ফুঁসছে নদী, জলমগ্ন গ্রামে ত্রাণ শিবিরের খোঁজ
কের পর এক গ্রাম জলমগ্ন। গত দু’দিনে পরিস্থিতির তেমন উন্নতি হয়নি। বানভাসি এলাকার বাসিন্দারা বিনিদ্র রাত কাটাচ্ছেন। ভোটপর্ব শেষ হতে সাঁকরাইলের বিডিও সৌরভ চট্টোপাধ্যায় সিদ্ধান্ত নেন, জলমগ্ন এলাকায় যাবেন। কিন্তু যাবেন কী করে? ডুলুং যেন ফুঁসছে। চারদিকে শুধু জলের স্রোত। স্রোত আবার বিপরীত দিকে। শেষমেশ, স্পিড বোটে করে এলাকায় পৌঁছলেন বিডিও। সঙ্গে মেডিক্যাল টিম। এমন দুর্দিনে বিডিওকে কাছে পেয়ে নিজেদের সমস্যার কথা জানালেন দুর্গতরা। দাবি তুললেন ‘ফ্লাড সেন্টার’ খোলার।
মঙ্গলবার ঝাড়খণ্ডের জলাধার থেকে সুবর্ণরেখায় দেড় লক্ষ কিউসেক জল ছাড়ার ফলে পশ্চিম মেদিনীপুরের বিস্তীর্ণ এলাকায় বানভাসি পরিস্থিতির আশঙ্কা করেছিল জেলা প্রশাসন। কিন্তু, সুবর্ণরেখার জল এবং টানা বৃষ্টিতে ডুলুং নদীর জল একাকার হয়ে জেলার সাঁকরাইল ব্লকের প্রায় ৩৫ বর্গ কিলোমিটার এলাকা জলবন্দি করে ফেলল।

সাঁকরাইল পৌঁছতে স্পিডবোটই ভরসা। ছবি: দেবরাজ ঘোষ।
সাঁকরাইল ব্লকের ১৩টি গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। এর মধ্যে ডুলুং নদীর তীরবর্তী আঁধারি ও রগড়া গ্রাম পঞ্চায়েতের পাঁচটি গ্রামের সঙ্গে সাঁকরাইলের ব্লক-সদর রোহিনী ও মহকুমা সদর ঝাড়গ্রামের যোগাযোগ কার্যত বিচ্ছিন্ন হয়ে গিয়েছে। প্রশাসনের হিসেবে প্রায় হাজার চারেক মানুষ জলবন্দি হয়ে পড়েছেন। ২০০৭ ও ২০০৮ সালেও টানা বৃষ্টিতে সাঁকরাইলের আঁধারি গ্রাম পঞ্চায়েতের আস্তি, বৈঞ্চা, শালতুরিয়া, শালবনি এবং রগড়া গ্রাম পঞ্চায়েতের তেলকন্দ-সহ ওই গ্রামগুলো বানভাসি হয়েছিল। সেই সময় এলাকার মানুষ দাবি করেছিলেন, এলাকায় কয়েকটি ‘ফ্লাড সেন্টার’ খোলা হোক। কিন্তু, আজ পর্যন্ত একটিও ফ্লাড সেন্টার হয়নি। তবে পরিস্থিতি খারাপ হতে পারে আঁচ করে মঙ্গলবারই জাতীয় বিপর্যয় মোকাবিলা বাহিনী এবং রাজ্য অসামরিক প্রতিরক্ষা দফতরের উদ্ধারকারী দলকে ডেকে পাঠানো হয়।
ওই রাতেই নদিয়ার কল্যাণী থেকে জাতীয় বিপর্যয় মোকাবিলা বাহিনীর সেকেণ্ড ব্যাটালিয়নের ডেপুটি কমাণ্ড্যান্ট নারায়ণপ্রতাপ সিংহের নেতৃত্বে ৩৫ জনের দলটি সাঁকরাইলে পৌঁছয়। রাতেই অসামরিক প্রতিরক্ষা দফতরের উদ্ধারকারী দলও পৌঁছয়। সাঁকরাইল ব্লকের রগড়া অঞ্চলের বাগানসাই, আমলাদাড়ি, কাঠুয়াপালের দিক থেকে সুবর্ণরেখার জল এসে পড়ে ডুলুং নদীর সংযোগকারী বাঁশিখালে।
বুধবার সকালে ব্লক সদর রোহিণী থেকে পাঁচটি নৌকায় করে ত্রাণ সামগ্রী ওই গ্রামগুলোয় পাঠানো হয়। বিডিও গ্রামবাসীদের সঙ্গে ফোনে যোগাযোগ করেন। কথা বলেন বিএমওএইচ বাসববিজয় শীটের সঙ্গে। ঠিক হয়, দু’টি দল গড়ে সরেজমিনে গ্রামগুলো পরিদর্শন করা হবে। একটি দলে চারটে স্পিড বোট, নেতৃত্বে বিডিও। সঙ্গে বিএমওএইচ বাসববিজয় শীট, মেডিক্যাল অফিসার ঈষিতা পাত্র, ব্লক অফিসের কর্মীরা। অন্য দলে একটি স্পিড বোট।
