ওঠ, সেহেরির সময় হয়েছে, জানায় রাত জাগানিয়ার দল
র ঘুম নয়। সময় হয়েছে সেহেরির। গলায় সুর তুলে হাঁক দিয়ে চলে যায় রাত জাগানিয়ার দল। গোটা রমজান মাস জুড়েই চোখে ঘুম নেই এই রাত জাগানিয়াদের। কেন না গ্রামবাসীদের রোজার জন্য তৈরি হতে বলবে কে?
সূর্য ওঠার আগে সবাইকে ঘুম থেকে তুলে সেহেরি (রমজান মাসে সূর্য ওঠার আগেই যে খাবার খান মুসলিমরা) খাওয়ার কথা মনে করিয়ে দেওয়াই কাজ ওঁদের। কারণ বিশ্বাস, তাতে তুষ্ট হবেন আল্লাহ্। রোগ বালাই রক্ষা করবেন তিনি। আর তাই পবিত্র রমজান মাস পড়লেই কাজে নেমে পড়েন তাঁরা। সাদারণ মানুষের কাছে ওঁদের পরিচিতি ‘জাগনদার দল’
গোটা বসিরহাট মহকুমা জুড়েই কয়েকশো দল রয়েছে এঁদের। দলের মানুষজনের হাতে থাকে টর্চ, হ্যাজাক আর হ্যারিকেন। সারা রাত ধরে গ্রামে গ্রামে ঘুরে তাঁরা গাইতে থাকেন গজলের পংক্তি। আর সেই সুর শুনেই সেহেরির জন্য প্রস্তুত হতে থাকেন যাঁরা রোজা রাখেন তাঁরা। প্রচণ্ড গরম, বৃষ্টি কোনও কিছুই বিরত করতে পারে না এই রাত জাগানিয়াদের। মহমেডান স্পোটিং ক্লাব, মথুরাপুর সেহেরি সমিতি, ভেবিয়া সেহেরি সমিতি, দেভোগ ইসলামিক সেহেরি পার্টি, তারাগুনিয়া আজানচলা সেহেরি কমিটি, গোপালপুর সেহেরি সমিতি, হাড়োয়া ইসলামিক সেহেরি সমিতি বা স্বরূপনগরের সেহেরি কমিটি সকলেই মনে করেন এটি তাঁদের সামাজিক কর্তব্য।
এ ভাবেই কাজ করে চলেন রাত জাগানিয়ার দল।—নিজস্ব চিত্র।
রাত জাগানিয়া দলের ঐতিহ্য অবশ্য বেশ প্রাচীন। আগে যখন সময় প্রত্যন্ত গ্রামাঞ্চলে সময় দেখার তেমন বন্দোবস্ত ছিল না, তখন থেকেই রোজাদারদের সেহেরি খাওয়ানোর জন্য রয়েছে এই দল। শহর বা গ্রামে মূলত কিশোরেরাই বেশিরভাগ সময়ে জাগনদার হিসেবে কাজ করেন। তবে অনেক দলে বয়স্করাও থাকেন। রজব আলি নামে এক জাগনদার বলেন, “গরিব ছেলেরাই বেশি এই দলে যোগ দেয়। তাঁদের বিশ্বাস, এই কাজে মানুষের দোয়া মেলে।” একেবারেই সামাজিক কতর্ব্য মনে করে কোনও পারিশ্রমিক না নিয়েই কাজ করেন এই সব জাগনদাররা। তবে বহু জায়গায় স্থানীয় মানুষ এঁদের অর্থ সাহায্য করেন। ওই টাকায় দলের সদস্যদের নতুন কাপড় কিনে দেওয়া হয়। বাকি টাকায় এলাকার গরিব ছেলেমেয়েদের জন্য বই-খাতা কিনে দেন ওঁরা। মহামেডান স্পোর্টিং ক্লাবের সদস্য বাবু গাজি বলেন, “আমাদের ক্লাবের জন্ম থেকেই জাগনদার দল বেরোয়।” গাজি নুরুল ইসলাম, ফারুক হোসেনও বলেন, “ঈদের আগে যে টাকা ওঠে, তা দিয়ে দলের সদস্যদের নতুন কাপড়, দুঃস্থ ছেলেমেয়েদের সাহায্য করা হয়।”
কী ভাবে রাত জাগেন ওঁরা?
প্রতি দলে এক জনের উপর দায়িত্ব থাকে রাত ২টোর আগে বাকিদের ডেকে দেওয়ার জন্য। তার পর সকলে মিলে রাত সাড়ে তিনটে পর্যন্ত হিন্দি, বাংলা বা উর্দু কবিতা পড়ে বা গজল গেয়ে জাগিয়ে দেন রোজাদারদের। এক একটা এলাকায় পাঁচ-ছ’হাজার মানুষকে জাগাতে ছুটতে হয় ওঁদের। মাঝে মধ্যে সাইকেলও নিতে হয়। রাতে এই ভাবে চলাফেরা করার সময়ে নানা অভিজ্ঞতাও হয় ওঁদের। দেভোগ ইসলামিক সেহেরি পার্টির সদস্য আবদুল কাদেরের কথায়, “এক রাতে একটা চোর চুরি করে ফিরছিল। আমাদের দেখে পালাতে শুরু করে। আমরাও ধাওয়া করি। শেষে চোরাই মাল পাওয়া যায়।”



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.