|
|
|
|
|
মেঘলা দিনে রঙিন সাজ
সাজগোজে দুঃসাহসী হওয়ার দুরন্ত সুযোগ
গোমড়া মুখো বর্ষাকালে। পরামর্শ দিচ্ছেন ঋতা ভিমানি |
|
পোশাকআশাক নিয়ে কথা উঠলে প্রথমেই মেয়েদের সাজগোজের কথাই মনে আসে। কিন্তু এই লেখায় আমি প্রথমে পুরুষদের বেশভূষার কথাই বলব। বেশির ভাগ পুরুষই মনে করেন অফিসেই হোক বা অন্য কোনও অনুষ্ঠান, যেখানেই যান না কেন শার্ট-ট্রাউজার বা একঘেয়ে ওই বিজনেস স্যুট হলেই চলবে।
কিন্তু শুধু শার্ট-প্যান্ট কেন? ধুতি-পাঞ্জাবি বা কুর্তা-আলিগড়ি পায়জামা স্টাইলিশ জ্যাকেট, এ সব পোশাকেও পুরুষদের কী স্মার্টই না দেখায়! কিংবা ধরা যাক দক্ষিণ ভারতীয় কায়দায় পা পর্যন্ত লম্বা ধুতি আর শার্ট। তারও স্বাতন্ত্র্য কম নয়।
পুরুষদের প্রথমেই বলব বর্ষাকালের এই বর্ণহীন দিনই তো গাঢ় লাল রঙের ধুতি পরার সেরা মরসুম। পরে নিন লাল ধুতির সঙ্গে কারুকাজ করা ঘিয়ে রঙের পাঞ্জাবি। কাঁধের ওপর আলগোছে ঝুলিয়ে দিন একখানা জম্পেশ উত্তরীয়। এই সাজের সঙ্গে চাই নাগরা বা কোলাপুরি চপ্পল।
|
সারারা-র ডিজাইন
|
যদি লাল ধুতি পরে কেতা দেখাবার পুরুষ না হন, সাবেকি ঘিয়ে রঙের ধুতিই পরুন। চড়িয়ে নিন বুকে কাজ করা একরঙা পাঞ্জাবি। তার ওপরে কনট্রাস্ট রঙের হালকা জ্যাকেট পরে নিলে আপনাকে আরও সম্ভ্রান্ত দেখাবে। গাঢ় রঙের ওপর হালকা কাজ করা অসাধারণ সব কুর্তা বড় বড় দোকানে, শপিং মলে ঢেলে বিক্রি হচ্ছে। চাইলে পরতে পারেন সেগুলোও।
আর যদি পশ্চিমি ছাঁচে সাজতে চান, ম্যাড়ম্যাড়ে দিনে রঙিন চকরাবকরা বুশ শার্ট পরলে কিন্তু আপনাকেও বেশ রঙিন মনে হবে।
ভিজে ভিজে আবহাওয়ায় চলতে পারে তসরের তৈরি লম্বা হাতা শার্ট। প্যান্টে না গুঁজে এই ধরনের শার্ট নেলসন ম্যান্ডেলাও পরে থাকেন। ইন্দোনেশীয় বাটিক শার্টও খুব জমকালো। একবার বালিতে মার্কিন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামাকে দেখেছিলাম এই পোশাকে। টিল গ্রিন, লাল, কালো আর সাদা রঙের মিশেলে বাটিক শার্ট পরে উনি সে দেশের ঐতিহ্যের সঙ্গে আশ্চর্য ভাবে মানিয়ে গিয়েছিলেন
সে দিন।
কলকাতার ফ্যাশন সচেতন পুরুষেরা যাঁরা ইন্দোনেশিয়া অথবা ফিলিপিন্স যান, ফেরার পথে রেয়ন ফেব্রিক দিয়ে তৈরি এই ধরনের ফর্মাল বর্ণময় বাটিক শার্ট কিনে আনলে ব্যাপারটা বেশ ফ্যাশনেবলই হবে। আনারসের আঁশ দিয়ে তৈরি কাপড়ের ওপর ব্যারং নামের বাটিক নকশা তোলা শার্ট পাওয়া যায় ফিলিপিন্সে। লম্বাঝুলের ফুলহাতা এই ধরনের শার্টগুলো একটু ঢিলেঢালা হয়। তাতে ভেতো বাঙালির মেদ সহজেই ঢাকা পড়বে। আর যদি একেবারে সাধারণ শার্ট পরতে চান, তা হলে তার সঙ্গে রঙচঙে ক্র্যাভ্যাট ভেলক্রো দিয়ে গলায় ঝুলিয়ে দিন। |
