সরকারি ঔদাসীন্যে নরকযাপন
কান্দির হোমের আবাসিকদের
রিকাঠামোর অভাবে ধুঁকছে কান্দির মহালন্দি মানসিক চক্রচর আবাস।
হোমে ২০০ জন আবাসিক থাকতে পারে। কিন্তু রয়েছে ১৩৬ জন পুরুষ ও ৯৯ জন মহিলা আবাসিক। ১০ ফুট বাই ২০ ফুটের তিনটে ঘরে ঠাসাঠাসি করে ১৩৬ জন পুরুষ আবাসিককে রাখা হয়েছে। জানালার ভেতর ও বাইরে দু’দিকেই পুরু করে তারের মশারি এঁটে দেওয়ায় ঘরগুলিতে আলো-বাতাস ঢোকে না।
হোম পরিচালনার জন্য অবশ্য ম্যানেজার ও দু’জন সহকারি ম্যানেজার থাকার কথা। কিন্তু সহকারি ম্যানেজার পদে এক জন থাকলেও দীর্ঘ দিন ধরে ম্যানেজার পদ শূন্য রয়েছে। বিভিন্ন সময়ে নানা ব্লকের চাইল্ড ডেভলপমেন্ট প্রোগ্রাম অফিসারদের ম্যানেজারের দায়িত্ব দেওয়া হয়। আগে ম্যানেজারের পদের দায়িত্বে ছিলেন লালগোলার চাইল্ড ডেভলপমেন্ট প্রজেক্ট অফিসার। কিন্তু লালগোলা থেকে ওই হোমের দূরত্ব প্রায় ৬০ কিলোমিটার। ফলে তাঁর পক্ষে প্রতি দিন মহালন্দি গিয়ে হোম দেখভাল করা সম্ভব হত না। তাঁর আমলেই ২০১২ সালের ১০ অগস্ট থেকে থেকে ২৮ অগস্টের মধ্যে মারা যান ৮ জন আবাসিক। পরের ৪ মাসে মৃত্যু হয়েছে আরও ২৪ জনের।
এর পরেই কান্দির সিডিপিও-কে ওই হোমের ম্যানেজারের অতিরিক্ত দায়িত্ব ভার দেওয়া হয়। তাঁর সময়েও এক মাসের মধ্যে মারা যান ৯ জন। সব মিলিয়ে ২০১২ সালে মহালন্দির ওই হোমে মারা যান ৩২ জন আবাসিক। বর্তমানে বড়ঞার সিডিপিও আকবর আলি ওই দায়িত্বে রয়েছেন। বড়ঞা ব্লকের পাশাপাশি কান্দির সিডিপিও-র দায়িত্ব পালন করতে হয় তাঁকে। আকবর আলি বলেন, “ম্যানেজারের দায়িত্বে আমি পাঁচ মাস আগে এসেছি। অপুষ্টিজনিত কারণে ওই আবাসিকদের মৃত্যু কি না, আমার পক্ষে বলা সম্ভব নয়। তবে এখন খাবারের মান আগের তুলনায় ভাল হয়েছে।”
হোমের হতশ্রী চেহারা। —নিজস্ব চিত্র।
হোম সূত্রে জানা গিয়েছে, এখন আবাসিক পিছু প্রতি দিন খাবারের জন্য বরাদ্দ হয়েছে ৪১ টাকা ৮৪ পয়সা। ওই অর্থে দৈনিক প্রত্যেক আবাসিকের জন্য ২৯৯ গ্রামের চালের ভাত, আটা ১৭৫ গ্রাম, মুড়ি ৭৫ গ্রাম, গুড় ২৮ গ্রাম, মসুর ডাল ৪৮ গ্রাম ডাল বরাদ্দ করা হয়েছে। সব্জির জন্য দৈনিক বরাদ্দ ৬ টাকা ৬০ পয়সা। সপ্তাহে এক দিন মুরগির মাংস ১০০ গ্রাম। যদিও বাস্তব চিত্র অবশ্য ভিন্ন। আবাসিকদের খাবারের মেনু বলতে জলের মত পাতলা ডাল আর কুমড়ো, বেগুন, আলু ও বরবটি দিয়ে পাঁচমেশালি সব্জি। অনেক সময়ে বাড়তি ভাত চেয়েও আবাসিকরা পান না বলেও অভিযোগ। আকবরবাবু অবশ্য বলেন, “আমি খোঁজ নিয়ে দেখছি। তবে এমনটা হওয়ার কথা নয়।”
এদিকে দুপুর সাড়ে ১১টার মধ্যে দুপুরের খাবার খাইয়ে মাথা গুনে ঘরের মধ্যে আবাসিকদের ঢুকিয়ে দিয়ে বাইরে থেকে তালাবন্দি করে রাখা হয়। কোনও আবাসিক ঘরে যেতে আপত্তি জানালে লাঠি দিয়ে ঘা কতক বসিয়ে দিতেও হোম-কর্মীদের হাত কাঁপে না। আবাসিকদের অভিযোগ, হোমে পানীয় জলেরও সমস্যা রয়েছে। ট্যাঙ্ক ফুটো হয়ে যাওয়ায় সেখানে জল ধরে রাখা যায় না। হোমের উঠোনে জলের কল রয়েছে। জল তোলার জন্য ১টি পাম্প রয়েছে। ওই পাম্প চালিয়ে রান্নার জন্য জল নেওয়া হয়। সেখানেই আবাসিক স্নানও করেন। ওই কলের জলই পান করেন আবাসিকরা।
হোমে ১ জন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক, ১ জন মনোবিদ, ১ জন কাউন্সিলর থাকার কথা থাকলেও ওই তিনটি পদই শূন্য রয়েছে। আকবর আলির দাবি, “প্রতি বুধবার গোকর্ণ ব্লক প্রাথমিক চিকিৎসা কেন্দ্র থেকে চিকিৎসক এসে আবাসিকদের শারীরিক পরীক্ষা করেন।” এছাড়াও হোমে ৫০ জন কর্মী থাকার কথা থাকলেও রয়েছে ৩২ জন।
এদিকে রাতে কোনএ আবাসিক আচমকা অসুস্থ হলে তাঁকে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার কোনও ব্যবস্থা হোমে নেই। কান্দির মহকুমাশাসক দীপাঞ্জন ভট্টাচার্য বলেন, “হোমের পরিকাঠামো ও পরিষেবার উন্নয়ন করা প্রয়োজন। অবিলম্বে শূন্যপদ পূরণে রাজ্য সরকারের উচিত প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া। সেই সঙ্গে হোম-কর্মীদেরও বিশেষ প্রশিক্ষণও দেওয়া উচিত।”
জেলাশাসক রাজীব কুমার বলেন, “ওই হোমে কোনও চিকিৎসক নেই। নেই মনোরোগ বিশেষজ্ঞও। প্রায় ছ’মাস আগে ওই হোমের পরিকাঠামোগত উন্নয়নের নকশা রাজ্য সমাজকল্যাণ দফতরে পাঠানো হয়েছে। আবাসিকদের নিয়মিত চিকিৎসা পরিষেবা দেওয়ার পাশাপাশি মানসিক হাসপাতালে রেখে চিকিৎসা করানোর কথাও ওই রিপোর্টে উল্লেখ রয়েছে। এখন পর্যন্ত তার কোনও উত্তর মেলেনি।”



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.