|
|
|
|
নির্দল প্রার্থীরা কেউ জেলে, কেউ পলাতক |
বয়ালে বোর্ড গঠনে এগোচ্ছে তৃণমূল |
নিজস্ব সংবাদদাতা • তমলুক |
পঞ্চায়েত ভোটে ফল প্রকাশের দিন তৃণমূল সাংসদ শুভেন্দু অধিকারী বলেছিলেন, “নির্দল প্রার্থীরা দলে ফিরবেন। আমরাই বোর্ড গড়ব।” বাস্তবে দেখা গেল, নির্দল প্রার্থীরা দলে না ফিরলেও নন্দীগ্রামের বয়াল-১ গ্রাম পঞ্চায়েতে বোর্ড দখলের দিকেই এগোচ্ছে তৃণমূল।
বুধবার রাতে এই পঞ্চায়েতের বিজিত তৃণমূল প্রার্থীর উপরে হামলার অভিযোগ উঠেছিল এক নির্দল জয়ী প্রার্থীর বিরুদ্ধে। কিন্তু যখন অভিযোগ দায়ের হল, তখন দেখা গেল জয়ী ৬ নির্দল প্রার্থীর মধ্যে ৫ জনেরই নাম রয়েছে এফআইআর-এ। ইতিমধ্যে এক নির্দল প্রার্থী-সহ তিন জনকে গ্রেফতারও করেছে পুলিশ। বাকিরা পলাতক। স্বাভাবিক ভাবেই ওই পঞ্চায়েতে নির্দল প্রার্থীরা সংখ্যাগরিষ্ঠ হওয়া সত্ত্বেও উজ্জ্বল হয়েছে তৃণমূলের বোর্ড গড়ার সম্ভাবনা। এ বার পূর্ব মেদিনীপুরের নন্দীগ্রাম ১ ও ২ ব্লকের মোট ১৪টি গ্রাম পঞ্চায়েতের মধ্যে ৩টিতে সংখ্যাগরিষ্ঠ আসনে জিতেছেন নির্দল প্রার্থীরা। এর মধ্যে অন্যতম বয়াল ১ গ্রাম পঞ্চায়েত। গত বার যা তৃণমূলের দখলে ছিল। এ বার বয়াল-১ পঞ্চায়েতের ১০টি আসনের মধ্যে ৪টি আসনে জিতেছে তৃণমূল ও ৬টি আসনে জিতেছেন নির্দল প্রার্থী। উত্তর বয়াল গ্রামের দু’টি আসনে জিতেছেন এলাকার তৃণমূল নেতা শেখ নাজিমুদ্দিনের ঘনিষ্ঠ হিসেবে পরিচিত নির্দল প্রার্থী ওসমান আলি ও তাঁর স্ত্রী ফিরোজা বিবি। সোমবার ভোটের ফল বের হওয়ার পরই তৃণমূল সমর্থকদের সঙ্গে ওসমানের সমর্থকদের মধ্যে বচসা বাধে। মঙ্গলবার বয়াল গ্রামের বড়বাঁধ এলাকায় দু’পক্ষের মধ্যে ধস্তাধস্তির ঘটনা ঘটেছিল। এই নিয়ে বুধবার বিকেলে নন্দীগ্রাম থানায় উভয়পক্ষকে মীমাংসা বৈঠকে ডাকা হয়।
অভিযোগ, সেই বৈঠকে যোগ দিতে যাওয়ার পথে মইনুরুদ্দিনের উপর আক্রমণ চালায় ওসমানের নেতৃত্বে একদল লোক। নন্দীগ্রাম-২ পঞ্চায়েত সমিতির বিদায়ী সভাপতি তৃণমূলের বাদল মাইতির অভিযোগ, “নির্দল পঞ্চায়েত সদস্য ওসমান আলি খানের নেতৃত্বে ৩০ জনের বেশি সশস্ত্র সিপিএম সমর্থক মইনুরুদ্দিনের উপর আক্রমণ চালায়। মইনুরুদ্দিনের মাথায় রড দিয়ে আঘাত করা ছাড়াও গলায় ভোজালির কোপ মারে মারে। রিভলবার ঠেকিয়ে প্রাণনাশের হুমকি দেয়।” যদিও ঘটনাটি সম্পূর্ণ ভাবে তৃণমূলেরই গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব বলে দাবি সিপিএমের।
