|
|
|
|
জলাধার, সেতু তৈরির দাবি |
মাস্টার প্ল্যানে ভরসা নেই, বিকল্প ব্যবস্থা চায় ঘাটাল |
নিজস্ব সংবাদদাতা • ঘাটাল |
বন্যা আর বর্ষার ঘাটাল শব্দ দুটি যেন সমার্থক। ফি বছর ঘাটাল মহকুমায় নিয়ম করে বন্যা হয়, বানভাসি হয় ঘাটাল, চন্দ্রকোনা ১ ও ২-সহ বিস্তীর্ণ এলাকা। সহায়, সম্বল হারিয়ে নিঃস্ব হন বহু মানুষ। প্রশাসন থেকে রাজনৈতিক দলগুলির নেতাদের আশ্বাস থাকে পরের বার সমাধান হবে বন্যা সমস্যার। বছরের পর বছর আসে, কিন্তু আশ্বাস ভেসে যায় বন্যার জলের তোড়ে।
প্রতি বছর এই চেনা ছবিটায় ভুগতে ভুগতে জলমগ্ন এলাকার বাসিন্দারা বন্যা নিয়ন্ত্রণের জন্য তৈরি মাস্টার প্ল্যানের বদলে আপাতত বাঁচতে নদীর নাব্যতা বাড়ানো, একাধিক জলাধার তৈরি এবং বন্যার সময় যোগাযোগ ব্যবস্থা স্বাভাবিক রাখার জন্য ঘাটাল-চন্দ্রকোনা সড়কের উপর দু’নম্বর চাতালে (কজওয়ে) সেতু তৈরির দাবিতে সোচ্চার হয়েছেন। বেশ কিছু দিন ধরেই জলমগ্ন হয়ে রয়েছে ঘাটাল মহকুমার বিস্তীর্ণ এলাকা। বৃহস্পতিবারেও ঘাটাল শহর সংলগ্ন ঘাটাল-চন্দ্রকোনা সড়কের উপর দু’নম্বর চাতালে এবং ঘাটাল-মেদিনীপুর (ভায়া নাড়াজোল) সড়কের উপর ঝলকার চাতালে (কজওয়ে) জল উঠে যাওয়ায় যোগাযোগ ব্যবস্থা সম্পূর্ণ ভেঙে পড়েছে। |
|
অপেক্ষা...। বিনামূল্যে যাতায়াতের সুবিধা পেতে সরকারি
নৌকোর দীর্ঘ লাইন। ঘাটালে সৌমেশ্বর মণ্ডলের ছবি। |
ফলে প্লাবিত মহকুমার বাসিন্দারা এখন বন্যা নিয়ন্ত্রণে করা মাস্টার প্ল্যানের প্রতি ভরসা হারিয়ে কজওয়েগুলিতে পাকার সেতু এবং নদীগুলির নাব্যতা বাড়ানোর জন্য সরব হয়েছেন। একই দাবিতে সরব হয়েছে পশ্চিম মেদিনীপুর জেলা বন্যা-খরা প্রতিরোধ কমিটিও।
কেন বদলায় না ঘাটালের চেনা ছবিটা? জলমগ্ন এলাকাবাসীর অভিযোগ, বন্যা সমস্যার সমাধানের প্রতিশ্রুতি দিয়ে ভোটে জেতার পরে আর সমস্যা সমাধানে কোনও আগ্রহই দেখা যায় না নেতা-মন্ত্রী বা প্রশাসনের। তাই এক সময় শিলাবতী, কংসাবতী, কেঠে, ঝুমি-সহ বিভিন্ন নদীর নাব্যতা ভাল থাকলেও সংস্কারের অভাবে সেগুলির গর্ভ ভরেছে। প্রায় চার দশকের বেশি সময় ধরে সামান্য বৃষ্টিতেই জলমগ্ন হয়ে পড়ে ঘাটাল পুরসভার ১২টি ওয়ার্ড-সহ মহকুমার পাঁচটি ব্লকের শতাধিক গ্রাম। মহকুমা সদর হওয়ায় ঘাটালে নানা কাজে বিভিন্ন এলাকা প্রতিদিনই থেকে অসংখ্য মানুষকে আসতেই হয়। অথচ, যাতায়াতের জন্য এখন একমাত্র ভরসা নৌকা। তাতে সওয়ার হয়েই আসতে হচ্ছে রোগী, রোগীর পরিজন থেকে শুরু করে আসামীদের। কেননা চন্দ্রকোনা থানার কোনও আসামীকে ঘাটাল আদালতে আনতে হলেও নৌকাই ভরসা। |
