ক্রিকেট আইপিএলের ধাঁচে প্রস্তাবিত নতুন টুর্নামেন্টে ফুটবলার ছাড়া নিয়ে ক্লাব জোটের সঙ্গে সংগঠক আইএমজি-আর বিরোধ তুঙ্গে।
এই অবস্থায় আই লিগের ক্লাবগুলির উপর ‘চাপ বাড়াতে’ এ বার ক্লাব লাইসেন্সিং নিয়ে পাল্টা চাল দিল ফেডারেশন। অন্তত কিছু ক্লাবের সেরকমই অভিযোগ।
এএফসি-র নির্ধারিত ক্লাব লাইসেন্সিংয়ের জন্য বেঁধে দেওয়া ৭৫টি শর্তের সবগুলি পূরণ করতে না পারায় আই লিগের ১৪ ক্লাবকেই ‘হলুদ কার্ড’ দেখানো হল। ফ্র্যাঞ্চাইজি লিগের সবুজ সঙ্কেত দেওয়ার চব্বিশ ঘণ্টার মধ্যেই। অথচ এই ব্যাপারটি ঝুলে আছে মাস দুয়েক ধরে। ফলে তীব্র বিতর্ক শুরু হয়েছে। ফেডারেশন কর্তারা অবশ্য এ সব তত্ত্ব মানতে নারাজ। তাদের বক্তব্য এটা এএফসি-র নিয়মে বাধ্যতামূলক।
শুক্রবার দিল্লির ফুটবল হাউসে লাইসেন্সিং কমিটির সভায় ‘ফেল’ করিয়ে দেওয়া হল ইস্টবেঙ্গল, মোহনবাগান, চার্চিল, ডেম্পো-সহ জোটের সব দলকেই। এমনকী পুণে এফ সি-কেও। নির্ধারিত নিয়মগুলির মধ্যে বেশির ভাগই পুরণ করেছে যে আই লিগ ক্লাব।
সভার পর ফেডারেশন সচিব কুশল দাস বললেন, “লাইসেন্সিং নিয়ম এএফসি বাধ্যতামূলক করেছে। সেটাই এখানে চালুর চেষ্টা হচ্ছে। এর পিছনে অন্য কোনও কারণ নেই। ক্লাবগুলিকে বাতিল করার কোনও ইচ্ছে আমাদের নেই। সবে তো কাজ শুরু হল।” তিনি জানিয়ে দেন, অ্যাপিল কমিটির কাছে ক্লাবগুলিকে সময় চেয়ে আবেদন করতে হবে ১৪ অগস্টের মধ্যে।
ক্লাবেরা আবেদন করলেই আরও এক বছর ‘শেষ বার’-এর জন্য সময় দেওয়া হবে। লাইসেন্সিং নিয়ম পূরণ করার জন্য। যদি কোনও ক্লাব তাতেও না পারে তা হলে তারা ২০১৫-১৬ মরসুমে আই লিগ বা ফেড কাপে খেলার সুযোগ পাবে না। “পেশাদার হতে গেলে লাইসেন্সিং চালু করতেই হবে। যদি কোনও ক্লাব এ ব্যাপারে ফেডারেশনের সাহায্য চায় আমরা সাহায্য করব,” বললেন কুশলবাবু।
ইস্টবেঙ্গল-সহ কিছু ক্লাব অবশ্য এই ব্যাপারটিকে বাঁকা চোখে দেখতে শুরু করেছে। তাদের ধারণা ক্লাব জোট ভাঙতেই এ সব করা হচ্ছে। জানা গিয়েছে, কলকাতায় সামনের সপ্তাহে ক্লাব জোটের সভা হবে। সভার আগেই অবশ্য তোপ দাগতে শুরু করেছে আই লিগের বিভিন্ন ক্লাব। মোহনবাগান সচিব অঞ্জন মিত্র ‘চিঠি পাওয়ার পর বলব’ বলেও বললেন, “ইউরোপে যা চলে