এখনও জলমগ্ন বহু গ্রাম, ত্রাণ নিয়ে ক্ষোভ বাড়ছে
ল নেমে ডাঙা উঠতে ঢের বাকি। ঘাটালবাসীর কপালে এখনও অনেক দুর্ভোগ।
এখনও ঘাটাল মহকুমার ঘাটাল, চন্দ্রকোনা ১ ও ২ এবং দাসপুর ব্লকের প্রায় চারশোর বেশি গ্রাম জলমগ্ন। ঘাটাল-চন্দ্রকোনা ও ঘাটাল-মেদিনীপুর (ভায়া নাড়াজোল) সড়ক জলমগ্ন থাকায় যানবাহন চলাচল এখনও বন্ধ। ফলে যোগাযোগের একমাত্র মাধ্যম সেই নৌকাই। অভিযোগ, ঘাটাল-চন্দ্রকোনা সড়কে দু’নম্বর চাতালে সকাল ন’টার আগে সরকারি নৌকার দেখা মেলে না। আবার সন্ধ্যা সাতটার পরেই বন্ধ হয়ে যায় পরিষেবা। ফলে বাধ্য হয়ে স্থানীয় বাসিন্দাদের বেশি টাকা দিয়ে বেসরকারি নৌকায় উঠতে হচ্ছে। ঘাটালের মহকুমাশাসক অংশুমান অধিকারী বলেন, “প্রয়োজনের তুলনায় নৌকা কম থাকায় যাতায়াতের জন্য বাসিন্দাদের অপেক্ষা করতে হচ্ছে। চাতালের দু’ধারেই পুলিশ থাকায় কোনও গণ্ডগোল হয়নি।”
ঘাটাল পুরসভার আড়গোড়া, শুকচন্দ্রপুর, গম্ভীরনগর, রঘুনাথচক, চাউলি-সহ বারোটি ওয়ার্ডে জল বাড়ার ফলে পানীয় জলের সঙ্কটও তৈরি হয়েছে। ঘাটাল পুরসভার চেয়ারম্যান বিভাস ঘোষ বলেন, “আমরা গাড়িতে করে প্রতি ওয়ার্ডেই পানীয় জল পৌঁছে দেওয়ার ব্যবস্থা করেছি। এছাড়া শুকনো খাবারও বিলি করা হচ্ছে।”

ঘাটালে যাতায়াতের ভরসা এখনও নৌকোই। ছবি: সৌমেশ্বর মণ্ডল
এ বিষয়ে মহকুমাশাসক জানান, “বিভিন্ন ব্লকের প্রত্যন্ত গ্রামগুলিতেও বোটে করে জাতীয় বিপযর্য় মোকাবিলা দফতরের লোকেরা প্যাকেট ভর্তি পানীয় জল পৌঁছে দিচ্ছেন।” প্রশাসন সূত্রের খবর, গোটা মহকুমায় এখনও ১১টি ত্রাণ শিবিরে হাজার খানেক মানুষ রয়েছেন। তবে দাসপুর ১ ব্লকের রাজনগর পঞ্চায়েতের কিছু এলাকা ও নন্দনপুর ২ পঞ্চায়েতে জল কমতে শুরু করেছে।
এ দিকে, ক্ষীরাই-বাক্সী নদীর বাঁধ ভেঙে পাঁশকুড়ার চৈতন্যপুর-১ পঞ্চায়েতের রাধাবন গ্রামে জল ঢুকছিল বুধবার ভোর থেকে। গত তিন দিনেও বাঁধ মেরামত না হওয়ায় জল ঢুকছেই। চৈতন্যপুর ১, ২ পঞ্চায়েত এলাকার রাধাবন, নীলমনিরামচক, ধলশ্বর, দক্ষিণ ন্যাকড়া, নীলছকুচক, দুমদান ও হাউর পঞ্চায়েত এলাকার নোরাই, আমদান, কুমরপুর, পরমহংসপুর প্রভৃতি গ্রামের অনেক পরিবার আশ্রয় নিয়েছে স্থানীয় বিদ্যালয়ে। নদীবাঁধের ভাঙা অংশ মেরামতি নিয়ে টালবাহানার পাশপাশি প্লাবিত এলাকার বাসিন্দাদের উদ্ধার ও ত্রাণ দেওয়া নিয়ে চুড়ান্ত অবহেলার অভিযোগ উঠেছে প্রশাসনের বিরুদ্ধে। পূর্ব মেদিনীপুরের অতিরিক্ত জেলাশাসক (সাধারণ) সাগর সিংহ অবশ্য দাবি করেন, “জল নামছে ওই এলাকায়। বাসিন্দাদের জন্য কয়েকটি ত্রাণশিবির খোলা হয়েছে। ত্রাণ সামগ্রী, পানীয় জল পাঠানো হয়েছে।”
ত্রাণ পেলেও তা যথেষ্ট নয় বলেই জানিয়েছেন রাধাবন বোর্ড প্রাথমিক বিদ্যালয়ে আশ্রয় নেওয়া রাধাবন, দক্ষিণ ন্যাকড়া, ধলশ্বর প্রভৃতি গ্রামের বাসিন্দারা। স্থানীয় বধূ সুমিত্রা ডাল বলেন, “বাঁধ মেরামতি না হওয়া এখনও গ্রামে জল ঢুকছে। ফলে আমাদের বাড়ি ডুবে গিয়েছে। বাধ্য হয়ে গত তিন ধরে স্কুলে আছি। যাতায়াতের নৌকা ও ত্রাণ পাচ্ছি না আমরা।”

