বাইকে এসে ছোঁ টাকার ব্যাগ, নেই কিনারা
ব্যাঙ্ক থেকে টাকা তুলে সবে রাস্তায় পা দিয়েছেন দুলাল রায় ও ষষ্ঠীচরণ মণ্ডল। সপ্তাহের প্রথম দিনের দুপুরে রাস্তা রীতিমতো জমজমাট। আশপাশ দিয়ে ছুটে যাচ্ছে বাস, গাড়ি, মোটরবাইক। আচমকাই মোটরবাইকে চড়ে আসা দুই আরোহী টান মারল তাঁদের হাতে থাকা টাকার ব্যাগে। ভিড়ের মধ্যেই চোখের পলকে ব্যাগ নিয়ে উধাও বাইক-আরোহীরা। ঘটনা গত ৮ জুলাইয়ের। ঘটনাস্থল আসানসোল আদালতের কাছে ঘরিমোড় চত্বর।
ওই ঘটনার ঠিক এক মাস আগের কথা। অবসরপ্রাপ্ত আয়কর আধিকারিক নির্মল সাহা রবীন্দ্রভবনের কাছে একটি রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্ক থেকে টাকা তুলে বাড়ি ফিরছিলেন ৭ জুন। বিএনআর মোড়ের কাছে তাঁর হাত থেকেও একই কায়দায় লক্ষাধিক টাকার ব্যাগ ছিনিয়ে পালায় দুই মোটরবাইক আরোহী। গলা থেকে আওয়াজ বেরোনোর আগেই ধরাছোঁয়ার বাইরে দুষ্কৃতীরা।
নির্মলবাবুর টাকা ছিনতাইয়ের ঘটনার আগের দিন মেয়ের বিয়ের জন্য বার্নপুর টাউনশিপ এলাকার একটি ব্যাঙ্ক থেকে টাকা তুলে ফিরছিলেন ইস্কো কর্মী মঙ্গলী বাস্কে। পথে পিছন থেকে আসা দুই মোটরবাইক আরোহী ছোঁ মেরে নিয়ে যায় তাঁর টাকাও।
অঙ্কন: সুমিত্র বসাক।
গত কয়েক মাস ধরে একই ধরনের এই দুষ্কর্ম বারবার ঘটছে আসানসোলে। ঘুম উড়েছে বাসিন্দাদের। ব্যাঙ্ক থেকে টাকা তুলে নিরাপদে বাড়ি ফেরা নিয়ে রীতিমতো আতঙ্কে ভুগছেন গ্রাহকেরা। পুলিশ জানিয়েছে, ছিনতাইয়ের ঘটনাগুলি ঘটেছে ব্যাঙ্ক থেকে একশো মিটার বা তার আশপাশের মধ্যে। যে ক’টি ঘটনা ঘটেছে, এখনও কোনওটির কিনারা করতে পারেনি পুলিশ। ধরা পড়েনি কেউ। পুলিশের অবশ্য দাবি, বাইক-বাহিনীর এই দুষ্কর্ম বন্ধ করতে বেশ কিছু ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। কিছুটা ফলও মিলেছে। শহরবাসী যদিও পুলিশের এই কথা আশ্বস্ত হতে পারছেন না।
আসানসোল-দুর্গাপুর কমিশনারেট এলাকায় বাইকে চড়ে যেতে যেতে টাকার ব্যাগ বা মহিলাদের গলা থেকে হার ছিনিয়ে নেওয়ার ঘটনা ঘটছে বেশ কিছু দিন ধরেই। ইদানীং ব্যাঙ্ক থেকে বেরোনো গ্রাহকদের টাকার ব্যাগ ছিনতাই বেড়েছে আসানসোলে। পুলিশের পরিসংখ্যান জানাচ্ছে, গত সাত মাসে এ রকম অন্তত আটটি ঘটনা ঘটেছে। সেন্ট্রাল ওয়াটার কমিশনের কর্মী দুলালবাবু, ষষ্ঠীচরণবাবু বা নির্মলবাবুদের আগে এমন ঘটনার শিকার হয়েছেন আরও অনেকে। গত ৩ মে রবীন্দ্রভবন লাগোয়া এক ব্যাঙ্ক থেকে টাকা তুলে ফেরার সময়ে বিএনআর মোড় এলাকায় এক দম্পত্তির কাছ থেকে কয়েক লক্ষ টাকা ছিনিয়ে নেয় বাইক আরোহীরা। তার আগে ২ মার্চ গির্জা মোড়ের কাছে টাকার ব্যাগ মোটরবাইকে ঝুলিয়ে বাড়ি ফিরছিলেন প্রদীপ দাশগুপ্ত। ব্যাগটি ছিনিয়ে নিয়ে পালায় মোটরবাইকে