্দা রাজেশ সোনারপুরে একটি বাড়ি কিনেছিলেন। মোবাইল পরিষেবা সংস্থার কাছ থেকে দোকান নিয়ে ব্যবসা চালাচ্ছিলেন। কিন্তু ব্যবসায় অসফল হওয়ায় তাঁদের জীবনে অন্ধকার নেমে আসে। দক্ষিণ ২৪ পরগনার জেলা পুলিশের এক কর্তার কথায়, “কোনও সুইসাইড নোট মেলেনি। কিন্তু একটা সম্ভাবনা আছে যে দেনায় ডুবেই রাজেশবাবু আত্মহননের পথ বেছে নেন। তার আগে স্ত্রী-মেয়েদেরও শ্বাসরোধ করে নিজের হাতে শেষ করে যান।” পরিবারটির সবার মৃত্যুর পিছনে আর কোনও কারণ থাকতে পারে কি না, তা-ও পুলিশ খতিয়ে দেখছে।
তদন্তকারীদের মতে, শনিবার সন্ধ্যার ঘটনাক্রম যা ইঙ্গিত দিচ্ছে, পরিকল্পনা করেই সব কিছু ঘটানো হয়েছে। ওই দিন বিকেলে বাড়ির পরিচারিকার মাইনে মিটিয়ে দিয়ে রাজেশ তাঁকে জানিয়ে দিয়েছিলেন, আর আসতে হবে না। তখন গৃহকর্ত্রী সন্ধ্যাদেবী বাড়ি ছিলেন না। বউদির সঙ্গে দেখা হয়নি বলে, রবিবার সকালে ওই পরিচারিকা গ্রিন পার্কের বাড়িতে গিয়েছিলেন। ভিতর থেকে বন্ধ দরজা খুলছে না-দেখে তিনিই প্রতিবেশীদের সব কিছু জানান। পরে পুলিশের সাহায্যে ঘর খুলে দেখা যায়, একটি ঘরে মশারির মধ্যে রাজেশের বড় মেয়ে গোর্কির নিথর দেহ। পাশের ঘরে সন্ধ্যাদেবী ও আট বছরের গ্রেসির দেহ খাটে শোয়ানো, মুখে বালিশ চাপা। রান্নাঘর থেকে মেলে রাজেশের ঝুলন্ত দেহ। জেলার পুলিশ সুপার প্রবীণ ত্রিপাঠি বলেন, “দেহগুলি ময়না-তদন্তে পাঠানো হয়েছে। অস্বাভাবিক মৃত্যুর অভিযোগ দায়ের করে ঘটনার তদন্ত চলছে।”
পরিবারের আত্মীয়েরাও বলছেন, কয়েক দিন ধরেই ঘনিষ্ঠ মহলে রাজেশ আর্থিক দুরবস্থার কথা বলছিলেন। কী করে দুই মেয়ের স্কুলের খরচ জোগাবেন, তা নিয়েও দুশ্চিন্তা করছিলেন। পুলিশ জানতে পেরেছে, আত্মীয়েরা কেউ কেউ তাঁকে দরকারে দেনা মেটাতে সাহায্য করার আশ্বাসও দেন। তবু শেষরক্ষা হল না। বাড়ির পরিচারিকা এ দিন কাঁদতে কাঁদতে বলছিলেন, “জানি না, কী হয়েছে। তবে ওঁরা আমার টাকা বাকি রাখেননি। কেন যে এমন হল, তা মাথায় ঢুকছে না।” |