মেঘমল্লার
আকাশ-মায়ের কান্নায়...
টাপুর টুপুর টাপুর টুপুর
বৃষ্টি ঝরে
জল জমেছে মেঘের চোখে
সূর্যের এ বার ছুটি,
দিগদিগন্তে আলোক ঝরনা
ডুবল গুটিগুটি।
খোঁপা খুলে মেঘকন্যারা
কুচকুচ কালো চুলে
দেয় ভরিয়ে আকাশ-মাকে
জটার বিনু খুলে।
সদা হাসি মায়ের চোখেও
মেঘ ঢেলে দেয় জল,
নিমেষে মা’র নীল চোখ দুটো
মেঘজলে ছলছল।
পড়ে ঝমঝম রুপোর ধারা
চুনি-হিরে-পান্নায়
প্রকৃতি-মা’র সবুজ শাড়ি
আকাশ-মায়ের কান্নায়।
টাপুর টুপুর টাপুর টুপুর
গোলার নীচে ঘুমায় কুকুর
সারাটা গ্রাম অন্ধকারে ছাওয়া
টাপুর টুপুর টাপুর টুপুর
কোলা ব্যাঙে মেলালো সুর
শ্রাবণ জুড়ে পেল প্রোগ্রাম গাওয়া।
টাপুর টুপুর টাপুর টুপুর
ভেসে গেল পদ্মপুকুর
স্রোতের তোড়ে মাছরা স্বাধীন হাওয়া
টাপুর টুপুর টাপুর টুপুর
আকাশ উপুড় আকাশ উপুড়
ঘরে ঘরে ঘি খিচুড়ি খাওয়া।
আকাশ জুড়ে মেঘের পাহাড়
দাঁড়িয়ে আছে ঠায়
মাঝে মাঝেই বিজলি চমক
ভয় দেখিয়ে যায়।
হুড়ুম দুড়ুম শব্দ সাথে
বইছে প্রবল হাওয়া
ভয়েই মরে যাদের কুঁড়ে
টালি-খড়ে ছাওয়া।
একটু পরেই তুমুল সুখে
মেঘের পাহাড় ডাকে
বিষম জোরে বজ্রপাতের
সাথে যেন কাকে?
সে ডাক শুনে মেঘরা ভাঙে
সৃষ্টি সুখে নাচে
বৃষ্টি ঝরে মুষল ধারায়
গাছপালারা বাঁচে।


বৃষ্টি ভেজা দিনে
সবে মায়ের চোখ বুজেছে আমিও আধো জেগে,
দুপুর রোদে ছাইল আকাশ হঠাৎ কালো মেঘে।
বজ্রকঠিন গলায় যেন কে দিল এক ডাক,
মা উঠল ধড়মড়িয়ে দেখলাম এক কাক।
আমার দিকে চেয়ে আছে বৃষ্টি ভেজা চোখে,
মা ভাবল ঘুমের ঘোরে যাচ্ছি আমি বকে।
জানলা দিয়ে তাকিয়ে দেখি জল থইথই মাঠ,
মা দেখল জানলা দিয়ে আসছে জলের ছাঁট।
মাথায় আমার হাত বুলিয়ে জানলা বন্ধ করে
মা বলল, বৃষ্টিকে শোন আনতে নেই রে ঘরে।
অন্ধকারে মা আর আমি নিভল বিজলি বাতি,
মা বলল, বাবা আজকে নেয়নি রে বর্ষাতি।

খালপাড়ের জলসা
ও মেঘ
রিমঝিম রিমঝিম বৃষ্টির তালে
ব্যাঙেদের জলসাটা জমে যায় খালে।
সোনা ব্যাঙ, কোলা ব্যাঙ কুনোদের ছা
দুই পাড়ে জুড়ে দেয় রেগা-মাপা-গা।
ঝি, বউ নিয়ে যত ঝিঁঝিদের দল
মেতে ওঠে একই ভাবে ফিরে পেয়ে বল।
চিকচিক ঝিকঝিক জোনাকির আলো
পরিবেশ করে রাখে বেশ জমকালো।
ফোঁসফাঁস ঢোঁড়াসাপ বড় বেয়াদপ
হুটহাট জলসায় ঢুকে পড়ে সব।
বর্ষার খালপাড়ে তাই লাগে ভয়
রাত্তিরে মোটেও তা নিরাপদ নয়।
কুলুকুলু, গ্যাঙগ্যাঙ ঝিঁঝি-ঝিঁঝি-ঝিঁ
খালপাড়ে জলসায় যাব নাকো ছিঃ!
ও মেঘ, তোমার ভাগ্য ভাল,
আকাশটাকে মা পেলে,
ভাসতে ভাসতে বেড়িয়ে আসার
কত শহর-গাঁ পেলে।
বাতাস তোমার হাওয়াই গাড়ি,
তেল-ডিজেলের খরচা নাই,
দিন-রাত্তির বেড়াও ভেসে,
পড়াশোনার চর্চা নাই।
কেবল ভাসা এবং ভাসা,
এ ছাড়া তো কাজ দুটি,
হুড়ুম-গুড়ুম আওয়াজ করা,
বৃষ্টি ঝরা, ব্যস ছুটি।

বর্ষামঙ্গল

বৃষ্টি পড়ুক কৃষ্টি গড়ুক
মিষ্টিমধুর
ছন্দেতে...
বৃষ্টি নাচুক সৃষ্টি বাঁচুক
সোঁদামাটির
গন্ধেতে!
বৃষ্টি দুপুর টাপুর টুপুর
মাতুক হৃদয়
উল্লাসে...
বৃষ্টি সাঁঝে বাজনা বাজে
জুঁই-চামেলি
ফুল হাসে!

বৃষ্টি রাতে বাড়ির ছাতে
মনটা মাতে
হুল্লোড়ে...
বৃষ্টি আসুক সৃষ্টি হাসুক
হাসনুহানা
দুলল রে!
বৃষ্টি ধারায় ধানের চারায়
মেঘমল্লার
গান ধরে...
বৃষ্টি আসিস মায়ের আশিস
রুক্ষ-ধু ধু
প্রান্তরে!
বাদলা দিনে
প্রথম বর্ষা
বৃষ্টি পড়ে টাপুরটুপুর জল থই থই মাঠ
জলের তোড়ে যায় ভেসে মাছ উপচে পুকুর-ঘাট!
দিঘির জলে পদ্মফুলের মন করে আনচান
মাছরাঙা ও হাঁস-বকেরা করছে দারুণ স্নান!
বৃষ্টি পড়ে টাপুর টুপুর গান ধরেছে ব্যাঙ
করছে খেলা কই, পুঁটি, শোল মৌরলা আর চ্যাঙ!
বাদলা দিনে মন বসে না থাকতে মায়ের কোলে
মৎস্যকন্যা ডাকছে আমায় খেলতে গভীর জলে!
জলপরীরা দল বেঁধে সব বলছে কানে কানে
দারুণ মজা হবে এ বার খেলব নাচ আর গানে।
একটু একটু মেঘ ঘনাবে
সকাল দুপুর ঘিরে
দুষ্টু দামাল পাগুলো সব
দৌড়ে আসবে ফিরে!
বৃষ্টি নামলে ডানা ঝাড়বে
চড়ুই পায়রা হাঁস
আয় রিমঝিম গেয়ে ভিজবে
মাঠের হলুদ ঘাস।
জলের মধ্যে লুটুরপুটুর
পানকৌড়ির দলে তখন
ডাকবে অবাক বিকেল দুরন্ত ফুটবলে!

ছবি: সুমন চৌধুরী


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.