বাঘ বাহাদুর
টিকটিকির মতো দেওয়াল বেয়ে মনুমেন্টে ওঠা তাঁর কাছে
বাঁয়ে হাত কা খেল।
তাজ্জব করে দেওয়া শরীরের কেরামতি শিখছেন
জ্যাকি-পুত্র টাইগার শ্রফ।
লিখছেন প্রিয়াঙ্কা দাশগুপ্ত |
স্পোর্টস অথরিটি অব ইন্ডিয়ার মুম্বইয়ের স্টেডিয়ামে একদিন টাইগার শ্রফ দেখেন ছোট একটা ভিড়। নাহ্, জ্যাকি শ্রফের ছেলেকে দেখতে ভিড়টা হয়নি। ভিড়টা হয়েছিল ব্রুস লি-কে দেখতে। আশ্চর্য হওয়াটাই স্বাভাবিক। কোথায় ব্রুস লি, আর কোথায় টাইগার শ্রফ!
তবে যাঁরা স্টেডিয়ামে সে দিন ভিড় জমিয়েছিলেন, তাঁরা টাইগারকে দেখে একদম তাজ্জব। সামনের বছর বলিউডের পরদায় টাইগারের আত্মপ্রকাশ হতে চলেছে। সাজিদ নাদিয়াদওয়ালার প্রযোজনায় উনি ‘হিরোপন্তি’-তে মুখ্য চরিত্রে অভিনয় করবেন। অ্যাকশন-রোম্যান্স ছবি। পরিচালনায় সাবির খান।
তার আগে শুরু হয়ে গিয়েছে টাইগারের ফিটনেস ট্রেনিং। আর সেটা করতে গিয়ে এমন কিছু কাণ্ড করেছেন টাইগার, যা দেখে অনেকেই তাঁর সঙ্গে ব্রুস লি-র মিল খুঁজে পাচ্ছেন। |
|
আমি
• নাম: টাইগার শ্রফ
• বয়স: ২২ বছর
• আদর্শ: ফিটনেসে ব্রুস লি।
নাচে মাইকেল জ্যাকসন।
• পছন্দের খাবার: যা পুষ্টিকর,
সেটাই খাই।
প্রয়োজনে নিজেই
নিজের খাবার রান্না করি। |
|
যখন টাইগারের বছর উনিশ বয়স, তখন লম্বা চুল রেখেছিলেন তিনি। মার্শাল আর্টস-এর পোকা ছিলেন। ট্রেনিং করতে গিয়ে চুলগুলো হাওয়ায় উড়ত। দেখতে বেশ সেক্সি লাগত হয়তো। কিন্তু তিন বছর আগে টাইগার যখন জিমন্যাস্টিক্সের ট্রেনিং শুরু করলেন, এই লম্বা চুলই বাধ সাধল। জিলে মাওয়ানি হরিয়ানার জিমন্যাস্ট। জাতীয় স্তরে খেলোয়াড়। টাইগার যখন জিলের কাছে ট্রেনিং শুরু করেন, প্রথম দিনই তাঁকে বলে দেওয়া হয় চুল ছোট করে কাটতে। “আরে জিমন্যাস্টিক করতে গিয়ে হাওয়াতে চুল উড়লে তো অসুবিধে হবে। টাইগার সেটা শুনে চুল কেটে ফেলল। স্টেডিয়ামে ঢুকতেই দেখি একটা ভিড় জমছে। জল্পনা চলছে যে ব্রুস লি হঠাৎ করে মুম্বইয়ে উপস্থিত! আর সব থেকে মজার ব্যাপার হল ছোটবেলা থেকেই টাইগারের আদর্শ হলেন ব্রুস,” হাসতে হাসতে জিলে বলেন।
শুধু জিমন্যাস্টিক নয়, ইতিমধ্যে পারকোরের ট্রেনিংও নিতে শুরু করেছেন টাইগার। সহজ ভাষায় বোঝাতে গেলে পারকোর হল এমন একটা কৌশল, যা শিখে স্পাইডারম্যানের মতো দেওয়াল বেয়ে ওঠা যায়। লাফিয়ে ঝাঁপিয়েই ধর্মতলার কোনও তিন তলা বাড়ির ছাদ থেকে অনায়াসে চলে যাওয়া যায় নিউ মার্কেটের কোন ও বিল্ডিংয়ের ছাদে। কোনও ‘হারনেস’ ছাড়াই টাইগার তাই এখন তিন তলা বাড়ি থেকে সটান ঝাঁপ দিতে পারেন নীচে। কলকাতায় এলে সিঁড়ি না ব্যবহার করে দেওয়াল বেয়ে টিকটিকির মতো উঠে যেতে পারবেন মনুমেন্টের ওপর। শোনা গিয়েছে যে আমির খানও নাকি এই পারকোর-এর প্রশিক্ষণ নিয়েছেন ‘ধুম ৩’-এর অ্যাকশন সিকোয়েন্সের শু্যটিং করার আগে।