অ্যান্টিক বেনারসি পাড় বসানো ছাপা জর্জেট |
এ বার বলি মেয়েদের কথা। প্রথমেই বলি এই জলীয় বাতাসের দিনগুলোয় মাড় দেওয়া তাঁতের শাড়ি একেবারেই নয় কিন্তু।
যদি ফাইভ স্টার হোটেল বা এয়ার কন্ডিশন আছে এমন জায়গায় পার্টি হয়, বা ধরুন আপনার এমন বন্ধুর বাড়িতে পার্টি যেখানে লিভিং রুমে এসি আছে— তা হলে অনায়াসে তসর, ক্রেপ, ঘিচা, বা মটকা পরতে পারেন। ইন্দোওয়েস্টার্ন বা সালোয়ার কামিজের দিকে যাঁদের ঝোঁক তাঁরাও সাজগোজে আনুন রঙের ছোঁয়া।
আমার এক বান্ধবী খুব সুন্দর মিক্স অ্যান্ড ম্যাচ করে। কামিজের সঙ্গে চুড়িদারের বদলে সারারা ( বড় ঘের দেওয়া প্রায় ঘাগড়ার মতো দেখতে সালোয়ার) পরে। এই ধরনের পোশাক সিন্থেটিক কাপড়ে তৈরি হলে আরও ভাল। পরলে বেশ একটা ফর্মাল লুক আসে। কালো বা সোনালি বা যে কোনও বেসিক রঙের একটা সারারা থাকলে অনেক পোশাকের সঙ্গেই ম্যাচ করে পরা যাবে। সঙ্গে চাই অরগ্যাঞ্জার জমকালো দোপাট্টা।
জরিপাড়ের ঝাঁ-চকচক শাড়ির কোনও বিকল্প হয় না। বর্ষার মরসুমে অনায়াসে পরতে পারেন। ঠিক যেমন আমার এক বন্ধু বুবলি বন্দ্যোপাধ্যায় করেছেন। তিনি এই ধরনের শাড়ি নতুন করে বানাচ্ছেন, ডিজাইন করছেন। বিদেশেও রফতানি করছেন এই সব শাড়ি।
এই ভিজে মরসুমে ভিসকোজ শিফন বা জর্জেট শাড়ি পরেই পার্টি মাতানো যায়। বেছে নিন এমন কিছু পার্টি সিন্থেটিক যেগুলো দেখতে লাগবে পিওর জর্জেট বা শিফনের মতোই।
এই শাড়িগুলোর পাড়ে থাক ভারী অ্যান্টিকের কাজ। জোগাড় করে ফেলুন ব্রোকেডের একটা অসাধারণ ব্লাউজ। সন্ধেবেলার পার্টির আকর্ষণ হয়ে উঠবেন আপনিই। যেমন ধরুন বেনারসি পাড়ের বর্ডার দেওয়া একটা প্রিন্টেড ভিস্কোজ জর্জেট, আর তার সঙ্গে একটা শিমার ব্লাউজ দুর্দান্ত এফেক্ট এনে দিতে পারে। এই একই এফেক্ট আসতে পারে হলুদ লেহরিয়া আর জারদৌসি বর্ডার দেওয়া ম্যাজেন্টা আর গোল্ড ব্রোকেড ব্লাউজ পরলে। একটা প্লেন একরঙা শাড়ি যদি আপনি ভাল কাটের ব্রোকেড চোলির সঙ্গে পরেন, তা হলে আমাদের টলিউডি নায়িকাদের মতোই দেখতে লাগবে আপনাকে। শুধু নিজের ব্যক্তিত্ব বুঝে কতটা খোলামেলা হবেন করবেন সেটা আপনার হাতে। |
|
|
|
|
|