|
|
|
|
ইন্দিরা আবাস যোজনা |
টাকা মেলেনি, থমকে বাড়ি তৈরির কাজ |
আনন্দ মণ্ডল • তমলুক |
ইন্দিরা আবাস যোজনার টাকা পেয়ে মহা উৎসাহে বাড়ি তৈরির কাজে হাত লাগিয়েছিলেন নন্দীগ্রামের কেন্দেমারি এলাকার গোপীমোহনপুর গ্রামের চন্দনা জানা। প্রথম কিস্তির ২৪ হাজার টাকা পেয়ে ইট, বালি, সিমেন্ট কিনে গাঁথনির কাজ শুরু করে দিয়েছিলেন। টাকা শেষ হয়ে যাওয়ার পর শংসাপত্রও জমা দিয়েছিলেন সময়ে। কিন্তু তারপর ৬ মাস কেটে গেলেও দ্বিতীয় কিস্তির টাকা মেলেনি। বাড়ি তৈরির কাজ তাই আটকে মাঝপথে। বাধ্য হয়ে ছেলে-মেয়েকে নিয়ে প্রতিবেশী কাকার বাড়িতেই থাকতে হচ্ছে চন্দনাদেবীকে। অভাবের সংসারে ছাদের অভাবটাই সবচেয়ে বেশি বেঁধে তাঁকে।
এই গ্রামেরই জসিমুদ্দিন খান, সাহেবা বিবি, সন্ধ্যা শীটরা একই সময়ে বাড়ি তৈরির কাজ শুরু করেছিলেন। সকলেরই এক অবস্থা। পেশায় কাঠের মিস্ত্রি জসিমুদ্দিন বলেন, ‘‘প্রায় এক বছর আগে প্রথম কিস্তির টাকাটা পেয়েছিলাম। মাথার উপর পাকা ছাদ হবে ভেবে তখন খুব আনন্দ হয়েছিল। সুখস্বপ্ন দেখাটাই কাল হল। স্ত্রী, ছেলে-মেয়েদের নিয়ে পুরনো ঝুপড়ি ঘরে থাকতে আর মন চায় না। কিন্তু কিছুই করার নেই।”
দ্বিতীয় কিস্তির টাকা চেয়ে এঁরা সকলেই একাধিকবার পঞ্চায়েত অফিসে দরবার করেছেন। লাভ হয়নি। হবেই বা কী করে? ২০১২-১৩ সালের ইন্দিরা আবাস যোজনার দ্বিতীয় কিস্তির টাকা যে এখনও এসে পৌঁছয়নি জেলাতেই। পূর্ব মেদিনীপুরের অতিরিক্ত জেলাশাসক (উন্নয়ন) অজয় পাল মেনে নেন, ‘‘২০১২-১৩ আর্থিক বছরে ইন্দিরা আবাস যোজনার দ্বিতীয় কিস্তির টাকা এখনও পাওয়া যায়নি। ওই টাকা পাওয়া গেলে শীঘ্রই বিলি করা হবে।”
বস্তুত দরিদ্রদের মাথা গোঁজার ঠাঁই করে দিতে কেন্দ্রীয় প্রকল্প ইন্দিরা আবাস যোজনায় বরাবরই পিছিয়ে পূর্ব মেদিনীপুর। লক্ষ্যমাত্রা অনুযায়ী কাজ হয়নি। ফলে পরের আর্থিক বছরে অর্থ বরাদ্দের পরিমাণ কমেছে। জেলা পরিষদের প্রাক্তন সভাধিপতি সিপিএমের নিরঞ্জন সিহির অভিযোগ, “তৃণমূল পরিচালিত জেলা পরিষদ সময়ে হিসাব দিতে পারেনি। ফলে সময়ে অর্থ বরাদ্দ হয়নি।” জেলা পরিষদের বিদায়ী সহ-সভাধিপতি মামুদ হোসেনের অবশ্য বক্তব্য, ‘‘কেন্দ্রীয় সরকারের কাছ থেকে সময় মতো টাকা না পাওয়ার ফলেই উপভোক্তাদের টাকা দিতে দেরি হয়।” তবে নানা কারণে সময়মতো শংসাপত্র জমা দেওয়া হয় না বলে মেনে নিয়েছেন তিনি। তাঁর দাবি, “তা সত্বেও ইন্দিরা আবাস যোজনায় আমাদের জেলায় কাজের গতি ভালই।”
২০১০-১১ আর্থিক বছরে ইন্দিরা আবাস যোজনায় জেলায় বাড়ি তৈরির লক্ষ্যমাত্রা ছিল ১৫ হাজার ৭৪৩টি। ওই আর্থিক বছরে ১০ হাজার ২৬টি বাড়ি তৈরির কাজ সম্পূর্ণ হয়েছিল। আগের আর্থিক বছরের মিলিয়ে ১০ হাজার ৫৬০টি বাড়ি তৈরির কাজ অসম্পূর্ণ ছিল। ওই আর্থিক বছরে এই প্রকল্পে মোট বরাদ্দ অর্থের পরিমাণ ছিল ৭৩ কোটি ৫ লক্ষ টাকা। এর মধ্যে খরচ হয়েছিল ৪৫ কোটি ১১ লক্ষ টাকা। অর্থাৎ প্রায় ৬২ শতাংশ টাকা খরচ হয়েছিল। আবার ২০১১-১২ আর্থিক বছরে জেলায় ইন্দিরা আবাস যোজনায় বাড়ি তৈরির লক্ষ্যামাত্রা ছিল ১৫ হাজার ৩৭৮টি। ওই আর্থিক বছরের মধ্যে সব মিলিয়ে মোট ১৩ হাজার ৮৪৭টি বাড়ি তৈরির কাজ সম্পূর্ণ হয়। আগের বছরের খরচ করতে না পারা টাকা-সহ বরাদ্দ অর্থের পরিমাণ ছিল ৯৩ কোটি ১৪ লক্ষ টাকা। এর মধ্যে ৬৭ শতাংশ অর্থ খরচ হয়। ওই আর্থিক বছরে প্রায় ৩০ কোটি ৮৩ লক্ষ টাকা রয়ে যায়। ২০১২-১৩ আর্থিক বছরে জেলায় ইন্দিরা আবাস যোজনায় ১৭ হাজার ৩৯টি বাড়ি তৈরির লক্ষ্যমাত্রা নেওয়া হয়েছিল। এই সব পরিবারকে বাড়ি তৈরির জন্য প্রথম কিস্তির ২৪ হাজার টাকা করে দেওয়া হলেও দ্বিতীয় কিস্তির টাকা এখনও পাওয়া যায়নি বলে অভিযোগ। ফলে ওই সব পরিবারের বাড়ি তৈরির কাজ এখনও সম্পূর্ণ হয়নি। এ দিকে, চলতি আর্থিক বছরে ইন্দিরা আবাস যোজনায় বরাদ্দ ৪৮ হাজার থেকে বাড়িয়ে হয়েছে ৭৫ হাজার টাকা। তার প্রথম কিস্তির টাকা বরাদ্দও হয়ে গিয়েছে।
কিন্তু যাঁদের বাড়ি মাঝপথে আটকে রয়েছে, তাঁরা কী করবেন?
প্রশাসন শীঘ্রই টাকা এসে যাবে বলে আশ্বাস দিচ্ছে। আশ্বাসে ভরসা রাখতেই চান জেলাবাসী। |
পুরনো খবর: চলতি বছরের বরাদ্দ পেতে খরচে জোর |
|
|
|
|
|