ঘুম থেকে বাঁক নিয়ে ঘন পাইন জঙ্গলের মধ্য সেঁদিয়ে যাওয়া রাস্তাটা ধরে কিছুটা এগোতেই, ‘এই গাড়ি রোকো’ বলে নেমে পড়েছিলেন মুখ্যমন্ত্রী। তাকদা বাজারের কাছে সাবেক বন বাংলোটার ঢালে খোলা মাঠের মধ্যে জীর্ণ ক্লাবটা দেখে বলেছিলেন, “এটাকে সারিয়ে নিয়ে একটা বাংলো করছেন না কেন। থাকার জায়গা হলেই ভাল ট্যুরিস্ট আসবে।”
তাঁর আগ্রহেই তাকদা ক্যান্টনমেন্টের কাঠের তৈরি সেই ক্লাবটা সাজিয়ে গুছিয়ে চোখ জুড়ানো একটা বাংলো গড়েছিল বন দফতর। গত অগস্টে তার উদ্বোধন করে এক রাত কাটিয়েও গিয়েছিলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। বলে গিয়েছিলেন “ফের আসব।” ব্রিটিশ আমলের পেল্লাই ঘরটায় মুখ্যমন্ত্রীর জন্যই তাই সেজে গুজে বসেছিল। ঘরে রাখা হয়েছিল ঢাউস একটা ইজেল, যদি মুখ্যমন্ত্রী এসে ছবি আঁকেন। |
ছিল তাঁর প্রিয় এক জোড়া সাদা হাওয়াই চপ্পলও।
উদ্বোধনের বছর ঘোরার আগেই তাকদার সেই ক্যান্টনমেন্ট-ক্লাবেই আগুন লাগিয়ে দিল দুষ্কৃতীরা। বৃহস্পতিবার রাতের সেই আগুনে পুড়ে খাক হয়ে গিয়েছে ‘ভিভিআইপি রুম’। পুড়ে গিয়েছে তার লাগোয়া হল ঘরটিও। সদ্য সাজানো বাংলোর অন্য চারটি ঘরে অবশ্য তেমন ক্ষতি হয়নি। স্থানীয় বাসিন্দারাই আগুন নিভিয়ে না দিলে এক রাতেই সদ্য গড়ে তোলা বাংলোটাই তছনছ হয়ে যেত।
গোর্খাল্যান্ডের দাবিতে পাহাড়ের অনির্দিষ্টকালের বন্ধ শুরুর ঠিক আগেই বৃহস্পতিবার মাঝরাতে ওই বাংলোয় আগুন লাগালো কে? বাংলোয় রাতে তেমন প্রহরা থাকে না। বন দফতরের তাকদা রেঞ্জ অফিসার এস পান্ডে বলেন, “কাল রাতে বৃষ্টি পড়ছিল। কুয়াশার মতো হয়েছিল চারদিক। কারা এসে আগুন লাগালো তা বোঝাই যায়নি।” স্থানীয় বাসিন্দাদের অনেকেরই সন্দেহ, যেহেতু মুখ্যমন্ত্রী ওই ঘরে এসে উঠেছিলেন এবং বাংলোটি জিটিএ-এর হাতে তুলে না দিয়ে স্থানীয় গ্রাম-কমিটিকে দিয়ে চালানোর ব্যবস্থা করেছিলেন তাই ক্ষুব্ধ হয়ে মোর্চা সমর্থকেরাই এ কাজ করেছে। মোর্চার সাধারণ সম্পাদক রোশন গিরি অবশ্য জানিয়েছেন, ওই ঘটনায় তাঁদের কেউ জড়িত নন। তবে পুলিশ জানিয়েছে, শুক্রবার রাত পর্যন্ত যে তিন জন সন্দেহভাজনকে গ্রেফতার করা হয়েছে তারা সকলেই মোর্চা সমর্থক।
তাকদা এবং লাগোয়া লামাহাটা। পাহাড়ের পর্যটন মানচিত্রে সদ্য জায়গা করে নেওয়া মুখ্যমন্ত্রীর সাধের এই পর্যটন কেন্দ্র দু’টিতে গত মরসুমে ভিড় ছিল চোখে পড়ার মতো। |
বন দফতরের উদ্যোগে পরিকাঠামো গড়ে দেওয়ার পরে বাংলোগুলি পরিচালনার দায়িত্ব সঁপে দেওয়া হয়েছিল স্থানীয় বাসিন্দাদের মধ্যেই। ইকো-ট্যুরিজিম কমিটি গড়ে তাঁরাই ওই বাংলোগুলির রক্ষণাবেক্ষণ থেকে পর্যটকদের দেখভাল করতেন। এ দিন রাতে আগুন লেগেছে দেখতে পেয়ে প্রথমে বেরিয়ে এসেছিলেন ওই কমিটির লোকজনই। তাঁদের দেখেই হামলাকারীরা পালায়। স্থানীয় বাসিন্দারাও এসে আগুন নেভানোর কাছে হাত দেন। জল ছিটিয়ে আগুন আয়ত্বে আনার চেষ্টা করেন তাঁরা।
রাতেই ঘটনাস্থলে পৌঁছন বন দফতরের ডিভিশন্যাল ফরেস্ট অফিসার (দার্জিলিং) বুদ্ধিরাজ শেওয়া। তিনি বলেন, “কমিটির লোকজন, বনকর্মীরা এসে হাত না লাগালে গোটা অতিথি নিবাসটাই পুড়ে যেত। পরে অবশ্য দমকল পৌঁছয়।”
|