|
জল সরেনি পটাশপুরে। |
ফি বছর এই চেনা দুর্ভোগে অতিষ্ঠ এলাকাবাসী। অবশ্য তাঁদের পাশে রয়েছে পশ্চিম মেদিনীপুর জেলা বন্যা-খরা প্রতিরোধ কমিটি। বৃহস্পতিবারই ওই সংগঠনের পক্ষ থেকে কলকাতায় সেচ ভবনে গিয়ে সেচ মন্ত্রী রাজীব বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে দেখাও করেন সংগঠনের পক্ষে নারায়ণ নায়েক। তিনি বলেন, “ঘাটালে মাস্টারপ্ল্যান দ্রুত যাতে হয়, তার দাবি জানিয়েছি। তবে, আপাতত নদীগুলির সংস্কার এবং একাধিক চাতালে (কজওয়ে) পাকার সেতু তৈরি ও মহকুমার একাধিক ফাঁকা এলাকায় জলাধার তৈরিও দাবি জানিয়েছি।” জলমগ্ন এলাকার বাসিন্দাদের বক্তব্য, মহকুমার জন প্রতিনিধিরা আপাতত তাঁদের এলাকার উন্নয়নের কিছু করে টাকা দিয়েও যদি দু’নম্বর চাতালে সেতু তৈরির ব্যপারে উদ্যোগী হন তা হলে সমস্যার কিছুটা সমাধান হয়। তাঁদের অভিযোগ, মহকুমার তিন জন বিধায়ক ও একজন সাংসদ থাকলেও কারোরই বন্যা পরিস্থিতির নিয়ন্ত্রণ নিয়ে কোনও হুঁস নেই। এমনকী বন্যার সময় তাঁদের দেখা মেলে না বলেও অভিযোগ মহকুমার বাসিন্দাদের। এলাকাবাসীর দাবিকে সমর্থন করে ঘাটালের তৃণমূল বিধায়ক শঙ্কর দোলই বলেন, “বিষয়টি নিয়ে মুখ্যমন্ত্রীর দৃষ্টি আকর্ষণ করেছি। বর্ষা কেটে গেলেই দু’নম্বর চাতালে সেতু তৈরির কাজ শুরু হবে।” এ দিন উপদ্রুত এলাকা ঘুরে দেখেন শঙ্করবাবু।
এ দিকে মহকুমা প্রশাসন সূত্রেই খবর, মহকুমার প্রায় ১১টি ত্রাণ শিবিরে প্রায় এক হাজার মানুষ আশ্রয় নিয়েছেন। সরকারি হিসাবে ঘাটাল ব্লক-সহ মহকুমার প্রায় ৪০০ গ্রাম জলমগ্ন। বেসরকারি মতে ওই সংখ্যাটা প্রায় ৫০০। জলমগ্ন এলাকার গ্রামবাসীরা কেউ ত্রাণ শিবিরে কেউবা নদীবাঁধে বা উঁচু কোনও জায়গায় তাঁবু খাটিয়ে দিন কাটাচ্ছেন। সঙ্কট দেখা দিয়েছে পানীয় জলেরও। বিদ্যুৎ নেই। অভাব কেরোসিন তেলেরও। ফলে মোমবাতিই ভরসা। প্রতিবেদকের পরিচয় পেয়ে ঘাটালের দেওয়ানচক ১ পঞ্চায়েতের পঞ্চানন মাঝি, হরিপদ মাইতি, দাসপুরের নাড়াজোল অঞ্চলের শম্পা দোলই, মামনি মাণ্ডিদের কথায়, “আমাদের কথা একটু লিখবেন। আমরা দিন আনি, দিন খাই। অন্তত, জল না নামা পর্যন্ত সরকারি সাহায্য পেলে প্রাণটা বাঁচে।” |
পুরনো খবর: ফুঁসছে নদী, জলমগ্ন গ্রামে ত্রাণ শিবিরের খোঁজ |
|
|
|
|
|