চড়ে আসা দু’জন। ২২ ফেব্রুয়ারি আসানসোলের উত্তর থানার বিবেকানন্দ রোডে শেখ নাজিন নামে এক ব্যক্তির কাছ থেকে লক্ষাধিক টাকার ব্যাগ ছিনতাই হয়। তিনি ভগৎ সিংহ মোড় এলাকার একটি বহুজাতিক ব্যাঙ্ক থেকে টাকা তুলে ফিরছিলেন। ১২ ফেব্রুয়ারি রানিগঞ্জ থেকে বাসে চেপে বরাকরে এসে নামতেই মহম্মদ তুফানি নামে এক শিক্ষকের টাকার ব্যাগ ছিনিয়ে নিয়ে পালায় দুই বাইক-আরোহী। ৭ জানুয়ারি জামুড়িয়ার বীজপুর রেলগেট এলাকায় প্রথমে গুলি চালিয়ে স্থানীয় এক শিল্পপতির গাড়ি থামায় দুই মোটরবাইক আরোহী। তার পরে তাঁর কাছ থেকে বেশ কয়েক লক্ষ টাকা ভর্তি ব্যাগ ছিনিয়ে নিয়ে যায়।
পুলিশ জানায়, ঘটনার তদন্তে নেমে বোঝা গিয়েছে, দুষ্কৃতীরা তথ্য হাতে নিয়েই কাজ সেরেছে। অর্থাৎ, তারা আগাম খবর রাখে, কোন গ্রাহক ব্যাঙ্ক থেকে মোটা টাকা তুলে ফিরছেন। সেই মতো তাঁদের ধাওয়া করে ছিনিয়ে নিচ্ছে টাকার ব্যাগ। কিন্তু কী ভাবে দুষ্কৃতীরা এই তথ্য জানছে? এক পুলিশ অফিসার জানান, তদন্তে জানা গিয়েছে, ওই দুষ্কৃতীরা কয়েকটি দলে ভাগ হয়ে ‘অপারেশন’ চালায়। নিছক গ্রাহক সেজে দলের কেউ কেউ ব্যাঙ্কে ঢোকে, শিকারের সন্ধানে ঘোরাফেরা করে। যুতসই শিকারের খোঁজ পেলে তা বাইরে অপেক্ষারত সঙ্গীদের কাছে পৌঁছে দেয়। ছিনতাইয়ের কাজটি সারে ওই বাইক-বাহিনী। এই দুষ্কর্ম কী উপায়ে বন্ধ করা যেতে পারে, সে প্রশ্নে ওই পুলিশ অফিসার জানান, ব্যাঙ্কের সামনে দাঁড়িয়ে পুলিশকে নজর রাখতে হবে, কোনও এক বা একাধিক ব্যক্তি বারবার ব্যাঙ্কে ঢুকছেন-বেরোচ্ছেন কি না। এরকম কিছু চোখে পড়লেই পুলিশকে তাদের ডেকে জিজ্ঞাসাবাদ করতে হবে। প্রয়োজনে নিয়মিত ব্যাঙ্কের সিসিটিভি ফুটেজ পরীক্ষা করতে হবে।
আসানসোল-দুর্গাপুর কমিশনারেটের এডিসিপি (সেন্ট্রাল) সুরেশ কুমার চাডিয়া জানান, এই বাইক-আরোহীরা যেমন সুচারু ভাবে ও আত্মবিশ্বাসের সঙ্গে অপকর্মগুলি করেছে, তা তাঁদের কাছে বড় মাথাব্যথা হয়ে দাঁড়িয়েছে। তিনি বলেন, “আমরা বেশ কয়েকটি পদক্ষেপ করেছি। ফলে, এই বাইক-বাহিনীর অপরাধ অনেকটা কমেছে। তবে চক্রটিকে এখনও ধরতে পারিনি। তারা কোথা থেকে আসছে তা-ও জানা যাচ্ছে না। তবে শীঘ্রই কিনারা হবে।” কী ধরনের পদক্ষেপ করেছে পুলিশ? এডিসিপি জানান, ব্যাঙ্কগুলির সামনে পুলিশের জিপ রাখা হচ্ছে। ব্যাঙ্কে ঢোকা-বেরোনো গ্রাহকদের উপরে তীক্ষ্ন নজর রাখছে পুলিশ। যে এলাকার রাস্তায় দুষ্কর্মের সম্ভাবনা বেশি, সেখানে পুলিশ ঘনঘন টহল দিচ্ছে। ধারাবাহিক ভাবে বাইক পরীক্ষা করা হচ্ছে। পুলিশের আশ্বাস, মানুষের শঙ্কার কারণ নেই।
কাজের কাজ হওয়ার আগে শঙ্কা অবশ্য কাটছে না আসানসোলবাসীর।



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.