গুরুতর আহত মইনুরুদ্দিনকে বুধবার রাতেই কলকাতার একটি বেসরকারি হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। অভিযোগ করা হয় ওসমান-সহ পঞ্চায়েতের ৫ নির্দল প্রার্থীর বিরুদ্ধে (মোট ৩১ জন)। এর মধ্যে মানস মাইতি নামে এক জনকে পুলিশ গ্রেফতার করেছে। বাকি ৪ জন পলাতক। ফলে পঞ্চায়েতে প্রধান পদে নির্বাচনের সময় এই পাঁচ জনের উপস্থিত থাকার সম্ভাবনা কম। সেক্ষেত্রে পঞ্চায়েতটি তৃণমূলের দখলে আসার সম্ভবনা রয়েছে। ব্লক তৃণমূল নেতা বাদল মাইতিও দাবি করেন, ‘‘আমাদের দলের বোর্ড গড়তে কোনও অসুবিধা হবে না।” তবে কি ভাবে ওই পঞ্চায়েতে তৃণমূল বোর্ড গড়বে, তা নিয়ে মন্তব্য করতে চাননি বাদলবাবু।
এ দিকে, নন্দীগ্রাম-১ ব্লকেও নির্দল প্রার্থীদের মারধর, হেনস্থা করা হচ্ছে। মঙ্গলবার রাতে শিমুলকুণ্ডু গ্রামের বাসিন্দা কিশোর গিরির বাড়িতে হামলা চালিয়ে দরজা, জানালা ভাঙচুর ও বাড়ির ভিতরে ঢুকে কয়েকভরি সোনার গয়না, পেতলের বাসনপত্র লুঠপাঠের অভিযোগ উঠেছে স্থানীয় তৃণমূলের একটি গোষ্ঠীর বিরুদ্ধে। দিল্লিতে একটি বেসরকারি সংস্থায় কর্মরত কিশোরবাবুর অভিযোগ, ‘‘আমরা তৃণমূল সমর্থক। দলের স্থানীয় কিছু নেতার দুর্নীতির প্রতিবাদে এ বার ভোটে আমার দাদা কমল গিরি নির্দল প্রার্থীর হয়ে প্রচার করেছিলেন। ভোটের ফল বের হওয়ার পর মঙ্গলবার রাত ১১টা নাগাদ এলাকারই তৃণমূলকর্মী শোভন গিরি, উত্তম সামন্ত ও গুরুপদ গিরির নেতৃত্বে প্রায় ২৫-৩০ জন আমার বাড়িতে হামলা চালায়। দাদা বাড়িতে ছিলেন না। তাঁকে না পেয়ে আমাকে শাসায় ওরা। শাবল দিয়ে বাড়ির পিছনের দিকের দরজা ভেঙে ভিতরে ঢুকে পড়ে ও কয়েক ভরি সোনার গয়না, বাসনপত্র লুঠপাট করে চলে যায়।” বুধবার রাতেও গোকুলনগর গ্রামের মাইতি পাড়ায় নির্দল প্রার্থীর সমর্থকদের বাড়িতে হামলা চালিয়ে মারধরের অভিযোগ উঠেছে স্থানীয় তৃণমূল সমর্থকদের বিরুদ্ধে। এই ঘটনায় কয়েকজন আহতও হয়েছেন। শিমুলকুন্ডু গ্রামে গোলমালের খবর স্বীকার করলেও গোকুলনগর গ্রামে নির্দল প্রার্থীর সমর্থকদের বাড়িতে হামলার অভিযোগ অস্বীকার করেছেন নন্দীগ্রাম-১ ব্লক তৃণমূল সভাপতি মেঘনাদ পাল। |
|
|
 |
|
|