মশাল, পটকা, ক্যানেস্তারা—সব মজুত। কিন্তু পটকা ফাটাতেও ভয় করছে। ক্যানেস্তারা পিটোতে গিয়েও হাত থেমে রয়েছে ওঁদের। বিষ্ণুপুরের জঙ্গলে পটকা ফাটিয়ে, ক্যানেস্তারা পিটিয়ে যে হুলাকর্মীরা এতদিন মেলা হাতি তাড়িয়ে এসেছেন, তাঁরাই এখানে ওসব করতে দু’বার ভাবছেন।
উপায়ই বা কী! গড় পঞ্চাকোট পাহাড়ের মাথায় যে চড়ে বসেছে গজরাজ। আর কয়েকশো ফুট নীচে পাহাড়ের ঢালে কাঁচা রাস্তায় তারই অপেক্ষায় রয়েছেন জনা কয়েক হুলাকর্মী। ঝাঁকে ঝাঁকে মশা ঘিরে ধরলেও পটকা ফাটানো ঠিক হবে কি না, তাঁরা ভাবছেন। যদি সেই শব্দে কচি বাঁশ চেবানোর সময় গজরাজের মেজাজ বিগড়ে যায়! যদি হুড়মুড়িয়ে তেড়ে আসে! সমতলের জঙ্গলে তাড়া করে আসা হাতির নজর থেকে গা ঢাকা দেওয়ার কসরত জানা থাকলেও, পাহাড়ের ঢালে কি আর তা কাজে লাগবে? হাজার ফুট নিচে গড়িয়ে পড়লে কী হবে, অদৃষ্টই জানে। তাই বাঁকুড়ার জঙ্গল থেকে রঘুনাথপুরের গড়পঞ্চকোটের পাহাড়ে চলে আসা রেসিডেন্ট হাতিটির উপর বৃহস্পতিবার দিনভর নজর রাখলেন বনকর্মী ও হুলাপার্টির লোকেরা।
মঙ্গলবার ভোরে হাতিটি রঘুনাথপুরে ঢুকে পড়ে। আসার পথে সাঁতুড়ির মুরাডি, রঘুনাথপুরের ধটাড়া, নিতুড়িয়ার কচবেল গ্রামে দোকান ভেঙে, অঙ্গনওয়াড়ি কেন্দ্রের চালা উড়িয়ে দিয়ে ঠাঁই নেয় গড় পঞ্চকোট পাহাড়ের নীচের জঙ্গলে। এলাকায় হাতির উপদ্রব বিশেষ না থাকায়, তার ওই ভাঙচুরের ঘটনাতেই এলাকায় ত্রাহি ত্রাহি রব উঠেছে। ঘরের হাতিকে ফিরিয়ে নিয়ে যেতে ডেকে পাঠানো হয় বিষ্ণুপুরের হুলাকর্মীদের। কিন্তু ওঁদের তাড়া খেয়ে বাঁকুড়ার পথ ধরা দূর অস্ৎ, পথ পাল্টে দাঁতালটি বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় পাহাড়ে ওঠার কাঁচা রাস্তা ধরে। তখনই প্রমাদ গুনেছিলেন বনকর্মীরা। তাঁদেরই কেউ কেউ আশ্বাস দিয়েছইলেন, পাহাড়ের বেশি উঁচু বোধহয় হাতিটা উঠবে না। দিনের আলো ফুটলেই তাকে খেদিয়ে নামিয়ে দেওয়া হবে। সেই আশাতেই শুক্রবার ওই কাঁচা রাস্তা ধরে ১৫ জন হুলা কর্মী ও জনা দশেক স্থানীয় বনকর্মী পাহাড়ে উঠতে শুরু করেন। এক বনকর্মী বলেন, “সারা দিন খোঁজ করেও হাতিটার দেখা পাওয়া যায়নি। বিকেলের দিকে, পাহাড়ের চুড়ো যখন আর শ’দেড়েক দূরে, তখন দেখা হাতিটি এক্কেবারে পাহাড়ের মাথায় উঠে গিয়েছে।”
এর পরেই চিন্তায় পড়ে গিয়েছেন হুলাকর্মীরা। রঘুনাথপুরের রেঞ্জ অফিসার সোমনাথ চৌধুরী বলেন, “হাতিটা যে পাহাড়ের মাথায় পৌঁছে যাবে ভাবতে পারিনি। ওখানে গাছপালার স্বাদে ও মজে গেলে নামানোই তো কঠিন হয়ে পড়বে। তার উপর পাহাড়ি রাস্তায় হাতি তাড়ানোয় মোটেই সহজ কাজ নয়।” বিষ্ণপুর থেকে আসা হুলাপার্টির প্রধান নূর ইসলাম মণ্ডলও তা বুঝতে পারছেন। বলেন, “অন্ধ্রপ্রদেশ ও উত্তরবঙ্গের পাহাড়ে হাতি তাড়ানোর অভিজ্ঞতা থেকেই বুঝতে পারছি এখান থেকে হাতিকে নীচে নামানো চাট্টিখানি ব্যাপার নয়। পাহাড়ের মাথায় মানুষের যাতায়াত না থাকায় হাতিটি নিরিবিলিতেই রয়েছে। ওকে কী ভাবে নামানো যায় ভাবছি।” তবে কিছু কিছু হুলাকর্মী হাল ছাড়তে নারাজ। তাঁদের আশা, রাত নামলে হাতির মতিগতি বদলাতে পারে। হয়ত ভালো মানুষের মতো সুড়সুড় করে নেমে আসতেও পারে। আপাতত সেই আশাতেই পটকা, মশাল, ক্যানেস্তারা আঁকড়ে পাহাড়ের ঢালে অপেক্ষায় রয়েছেন হুলাকর্মীরা। |