ব্যস্ততা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে তাল মিলিয়ে তৈরি হচ্ছে নিত্য নতুন চাহিদা। কমর্সূত্রে এক জায়গা থেকে আরেক জায়গায় গিয়ে থাকছেন অনেকেই। বেশিরভাগই ছোট পরিবার, ব্যস্ত স্বামী-স্ত্রী, কিন্তু সবচেয়ে মুশকিল বাড়ির খুদেটাকে নিয়ে। কে দেখবে, কার কাছে রেখে নিশ্চিন্তে কাজে যাবেন মায়েরা, তাই বাড়ছে ক্রেশের চাহিদা।
সুজয়-রীমা, রেশমা-বিজয় কিংবা সুলেখা-অলোকেশ, এরা প্রত্যেকেই কলকাতা, কাটোয়া বা নৈহাটি থেকে কমর্সূত্রে এসেছেন দুর্গাপুরে। কাজ করেন বেসরকারি সংস্থায়। প্রত্যেকেরই ছেলেমেয়ের বয়স ২-৩ এর মধ্যে। স্বামী-স্ত্রী ছাড়া বাড়িতে আর কেউ নেই যিনি খুদেটাকে সামলে রাখেন। তাই সকাল হলেই শুধু এরা নন দুর্গাপুরের আরও কয়েক’শো দম্পতি ভাবতে বসেন। তাঁদের আক্ষেপ, শহরে একটা ক্রেশ থাকলে অনেকটাই নিশ্চিন্ত হওয়া যেত। কিন্তু প্রয়োজন থাকলেও সরকারি বা বেসরকারি কোনও স্তরেই কোনও ব্যবস্থা গড়ে ওঠেনি।
দুর্গাপুর ঘুরলে দেখা যায়, অধিকাংশই ছোট পরিবার, সদস্য তিন থেকে চার। তাছাড়া ৭৫ শতাংশ বাড়ির গৃহিণী কর্মরত। আর এই মূল্যবৃদ্ধির বাজারে দু’জনের রোজগেরে না হয়ে উপায়ও নেই। ফলে একদিকে ঘর-সংসার অন্যদিকে অফিস সামলানোর মাঝে খুদেটাকে কারও জিম্মায় দিয়ে স্বচ্ছন্দে মায়ের অফিসে যাওয়ার চটজলদি সমাধান একটাই, ক্রেশ। কারণ অধিকাংশ মায়েরাই বাড়ির ঠিকে বা সবসময়ের কাজের লোকটির উপর পুরোপুরি ভরসা করতে পারেন না। তাঁদের হাজারো বায়ানাক্কা, আসা- না আসার মধ্যে সমস্যার স্থায়ী সমাধান মেলে না। যেমন, বিদিশা লায়েক কাজ করেন একটি বেসরকারি সংস্থায়, থাকেন সিটিসেন্টারে। তাঁর স্বামীও কাজ করেন বেসসকারি ব্যাঙ্কে। দু’জনেরই ছুটি কম, কাজের চাপও বেশি। ফলে কাজের লোকর জিম্মায় আড়াই বছরের ছেলেকে রেখে যাওয়া ছাড়া উপায় নেই। তাঁরা বলেন, “কাজের লোকের কামাই লেগেই আছে। কি করব কিছুই বুঝতে পারছি না।” ক্রেশের খোঁজ নিয়েছিলেন জানতে চাওয়া হলে বলেন, “যতটা খোঁজ নিয়েছি কোনও ক্রেশ নেই। কেউ ক্রেশ খুললে আমাদের মতো পরিবারের সত্যিই খুব উপকার হয়।” আরেক দম্পতি সুনীল এবং অনীতা রায়। দু’জনেই স্কুলে পড়ান। বাড়িতে বৃদ্ধ বাবা-মা আর তিন বছরের ছেলে। মোটা টাকা দিয়ে আয়া রেখেছেন ছেলেকে দেখাশোনার জন্য। বলেন, “দুর্গাপুরে এত বড় বড় শপিং মল, এত শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। বাইরের এত লোক চাকরি করেন। তবু একটাই ক্রেশ তৈরি হয়নি। এখন তো প্রত্যেক বাড়ির মহিলারাই চাকরি করেন। শিশুদের সুস্থ, নিরাপদ আশ্রয় দিতে পারলে ভাল হত।” ক্রেশের আরও সুবিধে নিয়ে তাঁরা জানান, ক্রেশে একসঙ্গে অনেক শিশু থাকায় একে অপরের সঙ্গে মিশতে পারে। খেলাধুলোর সুযোগ পায়।
ক্রেশ না থাকলেও শহরে বহু প্লে স্কুল রয়েছে। কিন্তু সবই খোলা থাকে ৮টা থেকে ১০টা পর্যন্ত। ফলে কর্মরত বাবা-মায়ের বেশিরভাগেরই কাজে লাগে না। সমস্যা আশু সমাধানের কোনও উদ্যোগও নেই সরকারি তরফে। মহকুমা সমাজ কল্যাণ দফতরের দায়িত্বপ্রাপ্ত আধিকারিক মন্দিরা ঘোষাল জানান, কর্মরত মহিলাদের কথা ভেবে শহরে সরকারি মহিলা হস্টেল গড়া হয়েছে। অনেকে থাকেনও সেখানে। কিন্তু শিশুদের রাখার ক্রেশ নিয়ে এখনও সেভাবে ভাবনাচিন্তা করা হয়নি। মন্দিরাদেবী বলেন, “বর্তমান পরিস্থিতিতে ক্রেশ সত্যিই প্রয়োজনীয়। তবে সরকারি বৈঠকে বিষয়টি নিয়ে এখনও আলোচনা হয়নি। আগামীতে নিশ্চয় ভাবনাচিন্তা করা হবে।” |