হাসপাতাল নয়, যেন ‘নেই’ রাজ্য। বিশেষজ্ঞ চিকিত্সক নেই, সার্জেন নেইএভাবেই চলছে দিঘা স্টেট জেনারেল হাসপাতাল। ওয়ার্ড মাস্টার নেই, ক্যাশিয়ার নেই, এমনকী হাসপাতালের সুপার পদটিও গত কয়েকবছর হল খালি পড়ে রয়েছে। স্বভাবিক ভাবেই ধুঁকছে হাসপাতালের চিকিত্সা পরিষেবা।
রাজ্যের সৈকত শহর দিঘায় ১৯৭৯ সালে এই স্টেট জেনারেল হাসপাতালের উদ্বোধন করেন রাজ্যের তত্কালীন স্বাস্থ্যমন্ত্রী ননী ভট্টাচার্য। পঞ্চাশ শয্যার ওই হাসপাতালের উপর দিঘা ও রামনগর থানার কয়েক লক্ষ মানুষ ছাড়াও প্রতিবেশী রাজ্য ওড়িশার সীমানাবর্তী এলাকার বহু মানুষ নির্ভরশীল। কিন্তু এত গুরুত্বপূর্ণ একটি হাসপাতালে নূন্যতম পরিষেবাটুকুই মেলে না বলে অভিযোগ।
দীর্ঘদিন ধরে হাসপাতালে পূর্ণ সময়ের কোনও ওয়ার্ডমাস্টার নেই। হাসপাতালের এক গ্রুপ-ডি স্টাফ বতর্মানে ওয়ার্ড মাস্টারের দায়িত্ব সামলাচ্ছেন। সব মিলিয়ে হাসপাতালে একজন দন্ত বিশেষজ্ঞ-সহ মাত্র ৬ জন চিকিত্সক রয়েছেন। যার মধ্যে দু’জন চিকিত্সক আবার ডেপুটেশনে এসেছেন। ২০০৯ সালে রামনগর ১ পঞ্চায়েত সমিতির প্রাক্তন সভাপতি দেবব্রত দাস দিঘা স্টেট জেনারেল হাসপাতালে একটি আল্ট্রাসোনোগ্রাফি মেশিন দিয়েছিলেন। কিন্তু রোগীদের স্বার্থে ব্যবহৃত না হয়ে তা হাসপাতালে পড়ে নষ্ট হচ্ছে। হাসপাতাল কর্মীদের আবাসনের অবস্থাও তথৈবচ। যে কোনও মুহূর্তে তা ভেঙে পড়ে বড় দুর্ঘটনা ঘটে যেতে পারে। প্রশাসনিক আধিকারিকদের বারবার জানিয়েও কোনও সুরাহা হয়নি বলে হাসপাতাল কর্মীদের অভিযোগ। |
খালি পড়ে অপারেশন থিয়েটার। —নিজস্ব চিত্র |
এ দিকে, বহু লক্ষ টাকা ব্যয়ে হাসপাতালে অপারেশন থিয়েটার গড়ে তোলা হলেও স্বাস্থ্য দফতরের অনুমোদন না থাকায় তা চালু করা যাচ্ছে না। শুধু হাসপাতালে আসা প্রসূতি মহিলাদের কথা চিন্তা করে বতর্মানে সপ্তাহে দু’দিন (মঙ্গলবার ও বুধবার) অপারেশন থিয়েটারে ‘সিজার’ করা হচ্ছে বলে ভারপ্রাপ্ত সুপার সমীরকুমার কুইতি জানিয়েছেন।
এই অবস্থায় অধিকাংশ রোগীকেই কাঁথি বা তমলুক হাসপাতালে ‘রেফার’ করে দেওয়া হয়। দিঘার মতো জনপ্রিয় পযর্টন কেন্দ্রে প্রতিনিয়ত ছোটখাটো দুর্ঘটনা লেগে রয়েছে। কাছে হাসপাতাল থাকা সত্ত্বেও আহতদের নিয়ে ছুটতে হয় কাঁথি, তমলুক, না হলে কলকাতায়। রোগীকল্যাণ সমিতির সদস্য দেবব্রত দাস বিরক্তির সুরে বলেন, “লক্ষ লক্ষ টাকা খরচ করে অপারেশন থিয়েটার গড়া হয়েছে। কিন্তু সেই অপারেশন থিয়েটার চালু করতে স্বাস্থ্য দফতরের কেন এত অনীহা তা বোঝা যাচ্ছে না। এর আগে দেবজ্যোতি রায় নামে এক চিকিত্সক অস্থায়ী সুপারের দায়িত্বে এসে নিজের উদ্যোগে প্রতিদিন অপারেশন থিয়েটার চালু করেছিলেন। কিন্তু স্বাস্থ্য দফতরের সঙ্গে বিতর্কে জড়িয়ে পড়ায় তাঁকে কোচবিহারে বদলি করে দেওয়া হয়। পরে তিনি সরকারি চিকিত্সকের চাকরিই ছেড়ে দিতে বাধ্য হন।” সপ্তাহে দু’দিন অপারেশন থিয়েটার চালু থাকা নিয়েও ক্ষোভ প্রকাশ করেন দেবব্রতবাবু। তাঁর বক্তব্য, “মঙ্গল বা বুধবার বাদে অন্য কোনও দিন গর্ভবতী মহিলার প্রসববেদনা শুরু হলে তাঁকে ৩৫ কিলোমিটার দূরে কাঁথি মহকুমা হাসপাতালে পাঠানো হয়। এটা মেনে নেওয়া যায় না।”
হাসপাতালের বেহাল পরিষেবার কথা কার্যত স্বীকার করে নিয়ে ভারপ্রাপ্ত সুপার সমীরকুমার কুইতি বলেন, “হাসপাতালে নিয়মিত অপারেশন থিয়েটার চালু করা, বিশেষজ্ঞ চিকিত্সক ও সার্জেন নিয়োগ করা নিয়ে স্বাস্থ্য দফতরে বারবার জানিয়েছি। কিন্তু শুধু আশ্বাস ছাড়া বাস্তবে কিছুই হয়নি।”
কাঁথির সহকারী মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক তরুণকান্তি খাটুয়ার আশ্বাস, “দিঘা স্টেট জেনারেল হাসপাতাল নিয়ে রাজ্যের স্বাস্থ্য দফতর বেশ কিছু পদক্ষেপ নিতে চলেছে। পঞ্চায়েত ভোটের পরই হাসপাতালের স্থায়ী সুপার আসছেন। অন্য খালি পদগুলিতেও যাতে দ্রুত কর্মী নিয়োগ হয় সে ব্যাপারেও পদক্ষেপ করা হচ্ছে।” |