|
|
|
|
ভোট মিটতেই তোড়জোড় |
রাজ্যের কাছে ৮২টি জল প্রকল্পের প্রস্তাব |
নিজস্ব সংবাদদাতা • মেদিনীপুর |
নির্বাচন মিটতেই পশ্চিম মেদিনীপুর জেলায় জলসঙ্কট মেটাতে উদ্যোগী হল প্রশাসন। জেলা প্রশাসন সূত্রে খবর, ইতিমধ্যেই ৮২টি জল প্রকল্পের প্রস্তাব রাজ্যে পাঠানো হয়েছে। সেগুলির অনুমোদন মিললেই তৈরি হবে প্রোজেক্ট রিপোর্ট। শুরু হবে কাজ। জানা গিয়েছে, সবথেকে বড় প্রকল্পের প্রস্তাব রয়েছে নয়াগ্রামের খড়িকামাথানিতে। সব মিলিয়ে প্রায় ৮০টি গ্রামে পাইপলাইনের মাধ্যমে জল সরবরাহের পরিকল্পনা করা রয়েছে। জনস্বাস্থ্য কারিগরি দফতরের মেদিনীপুর ডিভিশনের এক্সিকিউটিভ ইঞ্জিনিয়ার সুদীপ সেন বলেন, “প্রস্তাবিত প্রকল্পের কাজ শেষ হলে প্রচুর মানুষ উপকৃত হবেন।”
জানা গিয়েছে, পঞ্চায়েত নির্বাচনের জন্য জল প্রকল্পগুলির কাজের গতি শ্লথ ছিল। তবে, নির্বাচন শেষ হতে জোরকদমে কাজ শুরু হয়েছে। জনস্বাস্থ্য কারিগরি দফতরের এক আধিকারিকের কথায়, “সাধারণত নতুন প্রকল্পের প্রস্তাব নিয়ে জেলা থেকেই বারবার রাজ্যের কাছে দরবার করা হয়। কিন্তু, এ বার দেখছি উল্টো। রাজ্য থেকে বলা হচ্ছে, কোথায় কোথায় প্রকল্প হতে পারে, সে ক্ষেত্রে কী পরিকল্পনা রয়েছে, তা বিস্তারিত জানাতে। আমাদের দফতর থেকে তা জানানোও হয়েছে।”
পশ্চিম মেদিনীপুরের বিভিন্ন এলাকায় পানীয় জলের সমস্যা নতুন নয়। ফি বছর তাতে জেরবার হন বহু মানুষ। পরিস্থিতি সবথেকে খারাপ জঙ্গলমহলের উপেক্ষাকৃত উঁচু এলাকায়। কারণ, সেখানে জলস্তর ক্রমেই নীচে নামছে। সমস্যা আরও জটিল হয় গরমে। বিভিন্ন এলাকায় পানীয় জলের হাহাকার দেখা দেয়। জলের জন্য যেতে হয় বহুদূর। জেলায় বার্ষিক বৃষ্টিপাতের পরিমাণ ১ হাজার ৫৪২ মিলিমিটার। জেলার উপর দিয়েই বয়ে গিয়েছে কংসাবতী, সুবর্ণরেখা। তা-ও জল, বিশেষত পরিস্রুত পানীয় জলের জন্য মানুষ প্রবল সমস্যায় পড়েন। সম্প্রতি, পশ্চিম মেদিনীপুরের কয়েকটি এলাকায় ডায়েরিয়া ছড়ায়। সরকারি মতে, আক্রান্ত হয়েছেন প্রায় দু’শো জন। যদিও বেসরকারি মতে, আক্রান্তের সংখ্যা চারশোরও বেশি। রোগের কারণ খুঁজতে নেমে স্বাস্থ্যকর্তাদের উদ্বেগ আরও বাড়ে। কারণ, যে সব এলাকায় ডায়েরিয়ার প্রকোপ দেখা দিয়েছিল। সেখানকার জলের নমুনা পরীক্ষা করে দেখা যায়, যতগুলো এলাকা থেকে নমুনা পাঠানো হয়েছিল তার ৮০ শতাংশেরও বেশি এলাকায় জল পানের