দেশের সেরা সহকারী রেফারির স্বীকৃতি শ্রীরামপুরের বিপ্লবকে
বশেষে ফুটবল তাঁকে এনে দিল সেরার স্বীকৃতি।
সহকারী রেফারি (লাইন্সম্যান) হিসেবে মেসি-ম্যাচ এবং বায়ার্ন মিউনিখ ম্যাচ খেলিয়ে বাংলার ফুটবল মহলের নজর কেড়েছিলেন শ্রীরামপুরের বিপ্লব পোদ্দার। এ বার অল ইন্ডিয়া ফুটবল ফেডারেশন (এআইএফএফ)-এর বিচারে দেশের বর্ষসেরা সহকারী রেফারির (লাইন্সম্যান) স্বীকৃতি পেলেন তিনি। শুক্রবার এআইএফএফ-এর তরফে ওই ঘোষণা করা হয়। দেশের সেরা রেফারি হয়েছেন উত্তরাখণ্ডের প্রতাপ সিংহ।
ফুটবলে দেশের সর্বোচ্চ নিয়ামক সংস্থার স্বীকৃতিতে হুগলির শ্রীরামপুরের মাসির বাড়ি এলাকার বাসিন্দা বিপ্লবের প্রতিক্রিয়া, “এটা আমার অনেক পরিশ্রমের স্বীকৃতি। খুব আনন্দ হচ্ছে। তবে, দায়িত্বটাও আরও বেড়ে গেল।” বিপ্লবের এই সাফল্যে খুশি বাংলার রেফারিমহলও। দেশের রেফারি সংস্থার প্রধান গৌতম কর এআইএফএফের ওয়েবসাইটে জানিয়েছেন, প্রতাপ এবং বিপ্লব দু’জনেই প্রচণ্ড পরিশ্রম করেছে। ওঁরা এই স্বীকৃতির যোগ্য। আর রেফারি সংস্থার ভাইস-চেয়ারম্যান, প্রাক্তন রেফারি প্রদীপ নাগের কথায়, “বিপ্লবকে ধন্যবাদ। প্রচুর লড়াই করে বিপ্লব আজ এই জায়গায় পৌঁছলেন। অন্যদের কাছে ও অনুপ্রেরণা হতে পারে। বাংলায় আর কেউ এমন সম্মান পেয়েছে বলে আমার স্মরণে নেই।” শুক্রবার প্রদীপবাবুই বিপ্লবকে ফোন করে তাঁর স্বীকৃতির খবরটা দেন।

বিপ্লব পোদ্দার। সম্মানিত।—নিজস্ব চিত্র।
ছোটবেলায় আর পাঁচটা ছেলের মতোই স্কুলে যাওয়ার পাশাপাশি ব্যাট-বল বা ফুটবল ছিল বিপ্লবের নিত্যসঙ্গী। মাসির বাড়ির এক চিলতে মাঠে দৌড়ঝাঁপ ছিল তাঁর রোজনামচা। মাহেশ উচ্চ বিদ্যালয়ে পড়ার সময় থেকে সংসারের হাল ধরতে মাছ বিক্রি শুরু করেন। খুব ভোরে ঘুম থেকে উঠে আড়ত থেকে মাছ কিনে, টিনবাজারে বিক্রি করে বাড়ি ফিরে বইখাতা নিয়ে স্কুলে যেতেন আজকের সেরা লাইন্সম্যান। ক্লাস টিমে তিনি ছিলেন গোলকিপার। উচ্চ মাধ্যমিক পড়ার সময় থেকে ঝোঁক চাপে রেফারি হওয়ার। কষ্টের সংসারে চোয়াল চেপে অনুশীলন করতে থাকেন সেই লক্ষ্যে। ইংরেজিতে দক্ষতা কম ছিল বলে ইংরেজি সংবাদপত্র পড়ে নিজেকে ঘষেমেজে নিয়েছেন। এ ভাবেই ২০১১ সালে ছিপছিপে চেহারার মালিক বিপ্লব পেয়ে যান ফিফার সহকারি রেফারির স্বীকৃতি।
এর পর ময়দানের নানা ম্যাচ খেলানো চলছিল নিয়ম মতোই। বাঁশি হাতে মাঠে নেমে ভাইচুং, ব্যারেটো থেকে ওডাফা, চিডি, র্যান্টি কাকে সামলাননি বিপ্লব! কিন্তু সেই সময়ে বাংলার ফুটবলমহল ছাড়া তাঁকে খুব বেশি কেউ চিনতেন না। পাদপ্রদীপের আলো তাঁকে এনে দিল ২০১১ সালের ২ সেপ্টেম্বর যুবভারতী ক্রীড়াঙ্গনে মেসি-ম্যাচ। বহু সংবাদমাধ্যমে তাঁর ছবি বেরিয়েছে। এর পরে ২০১২ সালের ১০ জানুয়ারি দিল্লির নেহরু স্টেডিয়ামে বায়ার্ন মিউনিখ ম্যাচেও (এই ম্যাচের পরেই অবসর নেন ভাইচুং ভুটিয়া) বিপ্লবকে দেখা গিয়েছিল সহকারী রেফারির ভূমিকায়।
এত পথ পেরিয়ে এসেও শ্রীরামপুর স্টেডিয়াম বা স্থানীয় স্কুলের মাঠ ঘাম ঝরাতে ভুল হয় না তাঁর। সাফল্যেও তেমন বদলায়নি তাঁর রোজনামচা। দুপুরে ট্রেনে চড়ে চলে আসেন কলকাতার রেফারি অ্যাসোসিয়েশনের তাঁবুতে। সন্ধ্যায় ফেরেন। মেসি-ম্যাচ খেলানোর পরের দিনও টিনবাজারে মাছ বিক্রি করতে দেখা গিয়েছে তাঁকে। ইদানিং অবশ্য মাছ বিক্রি বন্ধ রেখেছেন। টালির চালের ভাঙাচোরা ঘরে বৃদ্ধা মা কল্যাণীদেবীকে নিয়ে থাকেন বিপ্লব। আর বারেবারেই হাতে তুলে নেন ফিফার সদর দফতর থেকে পাঠানো শংসাপত্র, মেসির পাশে দাঁড়ানো ছবি।
এই মূহূর্তে বাংলার সবেধন নীলমণি একমাত্র ফিফার সহকারী রেফারি বিপ্লবই। এত সাফল্যেও মাঝেমধ্যেও তাঁর কথায় ফুটে ওঠে অভাবের যন্ত্রণা, “এক জন রেফারিকে ৯০ মিনিট টানা দৌড়তে হয়। নিজেকে ফিট রাখতে যথাসাধ্য চেষ্টা করি। অনুশীলন আর ম্যাচ খেলানোর চাপে বেশ কিছুদিন মাছ বিক্রি করতে যেতে পারছি না। এখন প্রায় বেকারই।”
মেসি-ম্যাচ খেলানোর পরে রাজ্য সরকার বিপ্লবকে চাকরির প্রতিশ্রতি দিয়েছিল। কিন্তু সেই চাকরি এখনও মেলেনি। রাজ্যের ক্রীড়ামন্ত্রী মদন মিত্র বলেন, “এআইএফএফ ওঁকে এমন সম্মান দিয়েছে শুনে আমি অত্যন্ত আনন্দিত। বিপ্লব আমাদের গর্বিত করেছেন। পরশু ওঁকে মহাকরণে ডেকেছি। ওর অসুবিধাগুলো আমরা নিশ্চয়ই দেখব। রাজ্য সরকার ওঁর পাশে আছে।”




First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.