চার বছর আগে নির্মল গ্রাম পঞ্চায়েত সমিতির শিরোপা পেয়েছিল মোহনপুর। চলতি আর্থিক বছরের সমীক্ষায় উঠে এল ওই পঞ্চায়েত সমিতির ৬৬৮১টি পরিবারে শৌচাগারই নেই! এখনও তাঁরা শৌচকার্য সারেন খোলা আকাশের নীচে!
স্বাভাবিক ভাবেই প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে, আদৌ কি নির্মল গ্রাম পঞ্চায়েতের স্বীকৃতি নেওয়ার সময় প্রকৃত চিত্র তুলে ধরা হয়েছিল? প্রশাসনিক কর্তাদের অবশ্য যুক্তি, প্রতি বছরই পরিবারের সংখ্যা বাড়ে। এক্ষেত্রেও এমনটা হয়ে থাকতে পারে। যদিও এই যুক্তি কতটা গ্রহণযোগ্য তা নিয়েও প্রশ্ন থেকে যায়।
শুধু মোহনপুর কেন, পশ্চিম মেদিনীপুর জেলার ২৯০ গ্রাম পঞ্চায়েতের মধ্যে ৯৪টি এবং ২৯টি পঞ্চায়েত সমিতির মধ্যে ১টি পঞ্চায়েত সমিতি (মোহনপুর) নির্মল গ্রাম পঞ্চায়েত ও পঞ্চায়েত সমিতি হিসাবে স্বীকৃতি পেয়েছিল সেই সময়। ভারত নির্মাণ অভিযান প্রকল্প আসার পরে সমীক্ষা শুরু হলে দেখা যায় নির্মল গ্রাম পঞ্চায়েতের অধীন অনেক পরিবারেরই শৌচাগার নেই! এখন ভারত নির্মাণ প্রকল্পে ওই পরিবারগুলিতে শৌচাগার তৈরিতে উদ্যোগী হয়েছে কেন্দ্রীয় সরকার। এর জন্য তারাই টাকা দেবে। লক্ষ্য, ২০১৬ সালের মধ্যেই প্রতিটি পরিবারে শৌচাগার তৈরি করতে হবে। অতিরিক্ত জেলাশাসক (জেলা পরিষদ) পাপিয়া ঘোষ রায়চৌধুরী বলেন, “২০১৬ সালের মধ্যে প্রতিটি বাড়িতে ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে শৌচাগার তৈরির জন্য পদক্ষেপ করা হচ্ছে। ইতিমধ্যেই সমীক্ষার কাজ শেষ হয়ে গিয়েছে।
শৌচাগার নির্মাণ ও ব্যবহার সম্বন্ধে সচেতনতা তৈরি করতে বিভিন্ন সময়ে নানা প্রকল্প এসেছে। হয়েছে নানা শিবির, দেওয়াল লিখন, উপভোক্তাদের তালিকা তৈরি। শৌচাগার তৈরিও হয়েছিল কিছু। কিন্তু প্রকল্প রূপায়ণ নিয়ে যত ঢক্কানিনাদ শোনা গিয়েছিল, ততটা কী কাজ হয়েছে। ভারত নির্মাণ অভিযান প্রকল্পে প্রতিটি বাড়িতে শৌচাগার তৈরি করতে হবে, এই প্রকল্প আসার পরেই সমীক্ষা শুরু হয়। দেখা যায় পশ্চিম মেদিনীপুর জেলার প্রায় অর্ধেক পরিবারেই শৌগাচার নেই! প্রশাসনিক পরিসংখ্যান বলছে, জেলায় মোট পরিবারের সংখ্যা ১১ লক্ষ ৪৬ হাজার ৬২২টি। তার মধ্যে শৌচাগার রয়েছে এমন পরিবারের সংখ্যা ৫ লক্ষ ৮৪ হাজার ৮১৭টি। আর শৌচাগার নেই এমন পরিবারের সংখ্যা ৫ লক্ষ ৬১ হাজার ৮০৫টি। অর্থাত্ প্রায় অর্ধেক। শুধু এটাই নয়, সব শিক্ষা প্রতিষ্ঠানেও নেই শৌচাগার।
সমীক্ষা রিপোর্ট বলছে, ১৬ হাজার ৪৯৮টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের মধ্যে ১৩ হাজার ৭৬৫টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে শৌচাগার তৈরি হয়েছে। এখনও ২ হাজার ৭৩৩টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে তা নেই! বাকি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে শৌচাগার থাকলেও তার বেশিরভাগই তালা বন্ধ থাকে বলে অভিযোগ। চাবি থাকে শিক্ষকদের কাছে। তা হলে তা করেই বা কী লাভ? প্রশাসন অবশ্য জানিয়েছে, এ বার কেবলমাত্র শৌচাগার তৈরি নয়, তার ব্যবহার নিয়েও কড়া পদক্ষেপ করা হবে। নজরদারির জন্য নিয়োগ করা হবে স্বচ্ছতা দূত। যাঁরা মানুষকে শৌচাগার তৈরি ও ব্যবহারে উত্সাহ দেবেন। তাঁরাই তালিকা তৈরি করবেন। তা ছাড়াও ব্যক্তিগত ভাবেও শৌচাগার তৈরির জন্য বিডিও-র কাছে আবেদন জানাতে পারেন সাধারণ মানুষ। এর জন্য কোনও আয়ের উর্ধ্বসীমা নেই। যে কোনও ব্যক্তিই এই সুযোগ নিতে পারেন। এর জন্য ব্যয় ধরা হয়েছে ৫ হাজার ৫০০ টাকা। যার মধ্যে ৪ হাজার ৬০০ টাকা দেবে সরকার। ৯০০ টাকা দিতে হবে উপভোক্তাকে। প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে, এই প্রকল্পে ইতিমধ্যেই পশ্চিম মেদিনীপুর জেলা প্রায় ১৫ কোটি টাকা পেয়েছে। চলতি আর্থিক বছরে কমপক্ষে লক্ষ্যমাত্রার ২৫ শতাংশ শৌচাগার তৈরির উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। ২০১৬ সালের মধ্যে প্রতিটি বাড়িতেই শৌচাগার নির্মাণ শেষ করে দেওয়া হবে বলেই প্রশাসনিক কর্তাদের দাবি।
তবুও প্রশ্ন থেকেই যাচ্ছে। নির্মল গ্রাম পঞ্চায়েত বা পঞ্চায়েত সমিতির মতো সেই হিসাবেও ফের জল থাকবে না তো? জেলার এক পদস্থ আধিকারিকের কথায়, “এই কারণেই তো স্বচ্ছতা দূত নিয়োগ করা হচ্ছে। এলাকার স্ব-সহায়ক দল থেকেই এই তা নিয়োগ করা হবে। স্বচ্ছতা দূতেরা যদি নামের সদ্ব্যবহার করেন, তা হলে কোনও অস্বচ্ছতা থাকার কথা নয়।” |