প্লাস্টিকের চায়ের কাপ, ছেঁড়া মাদুর, গৃহস্থালীর আবর্জনা সবই আছে। কোথাও আবার ঘাস-আগাছা জন্মে গিয়েছে। পড়লে মনে হবে পুরসভার কোনও আবর্জনা ফেলার জায়গা বা ডাম্পিং গ্রাউন্ডের কথা বলা হচ্ছে। আসলে এটা বনগাঁর অতিপরিচিত এবং গুরুত্বপূর্ণ রায় সেতুর বর্তমান ছবি। উত্তর ২৪ পরগনার বনগাঁ শহরে বনগাঁ-চাকদহ সড়কে ইছামতীর উপর কয়েক কোটি টাকা খরচ করে নির্মিত এই সেতুর পোশাকি নাম ‘রায় ব্রিজ’।সেতুর এমন অবস্থার জন্য সাধারণের সচেতনতার অভাবে পাশাপাশি সেতুপ রক্ষণাবেক্ষণে পূর্ত দফতরের উদাসীনতার বিরুদ্ধে অভিযোগ স্থানীয় মানুষের। সেতুর গুরুত্বপূর্ণ যে অংশ সেই দু’ধারের গার্ডার দু’টিও আবর্জনা জমে জমে ক্ষয়ে যাচ্ছে। শুধু গার্ডার দু’টিতে আবর্জনা জমাই নয়, সেতুর কংক্রিটের অংশগুলি ঢেকে গিয়েছে বিভিন্ন পোস্টারে। সেতুর উপরে রাস্তার দু’পাশ দখল করে নিত্য বসে অস্থায়ী দোকান। ফলে যাতায়াতের ক্ষেত্রেও প্রচণ্ড সমস্যার মুখে পড়তে হয় যানচালক থেকে পথচারীদের। |
২০০৫ সালে ইছামতীর উপর থাকা পুরনো, জরাজীর্ণ কংক্রিট ও কাঠের সেতুটি ভেঙে ফেলে নতুন সেতু তৈরির কাজ শুরু হয়। খরচ হয়েছিল প্রায় সাড়ে ছয় কোটি টাকা। সেতুর মূল অংশ ৬৬ মিটার লম্বা। মোট দৈর্ঘ্য ১০৭ মিটার। চওড়া ১১ মিটার। সেতু তৈরির সময় দোকানঘর ও বাড়ি ভাঙা পড়েছিল স্থানীয় বাসিন্দা অপূর্ব দাসের। কিন্তু নতুন পাকাপোক্ত সেতু এবং সড়ক হলে যাতায়াতের সুবিধার কথা ভেবে তাঁর মতো অনেকেই তা মেনে নিয়েছিলেন। সেই সেতুর বর্তমান অবস্থা দেখে অপূর্ববাবুর বক্তব্য, “সেতুর জন্য আমার মতো অনেকেই ত্যাগ স্বীকার করেছিলেন। কিন্তু রক্ষণাবেক্ষণের অভাবে সেতুর যা হাল তাতে আমরা হতাশ তো বটেই, তা ছাড়া যে কোনও সময় বড় ধরনের দুর্ঘটনার আশঙ্কাও রয়েছে।” পাশপাশি সেতুর উপরে বেআইনি পার্কিং এবং দখলদারি নিয়েও প্রশাসনের উদাসীনতার বিরুদ্ধে অভিযোগ জানান তিনি।
নিয়মিত আবর্জনা ফেলার কারণে সেতুপ গার্ডারগুলিতে ইতিমধ্যেই ক্ষয় ধরেছে। নষ্ট হয়ে গিয়েছে সেতুর সৌন্দর্য্যও। ২০০৯ সালের শেষ দিকে সেতু গিয়ে লোকজনের চলাচল শুরু হয়। ২০১১ সালে সেতু দিয়ে পুরো মাত্রায় যানবাহন ও লোক চলাচল শুরু হয়ে যায়। যদিও সেতুর উপরে দিনের পর দিন চাপ বাড়লেও সেতুর রক্ষণাবেক্ষণ নিয়ে পূর্ত দফতর মাথা ঘামায়নি বলে অভিযোগ করেছেন বাসিন্দারা। পূর্ত দফতরের নির্বাহী বাস্তুকার মুস্তাফা কামাল অবশ্য বলেন, “মানুষের সচেতনতার অভাবেই সেতুর এমন অবস্থা। তবে সহকারী বাস্তুকারকে এ ব্যাপারে ব্যবস্থা নিতে বলেছি।” দফতরের বনগাঁর সহকারী বাস্তুকার মল্লিনাথ মজুমদার বলেন, “সেতুর নোংরা-আবর্জনা পরিষ্কার করার জন্য পুরসভা ও মহকুমাশাসককে চিঠি দেওয়া হচ্ছে।”
এসডিপিও (বনগাঁ) রূপান্ত সেনগুপ্ত বলেন, “সেতু-সহ সংলগ্ন রাস্তায় বেআইনি পার্কিংয়ের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। এ জন্য একটি নজরদারি দলও তৈরি করা হয়েছে। সেতুতে দিনে বা রাতে বেআইনি পার্কিং দেখলেই ব্যবস্থা নেবে ওই দল।”
বনগাঁ পুরসভার চেয়ারম্যান জ্যোৎস্না আঢ্য বলেন, “বিষয়টি আমাদের নজরেও এসেছে। সেতুর আবর্জনা আমরাই পরিষ্কার করব। এ জন্য পূর্ত দফতরের চিঠি দেওয়ার প্রয়োজন নেই।” |