অনুপযুক্ত! জানা গিয়েছে, ১০০ মিলিলিটার জলে কোলিফর্ম ব্যাকটেরিয়ার সংখ্যা যদি ১০ বা তার বেশি হয়, তা হলেই সেই জল পানের যোগ্য নয় বলে ধরা হয়। অথচ, ওই রিপোর্ট অনুযায়ী নমুনা পরীক্ষার পর ৮০ শতাংশেরও বেশি এলাকার ১০০ মিলিলিটার জলে কোলিফর্ম ব্যাকটেরিয়ার সংখ্যা ২০০ বা তার বেশি! তা ছাড়া, জল সমস্যার সমাধানে বৃষ্টির জল ধরে রেখে প্রকল্প রূপায়ণেও উদ্যোগী হয়েছে সরকার। এ জন্য পুকুর, চেক-ড্যাম প্রভৃতি তৈরি হচ্ছে। আগে সজলধারা প্রকল্পের মাধ্যমে গ্রামে পরিস্রুত পানীয় জল সরবরাহ করা হত। এখন ওই প্রকল্প আর নেই। ফলে, আরও বেশি সংখ্যক জলাধার তৈরি করে নলবাহী পানীয় জল প্রকল্প রূপায়ণেই জোর দেওয়া হচ্ছে।
প্রশাসন সূত্রে খবর, যে ৮২টি জল প্রকল্পের প্রস্তাব রাজ্যে পাঠানো হয়েছে, তার মধ্যে ঘাটালে ৮টি, দাসপুর ১ এর ৯টি, দাসপুর ২ এর ৫টি, নয়াগ্রামের ৩টি, খড়্গপুর ২ এর ২টি প্রকল্প রয়েছে। তা ছাড়া ঝাড়গ্রাম, জামবনি, শালবনি, গোপীবল্লভপুর ২, বিনপুর ১, বিনপুর ২, গড়বেতা ২, কেশপুর প্রভৃতি এলাকারও বেশ কয়েকটি প্রকল্প রয়েছে। প্রতিটি ক্ষেত্রেই জলাধার তৈরি হবে। পাম্প চালিয়ে জলাধারে জল তোলা হবে। পরে তা পাইপ লাইনের মাধ্যমে গ্রামে গ্রামে সরবরাহ করা হবে। চিচিড়া, রাজনগর, ভিকনি নিশ্চিন্তপুর প্রভৃতি এলাকায় ইতিমধ্যে ওই প্রকল্প চালু হয়েছে। প্রশাসন সূত্রে খবর, ভিকনি নিশ্চিন্তপুরে প্রকল্পের ফলে ১২ হাজার ৮০৩ মানুষ উপকৃত হচ্ছেন। চিচিড়া প্রকল্পে ৩ হাজার ৫৩৭ জন, রাজনগর প্রকল্পের জন্য ১০ হাজার ৮৯৩ জন মানুষ উপকৃত হচ্ছেন। ওই সূত্রের দাবি, আগে জেলায় ৪১টি জল সরবরাহ প্রকল্পের অনুমোদন মিলেছিল। এর মধ্যে ৩৫টির কাজ শেষ হয়েছে। বাকিগুলোর কাজ চলছে। এ বার নতুন করে আরও ৮২টি প্রকল্পের প্রস্তাব পাঠানো হল। অবশ্য পুরো বিষয়টি পরিকল্পনাস্তরে রয়েছে। জনস্বাস্থ্য কারিগরি দফতরের এক আধিকারিকের কথায়, “বছর পাঁচেক আগেও একবার ওই এলাকায় বড় জল প্রকল্পের পরিকল্পনা করা হয়েছিল। কিন্তু দেখা যায় জলের সোর্স নেই। অর্থাৎ, প্রকল্প রূপায়িত হলেও বেশি দিন তা চলত না। পরিস্থিতি দেখে সেই সময় প্রকল্পটি আর হাতে নেওয়া হয়নি।” এ বার? ওই আধিকারিকের কথায়, “এ বারও শুরুতে জলের সোর্স দেখা হচ্ছে। পাশে সুবর্ণরেখা নদী রয়েছে। নদী থেকে কোনও ভাবে জল আনা যায় কি না, তাও খতিয়ে দেখা হচ্ছে।” |
|
|
 |
|
|