নেতৃত্বে যুগ্ম বিডিও সুব্রত বল। বেলা দেড়টা নাগাদ বিডিও’র নেতৃত্বে প্রথম দলটি রোহিণী ঘাট থেকে রওনা হয়। তিনটে নাগাদ স্পিড বোট পৌঁছয় বৈঞ্চা গ্রামে। সেখান থেকে চারটে নাগাদ আস্তিতে। আস্তি পরিদর্শন শেষে দলটি পৌঁছয় শালবনি গ্রামে। এরপর গন্তব্য মোটর সাইকেলে চেপে কিলোমিটার খানেক দূরে শালতুরিয়া গ্রামে। শালতুরিয়া গ্রামের বাসিন্দা সিপিএমের প্রাক্তন উপপ্রধান সুনিয়া হেমব্রম এবং বর্তমান নির্বাচিত পঞ্চায়েত প্রার্থী তৃণমূলের সোনালি বাস্কেরা বলেন, সুবর্ণরেখা জল ছাড়লে আর ভারী বৃষ্টি হলে এই এলাকাগুলি প্রতি বছর বানবাসি হয়। ২০০৭ ও ০৮ সালে ভয়াবহ পরিস্থিতি হয়েছিল। এবার যদি তেমন হয় তাহলে আমরা কোথায় যাব? বিডিও আশ্বাস দেন ফ্লাড সেন্টার করার ব্যাপারে উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আলোচনা করে পদক্ষেপ করব। জয়েন্ট বিডিও’র নেতৃত্বে দ্বিতীয় দলটি বিকেল সাড়ে তিনটে নাগাদ তেলকন্দে পৌঁছয়।
পশ্চিম মেদিনীপুরের শুধু সাঁকরাইল নয়, ঘাটালের বিস্তীর্ণ এলাকা এখনও জলমগ্ন। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে নামানো হয়েছে জাতীয় বিপর্যয় মোকাবিলা বাহিনীর একটি দলকে। ওই দলের সদস্যরাই মঙ্গলবার মনসাতলা চাতালে জলের তোড়ে ভেসে যাওয়া একটি লরি ও তার চালককে উদ্ধার করেন। দাসপুরে কংসাবতী ও ঘাটালে শিলাবতী নদীর জল বিপদসীমার উপরে বইছে। মহকুমা প্রশাসন সূত্রের খবর, ঘাটাল পুরসভার ১২টি ওয়ার্ড-সহ ব্লকের ১০টি গ্রাম পঞ্চায়েতের ১৮০টি গ্রাম জলমগ্ন। দাসপুর, চন্দ্রকোনার বহু গ্রামও জলের তলায়। চূড়ান্ত ভোগান্তির মধ্যে রয়েছেন বাসিন্দারা। ঘাটালের চাউলির বৃদ্ধা আলোরানি কোলে বলেন, “বিদ্যুৎ নেই। অন্ধকারে ঘরে সাপ ঢুকছে। তার মধ্যেই রয়েছি।” ঘাটালের বিডিও দেবব্রত রায় জানিয়েছেন, প্রতিটি পঞ্চায়েত এলাকায় কন্ট্রোল রুম খোলা হয়েছে।
শুকনো খাবার এবং ত্রিপল নৌকায় করে গ্রামে পৌঁছনো হচ্ছে। দাসপুর-১ ব্লকের বিডিও রোশনি সরকার বলেন, “নন্দনপুর-২, নাড়াজোল ও রাজনগর পঞ্চায়েত এলাকার অবস্থা খুবই খারাপ। নাড়াজোল হাইস্কুল, হরিরাজপুর প্রাথমিক স্কুল-সহ চারটি জায়গায় ত্রাণ শিবির খোলা হয়েছে। ১২০টি পরিবার সেখানে আশ্রয় নিয়েছে।” তবে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে বলে জানিয়েছেন ঘাটালের মহকুমাশাসক অংশুমান অধিকারী। তাঁর বক্তব্য, “কোনও জলাধার থেকে জল ছাড়ার খবর নেই। নতুন করে বৃষ্টি না হলে ও জলাধার থেকে জল না ছাড়লে পরিস্থিতির অবনতি হবে না।”
অতিবর্ষণে কাঁসাই নদীর জলসীমা বাড়ায় পূর্ব মেদিনীপুরের পাঁশকুড়া ব্লকের রাধাবন গ্রামের কাছে ক্ষীরাই-বাক্সীর বাঁধ ভেঙে জলমগ্ন হয়ে পড়েছে বেশ কিছু গ্রাম। স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, মঙ্গলবার রাতে রাধাবন গ্রামের কাছে নদীর উত্তর দিকের বাঁধের এক জায়গায় ফাটল দেখা দেয়। গ্রামবাসীরা ওই অংশ মেরামতির চেষ্টা করেছিলেন। কিন্তু বুধবার ভোরে বাঁধের ওই অংশ ভেঙে জল ঢুকতে শুরু করে। বিকেলের মধ্যে চৈতন্যপুর ১, ২ ও হাউর পঞ্চায়েত এলাকার ১০-১২টি গ্রামের চাষের জমি-সহ নিচু এলাকা জলমগ্ন হয়ে পড়ে। বাড়িঘর ক্ষতিগ্রস্ত না হলেও রাস্তাঘাট ডুবে গিয়েছে। বীজতলা নষ্ট হয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। এলাকার বাসিন্দারা জানান, গত মে মাসে কংসাবতীর জলের চাপে ক্ষীরাই নদীবাঁধের ওই একই এলাকায় কিছু অংশ ভেঙে গিয়েছিল। এ বার ফের ওই এলাকায় নদীবাঁধ ভেঙেছে। পাঁশকুড়ার বিডিও পূর্ণিমা দে বলেন, ‘‘নদী বাঁধের ভাঙা অংশ মেরামতির জন্য প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ করা হচ্ছে।”


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.