|
|
|
|
ওয়াল ফ্লিপ-য়ের কৌশল শিখতে ব্যস্ত |
|
টাইগারের অবশ্য পারকোর শেখার নেশা ধরে গিয়েছে। রোজ সকাল আটটা থেকে দুপুর দু’টো অবধি ট্রেনিং করছেন। মাঝেমধ্যে বাবা এসেও দেখে যান ছেলে কেমন শিখছে। “একদিন কাঁধে একটা চোট পেয়েছিল। বাড়ি থেকে টাইগারকে ডাক্তার দেখানোর কথাও বলা হয়েছিল। কিন্তু ও ডাক্তারের কাছে না গিয়ে সোজা আমার কাছে প্রশিক্ষণ নিতে স্টেডিয়ামে চলে আসে!” জানাচ্ছেন জিলে।
মুম্বইয়ের বিচে আগে প্রায়ই তাঁকে দেখা যেত মার্শাল আর্টসের ট্রেনিং করতে। কিন্তু আজকাল ওটা আর করেন না টাইগার। “আমি ওকে বলেছি ও ভাবে ট্রেন করলে মাঝেমধ্যে চোট পেতে পারে। জিমন্যাস্টিক করার আলাদা জুতো আছে। সেটা পরতে হয়। বিচে মার্শাল আর্টস করতে হয়তো ভাল লাগে। কিন্তু জিমন্যাস্টিক্স করতে গেলে তো একটা মাঠের প্রয়োজন। সেটা বিচে ও পাবে কোথায়?” জিলে বলছেন। আর মাঠ ছাড়া ট্রেনিং করলে ওঁর হাত বা পায়ে চোট লাগতে পারে।
পেশাদার জিমন্যাস্টের মতো ভাল পারফর্ম করেন টাইগার। ডাবল ফ্রন্ট পাইক, ব্যাক লে-আউট এ সবই নখদর্পণে। “অনেক জিমন্যাস্টের এত গ্রেস থাকে না শরীরে। কারও হয়তো দেহের ওপরের অংশটা বেশ গ্রেসফুল। কিন্তু পায়ের দিকটা সেটা নয়। টাইগারের দেহের গঠনে এই দু’টো অংশের মধ্যে একটা সামঞ্জস্য রয়েছে। যে ভাবে গোড়ালিটা সুন্দর ভাবে ও ফেলতে শিখেছে, তা একদম দেখার মতো,” জিলে বলছেন। |
জিলে মাওয়ানির কাছে প্রশিক্ষণ নিচ্ছেন টাইগার |
জিমন্যাস্টিক আর পারকোর শেখার জন্য আরও একটা অদ্ভুত জিনিস করতে হয় তাঁকে। প্রশিক্ষণ নেওয়ার সময় নেলকাটার নিয়ে ঘুরতে হয়। “বাচ্চা ছেলে। মাঝেমধ্যে ভুলে যায়। একটু নখ বাড়লেই ঝামেলা। অনেক সময় নখ না কেটেই স্টেডিয়ামে চলে আসে। আমি তখন নেল ফাইল দিয়ে ঘষে দিই। না কাটলে তো যে কোনও মুহূর্তে ওর নিজের বা আমার নখের আঁচড় লেগে যেতে পারে,” জানালেন জিলে।
তবে এই জিমন্যাস্টিক আর পারকোরের কৌশল কি টাইগারকে করতে দেখা যাবে বড় পরদার
জন্য? “এখনই সেটা বলা কঠিন। তবে যদি কোনও দৃশ্যে তা প্রয়োজন হয়, টাইগার একদম রেডি,” জানাচ্ছেন তাঁর গুরু।
আপাতত বাঘ বাহাদুর তৈরি। শুধুমাত্র অ্যাকশন বলার অপেক্ষায়। |
|