মঞ্চে সবে তখন দু’টো গান শেষ করেছেন ঊষা উত্থুপ। হঠাৎই দর্শকাসন থেকে অনুরোধ ভেসে এল, “দম মারো দম গান প্লিজ।” আবার কখনও “শান-টা হয়ে যাক।”
আপাত ভাবে মনে হতে পারে, এটা কোনও কলেজ ফেস্টের ছবি। কিন্তু না।
ছবিটা কলকাতা পুলিশের প্রবীণ নাগরিকদের নিয়ে প্রকল্প ‘প্রণাম’-এর এক অনুষ্ঠানের। শনিবার উত্তর ও মধ্য ডিভিশন এলাকার প্রবীণ বাসিন্দাদের নিয়েই বার্ষিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করেছিল পুলিশ। সেখানেই যেন এক লহমায় নিজেদের যৌবনে ফিরে যেতে চাইলেন শহরের প্রবীণ বাসিন্দারা। এক-একটা গান শেষ হচ্ছে, আর হাততালি-হুল্লোড়ে যেন ফেটে পড়ছিল কানায় কানায় ভর্তি কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের শতবার্ষিকী প্রেক্ষাগৃহ। “হাততালি দেবেন না কেন, সাত-আটের দশকে তো এঁদের যৌবন ভরপুর!” মন্তব্য এক পুলিশকর্তার।
আদতে অনুষ্ঠানের এই সুরটা যেন বেঁধে গিয়েছিল শুরুর দিকেই। ‘প্রণাম’-এর পাঁচ জন সদস্যের এ দিন জন্মদিন ছিল। সেই উপলক্ষে মঞ্চে ডেকে কেক কাটা হয়। বৃদ্ধেরা কেক কাটছেন আর তাঁদের ঘিরে রয়েছেন কলকাতা পুলিশের শীর্ষ-কর্তা, মন্ত্রী, সাংসদেরা। হাততালি আর ‘হ্যাপি বার্থ ডে’ গানের সঙ্গে অনাবিল হাসি ফুটে উঠল ওই ষাটোর্ধ্ব নাগরিকদের মুখে। |
আগামীর আলো। দর্শকদের হাতে হাতে জ্বলছে টর্চ। ছবি: সুমন বল্লভ। |
তার পরে সাময়িক বিরতিতে বাঁশি ধরলেন মুচিপাড়া এলাকার বাসিন্দা অজিত নন্দী। উদয়শঙ্করের দীর্ঘদিনের সঙ্গী অজিতবাবুর বাঁশি শেষ হতেই মঞ্চে হাজির ঊষা উত্থুপ। সেই সঙ্গে হঠাৎ যেন জীবনের একটা যুগ পিছিয়ে গেলেন চুলে পাক ধরে যাওয়া নাগরিকেরা।
অনুষ্ঠানের শুরুতেই চুলে পাক ধরা নিয়ে কিঞ্চিৎ রসিকতা করেন সাংসদ সুদীপ বন্দ্যোপাধ্যায়। প্রাক্তন কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্য-প্রতিমন্ত্রী সুদীপবাবুর বক্তৃতার বেশিটাই ছিল সুস্থ থাকার পরামর্শ। সঙ্গে বললেন, “ষাটে পড়েছি। চুলে পাক ধরতেও শুরু করেছে। এ বার বোধহয় আমিও আপনাদের দলে ঢুকলাম।” |
প্রবীণ নাগরিকদের নিয়ে বিশেষ অনুষ্ঠান কলকাতা পুলিশের। |
পুলিশ জানিয়েছে, শহরের প্রতিটি থানা এলাকার প্রবীণ নাগরিকদের নিয়ে ‘প্রণাম’ নামে এই প্রকল্প রয়েছে। এর সদস্যেরা নিজেদের মধ্যে নানা অনুষ্ঠানের আয়োজন করেন। পুজোর সময়ে পুলিশের সহায়তায় এক সঙ্গে ঠাকুরও দেখতে বেরোন। কলকাতা পুলিশের হিসেবে, উত্তর ও মধ্য কলকাতায় সব মিলিয়ে হাজার দুয়েক সদস্য রয়েছেন। আর আগের প্রজন্মের এই মানুষদের বর্তমান ও ভবিষ্যৎ নিরাপদ রাখার দায়িত্ব পালনের জন্য প্রদীপকুমার দে, সুকান্ত চক্রবর্তী, সুব্রত ধর ও মনোজকুমার ভুঁইয়া নামে চার অফিসার এ দিন পুরস্কৃত হন। ওই মঞ্চে এসেই কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য সুরঞ্জন দাস মনে করালেন আইনস্টাইনের সেই কথা, “লার্ন ফ্রম ইয়েস্টারডে, লিভ ফর টুডে, হোপ ফর টুমরো।” অর্থাৎ, আশা থাকুক ভবিষ্যৎতকে ঘিরে।
‘সারে জঁহা সে আচ্ছা’ গেয়ে অনুষ্ঠান শেষ করলেন ঊষা। আর প্রেক্ষাগৃহে ছড়িয়ে রইল প্রবীণদের দেওয়া পেন্সিল টর্চের আলো।
আশার আলো! |