বাসস্ট্যান্ড থেকে জোর করে তুলে রবীন্দ্রভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ে নিয়ে গিয়ে এক ছাত্রীকে মারধর ও শ্লীলতাহানির অভিযোগে শনিবার রাতে তিন ছাত্রকে গ্রেফতার করা হয়েছে। পুলিশ জানায়, টালা সেতুর কাছে ধৃত ওই তিন জনের নাম শ্রীজীব শীল, কানু মণ্ডল ও শঙ্খ তালুকদার। আদালত তাঁদের পুলিশি হাজতে পাঠিয়েছে। কিন্তু মূল অভিযুক্ত, বিশ্ববিদ্যালয়ের তৃণমূল ছাত্র পরিষদের নেতা বিশ্বজিৎ দে ওরফে বাপ্পা এবং তাঁর সঙ্গী সিমিওন সোরেন, তন্ময় আদিত্য দাস ও মৌলি বন্দ্যোপাধ্যায় ধরা না-পড়ায় ছাত্রীটি আতঙ্কিত।
আবার তাঁর উপরে হামলা হতে পারে আশঙ্কা করে ষষ্ঠ পত্রের পরীক্ষা না-দিয়েই মেস ছেড়েছিলেন নিগৃহীত ছাত্রী। ঘটনার ছ’দিনের মাথায় তিন জন ধরা পড়লেও মূল অভিযুক্ত বাপ্পা গারদের বাইরে থাকায় ছাত্রীটি এখনও নিরাপত্তার অভাব বোধ করছেন। আজ, সোমবার কী ভাবে পরীক্ষা দেবেন, বুঝতে পারছেন না তিনি। ছাত্রীটি রবিবার বলেন, “বিশ্ববিদ্যালয়ে ঢুকলেই বাপ্পার দলবল আমার উপরে আবার হামলা করবে। পুলিশ থাকলেও কিছু করতে পারবে না।” তাঁর অভিযোগ, পুলিশ অভিযুক্তদের বাঁচাতে চাইছে। তাই মূল অভিযুক্তেরা অধরা। ডিসি (নর্থ) গৌরব শর্মার আশ্বাস, “পিকেটিং রয়েছে। মেয়েটি নিশ্চিন্তে পরীক্ষা দিতে পারেন।”
ধৃত তিন ছাত্রকে এ দিন শিয়ালদহ আদালতে তোলা হলে বিচারক ৮ অগস্ট পর্যন্ত তাঁদের পুলিশি হাজতে রাখার নির্দেশ দেন। ৩১ জুলাই আদালতে দেওয়া ওই ছাত্রীর গোপন জবানবন্দির ভিত্তিতে অভিযুক্তদের জামিন খারিজ করে দেয় আদালত। সরকারি আইনজীবী অসীম কুমার বলেন, “মেয়েটির গোপন জবানবন্দি থেকেই পরিষ্কার, তাঁর উপরে অকথ্য অত্যাচার হয়েছে। তাই অভিযুক্তদের জামিন দেওয়া ঠিক হবে না।” আদালতে ছিলেন ছাত্রীটিও। তিনি বলেন, “পুলিশ মূল অভিযুক্তদেরই গ্রেফতার করেনি। তার উপরে এই তিন জনও যদি জামিন পেয়ে যায়, তা হলে তো আমি আর কোনও দিনই বিশ্ববিদ্যালয়ে ঢুকতে পারব না। ওদের যাতে জামিন না-হয়, সেই আর্জি জানাতেই আদালতে গিয়েছিলাম।”
২৯ জুলাই বিশ্বজিৎ এবং তাঁর ছয় সঙ্গী এম এ দ্বিতীয় বর্ষের ওই ছাত্রীর উপরে কয়েক ঘণ্টা ধরে অত্যাচার চালান বলে অভিযোগ। নিগৃহীতার অভিযোগ, মুখ খুললে বিপদ হবে বলে তাঁকে হুমকি দেওয়া হয়েছিল। এ ব্যাপারে ইতিমধ্যে রাজ্য মানবাধিকার কমিশনেও অভিযোগ জানিয়েছেন ওই ছাত্রী। ডেপুটি কমাশনার পদমর্যাদার কোনও অফিসারকে দিয়ে তদন্ত করানোর জন্য পুলিশ কমিশনারকে নির্দেশ দিয়েছেন ওই কমিশনের চেয়ারম্যান, অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি অশোককুমার গঙ্গোপাধ্যায়। সিপি-কে দু’সপ্তাহের মধ্যে রিপোর্ট পেশ করতে হবে বলে জানিয়ে দেওয়া হয়েছে।
|