মেয়েকে স্কুলে পৌঁছে দিয়ে বাড়িমুখো হতেই তাঁকে তাড়া করেছিল দুষ্কৃতীরা। শুক্রবার সকালে তাদের তাড়া খেয়ে প্রাণ ভয়ে স্কুলেই ঢুকে পড়েছিলেন নবদ্বীপের দোয়ারপাড়া ঘাটের বাসিন্দা বরুণ দাস (৩২)। তাতে অবশ্য দু’টি বাইকে চড়ে আসা জনা চারেক দুষ্কৃতী দমেনি। স্কুল চত্বরে ঢুকেই গুলি চালায় বরুণবাবুকে। পিঠে, পায়ে, বুকে চারটি গুলি লাগে তাঁর। ওই অবস্থাতেই তিনি বাড়িতে ফোন করে জানান কারা তাঁর উপরে হামলা চালিয়েছে। স্থানীয়রা তাঁকে নবদ্বীপ স্টেট জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি করেন। সেখানে কিছুক্ষণের মধ্যে মারা যান বরুণবাবু।
কেবল টিভির ব্যবসা ছিল বরুণবাবুর। পারিবারিক সূত্রে জানা গিয়েছে সুদে টাকাও খাটাতেন তিনি। পুলিশের অনুমান তার জেরেই এই খুন। নদিয়া জেলা এসপি সব্যসাচীরমণ মিশ্র বলেন, “ওই যুবকসুদে টাকা খাটাতেন বলে জানতে পেরেছি। প্রাথমিকভাবে মনে হচ্ছে, সেই সংক্রান্ত শক্রুতার জেরে এই খুন।”
বরুণবাবুর বাবা ললিত দাসও মনে করেন সুদের কারবার নিয়ে পাড়ার কিছু দুষ্কৃতীর সঙ্গে গণ্ডগোলের জেরে তাঁকে খুন করা হয়েছে। তিনি বলেন, “ছেলে গুলিবিদ্ধ হওয়ার পর রক্তাক্ত অবস্থায় বাড়িতে ফোন করেছিল। ফোন পেয়েই স্কুলে ছুটে যাই। ওই অবস্থাতেই বরুণ জানায়, গোবিন্দ দাস, গদাই দেবনাথ, নিতাই দেবনাথ, পলাশ দেবনাথ এবং তপন ঘোষ নামে পাঁচ যুবকের নাম। তারাই ওকে তাড়া করে গুলি করেছে বলে জানিয়েছিল বরুণ।” ললিতবাবু জানান, ওরা প্রত্যেকেই বরুণবাবুর পরিচিত। মাঝেমধ্যেই টাকা ধার নিত। শোধ করার জন্য চাপাচাপি করতেই ওদের সঙ্গে ছেলের দূরত্ব বাড়ে। গোবিন্দের কাছ থেকে বরুণ অনেক টাকা পেত বলে পারিবারিক সূত্রে দাবি করা হয়েছে। বরুণের আত্মীয় বলেন, “টাকা ফেরত দেওয়া দূরের কথা দিন কয়েক ধরে গোবিন্দ ফের টাকা দাবি করছিল বরুণের কাছে। ক্ষুব্ধ বরুণ জানিয়েছিল, ‘টাকা দেব না যা পারিস করে নে!”
শুক্রবার বেলা পৌনে এগারোটা নাগাদ নবদ্বীপের চটিরমাঠ সংলগ্ন স্কুলে বছর চারেকের মেয়েকে পৌঁছে দিতে যান বরুণ। মেয়ে স্কুলে ঢুকতেই বাড়ির পথ ধরেন তিনি। স্কুলের চৌহদ্দি পেরোতে দুষ্কৃতীরা তাঁকে ধাওয়া করে। প্রাণ ভয়ে স্কুলেই ঢুকে পড়েন তিনি।
প্রায় নিরুপদ্রব নবদ্বীপে ছ-বছর পরে খুনের ঘটনা ঘটল। বিকেল থেকে তাই রাস্তাঘাটে লোক চলাচল কম। শহরের সর্বত্রই ছড়িয়েছে চাপা আতঙ্ক। |