তা এখানে সব সময় চলে না। আমরা যতটা সম্ভব শর্ত পূরণ করার চেষ্টা করেছি।” এখানে অঞ্জন থেমে গেলেও ইস্টবেঙ্গলের শীর্ষকর্তা দেবব্রত সরকার তীব্র ভাষায় আক্রমণ করেছেন ফেডারেশনকে। “ক্লাবদের বাদ দিয়ে দেশের ফুটবল চলতে পারে না। ফেডারেশন প্রেসিডেন্ট রাজনীতির লোক। মন্ত্রীও। শুনেছি মাসে দু’ঘণ্টা সময়ও দেন না। অন্যরাও তাঁর মুখাপেক্ষী। জানতে চাই কার স্বার্থে আই এম জি-র কাছে সব শর্ত বেচে দেওয়া হল? যে ভাবে আমরা ক্লাব চালিয়েছি তাতে আমাদের পুরস্কৃত করা উচিত ছিল। তা না করে ওরা লাইসেন্সিং নিয়ে জটিলতা বাড়াচ্ছেন। ওরা অ্যাডমিনিস্ট্রেশন ফি দিতে পারেন না। ফেড কাপের টাকা দেন এক বছর পর। তার মানে ফেডারেশনের আর্থিক অবস্থা খারাপ। ওদের যদি অবস্থা খারাপ হয়, তা হলে ক্লাবের আর্থিক অবস্থা ভাল হবে কী করে?”
ক্লাব জোটের প্রেসিডেন্ট সালগাওকরের রাজ গোমস অবশ্য ইস্টবেঙ্গলের মনোভাবের সঙ্গে একমত নন। তিনি এর মধ্যে ফেডারেশনের কোনও অভিসন্ধিও দেখতে পাচ্ছেন না। গোয়া থেকে ফোনে তিনি বললেন, “এখনও তো আমরা জানিই না কোন কারণে আমাদের লাইসেন্স পাস করানো হল না। আগে চিঠি পাই। দেখি কোথায় সমস্যা।”
এ দিকে ফ্রাঞ্চাইজি লিগের জন্য চুক্তিবদ্ধ নবি-নির্মলদের অনুশীলন শুরু হয়ে গেল মুম্বইয়ের কুপারেজে। হ্যালের প্রাক্তন কোচ শ্রীনিবাসনই এ দিন অনুশীলন করান ৩০ ফুটবলারকে। সুব্রত পালদের অনুশীলন করান কিপার কোচ দেবাশিস মুখোপাধ্যায়। কোচ হিসাবে ট্রেভর জেমস মর্গ্যানকে চুক্তিবদ্ধ করিয়েছেন আইএমজি-আর কর্তারা। রবিবার অস্ট্রেলিয়া থেকে মুম্বই আসছেন সদ্য প্রাক্তন ইস্টবেঙ্গল কোচ। নবি-সঞ্জু-ইসফাক-প্রদীপদের নিয়ে মর্গ্যান ভারতে অনুশীলন শুরু করবেন সোমবার থেকেই।
|
যুযুধান |
• ফেডারেশনের লাইসেন্সিং শর্ত পূরণে আই লিগের চোদ্দো ক্লাবই প্রথম দফায় ফেল।
• অ্যাপিল কমিটিতে আবেদন করলে ক্লাবগুলো এক বছরের ছাড় পাবে। নইলে ফেডারেশনের কোনও টুর্নামেন্টে খেলতে পারবে না। মোহন-ইস্টও এর আওতায়।
• ফেডারেশনের ব্যাখ্যা, লাইসেন্সিং এএফসি-র বাধ্যতামূলক। ক্লাবকে মানতেই হবে।
• ক্লাবগুলোর ধারণা, ফ্র্যাঞ্চাইজি লিগ মেনে নেওয়ার জন্য এটা তাদের উপর ফেডারেশনের পরোক্ষ চাপ। |
|