ক্ষীরাই নদীর জল ঢুকছে পাঁশকুড়া থানার নীলমনিরামচক গ্রামে। —নিজস্ব চিত্র
ওই প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক সুভাষচন্দ্র ঘোড়ই বলেন, “বিডিওর নির্দেশে স্কুলে ত্রাণ শিবির খোলা হয়েছে। তাই স্কুল বন্ধ রাখতে হয়েছে। অধিকাংশ এলাকা জলে ডুবে থাকায় পানীয় জলের সমস্যা হচ্ছে।” বাড়ির কাছেই একটি উঁচু জায়গায় আশ্রয় নিয়েছেন দক্ষিণ ন্যাকড়া গ্রামের বাসিন্দা সনাতন সাহু। তিনি বলেন, “বৃহস্পতিবার বিকেলে আমাদের বাড়ির কিছু অংশ জলে ডুবে যাওয়ায় পরিবারের লোকজনদের নিয়ে উঁচু জায়গায় উঠেছি। এখনও জল কমার লক্ষণ দেখছি না।”
হাউরের নোরাই এলাকার বাসিন্দা তথা সদ্য নির্বাচিত পাঁশকুড়া পঞ্চায়েত সমিতির সদস্য হরিশচন্দ্র প্রামাণিক জানান, আমদান, ঘোল আমদান, নোরাই প্রভৃতি জলমগ্ন এলাকার কিছু পরিবার প্রাথমিক বিদ্যালয়ে আশ্রয় নিয়েছে। বৃহস্পতিবার প্রশাসনের তরফে একটি নৌকা ও ত্রিপল দেওয়া হয়েছে। শুক্রবার ত্রাণের চাল দেওয়া হয়েছে। চাহিদার তুলনায় ত্রাণ সামগ্রী যথেষ্ট নয় বলে জানিয়েছেন হরিশবাবুও। তিনি বলেন, “আমরা প্রশাসনের কাছে আরও নৌকা ও ত্রাণ সামগ্রী চেয়েছি।” যথেষ্ট পরিমাণ ত্রাণসামগ্রী না পাওয়ার অভিযোগ নিয়ে পাঁশকুড়ার বিডিও পূর্ণিমা দে বলেন, “যা পাওয়া গিয়েছে তা-ই এলাকায় পাঠানো হয়েছে।”

পুরনো খবর:


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.