জগৎবল্লভপুরে উলটপুরাণ, চার পঞ্চায়েতে জয়ী সিপিএম
প্রায় অন্ধকারে ডুবে যাওয়া হাওড়া জেলা সিপিএমকে আশা দেখাচ্ছে জগৎবল্লভপুর ব্লক।
এ বারের পঞ্চায়েত নির্বাচনে একদা ‘দুর্জয় দুর্গ’ হাওড়ার অলি-গলিতে যখন কাস্তে-হাতুড়ির নিশান অস্তমিত, তখনই জগৎবল্লভপুর ব্লকে চারটি গ্রাম পঞ্চায়েত নতুন করে দখল করেছে সিপিএম। এই গ্রাম পঞ্চায়েতগুলি হল বড়গাছিয়া-১, শঙ্করহাটি-১, পাতিহাল ও মাজু। এই গ্রাম পঞ্চায়েতগুলিতে ক্ষমতায় ছিল তৃণমূল, কোথাও তৃণমূল ও কংগ্রেস অলিখিত জোট। এ ছাড়াও, সিপিএম ধরে রেখেছে জগৎবল্লভপুর-২ গ্রাম পঞ্চায়েত। টানটান লড়াই হয়েছে ঘাটাল, নস্করপুর, বড়গাছিয়া-২ গ্রাম পঞ্চায়েতে। তবে, জগৎবল্লভপুর পঞ্চায়েত সমিতি অবশ্য নিজেদের দখলেই রেখেছে তৃণমূল। তারা পেয়েছে ২৬টি আসনে। সিপিএম পেয়েছে ১৪টি আসন। জগৎবল্লভপুর-১ ও শঙ্করহাটি-২ পঞ্চায়েত অবশ্য এ বার সিপিএমের থেকে ছিনিয়ে নিয়েছে তৃণমূল।
শাসক দলের ফল কেন খারাপ ফল হল এই ব্লকে?
জগৎবল্লভপুর ব্লকের তৃণমূল কর্মীদের একটি বড় অংশের অভিযোগ ব্লক সভাপতি এলাকার প্রাক্তন বিধায়ক বিমান চক্রবর্তীর বিরুদ্ধে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক তৃণমূল কর্মী জানালেন, “ব্লক সভাপতির গ্রহণযোগ্যতা নেই কর্মীদের কাছে। উনি নিজের ইচ্ছামতো দল চালান। তাই এই ফল।” ঘটনা হল, এই ব্লকের অনেক পঞ্চায়েতেই জমা পড়েছে ফাঁকা ব্যালট, বাতিল হয়েছে অনেক ভোট। যেগুলি বিক্ষুদ্ধ তৃণমূল কর্মীদের বলেই মনে করছেন ওয়াকিবহল মহলের একাংশ।
রাজ্যের অন্যান্য জায়গার মতো এই ব্লকেও এ বার লড়াইয়ে ছিলেন বেশ কিছু নির্দল প্রার্থী, যাঁরা আসলে বিক্ষুদ্ধ তৃণমূল কর্মী। তাঁদের মধ্যে জিতেছেনও অনেকে। জগৎবল্লভপুর-২ গ্রাম পঞ্চায়েতের ৬ নম্বর আসনে জয়ী নির্দল প্রার্থী ঝর্ণা ঘোষ বলেন, “মমতাদিকে শ্রদ্ধা করি। কিন্তু এই এলাকায় দলের নেতারা সিপিএম থেকে আসা লোকের কথায় দল চালান। তার প্রতিবাদ করেই প্রার্থী হয়েছি। এবং জিতে প্রমাণ করেছি এলাকার মানুষ আমাদের সঙ্গে রয়েছেন।”
ঘটনাচক্রে ঝর্ণাদেবী যে আসন থেকে জিতেছেন সেটি বিমান চক্রবর্তীর পাড়া। একই মত জগৎবল্লভপুর পঞ্চায়েত সমিতির ১৩ নম্বর আসনে নির্দল প্রার্থী হিসেবে লড়াই করা সুশান্ত (নাদু) চক্রবর্তীর। ওই আসনেই জোড়াফুল চিহ্নে লড়াই করেছিলেন বিমানবাবু। তিনি হেরেছেন। ভোট কাটাকাটির সুযোগে জিতে গিয়েছে সিপিএম প্রার্থী।
গোষ্ঠীকোন্দলের কথা মানছেন জগৎবল্লভপুরের তৃণমূল বিধায়ক আবুল কাশেম মোল্লাও। তিনি বলেন, “আমার এলাকায় সার্বিক ভাবে দলের ফল ভাল। কিন্তু কিছু জায়গায় আমাদের নিজেদের মধ্যে ঝগড়ার সুযোগে জিতে গিয়েছে সিপিএম। এ ছাড়া, গতবার আমাদের যে পঞ্চায়েতগুলি ছিল সেখানে উন্নয়নের কাজও ভাল ভাবে হয়নি। তার প্রভাবও পড়েছে। দলের ব্লক সভাপতির কাজও কিছু ক্ষেত্রে প্রভাব ফেলেছে।”
যদিও অভিযোগ মানতে রাজি নয় বিমানবাবুর অনুগামীরা। তাঁদের দাবি, বর্তমান বিধায়কই এলাকায় ‘লবি’ তৈরি করেছেন। বিমানবাবু বলেন, “টিকিট বিলি নিয়ে দলের একাংশের ক্ষোভ ছিল। প্রাথমিক ভাবে সেই কারণেই এই হার বলে মনে করা হচ্ছে। আমরা সবাইকে নিয়ে আলোচনায় বসে সমস্যা মিটিয়ে নেওয়াক চেষ্টা করছি। কিছু জায়গায় কংগ্রেস ও বিজেপি জোট বেঁধে আমাদের হারিয়েছে।” তবে, গোষ্ঠীকোন্দলে মদত দেওয়ার অভিযোগ অবশ্য মানেননি তিনি।
জগবল্লভপুরের সিপিএম নেতা তথা সিপিএমের হাওড়া জেলার ১৮ নম্বর জোনাল কমিটির সম্পাদক জাফর আহমেদের দাবি, “আমরা আরও বেশি গ্রাম পঞ্চায়েতে জিততে পারতাম। ইসলামপুর গ্রাম পঞ্চায়েতে তৃণমূলের সন্ত্রাসে আমরা কয়েকটি বুথে প্রার্থী দিতে পারিনি। বর্তমান বিধায়কের এলাকা শঙ্করহাটি-২ পঞ্চায়েতের কয়েকটি বুথ দখল করেছিল তৃণমূল। তা সত্ত্বেও যেখানে আমাদের সমর্থকেরা ভোট দিতে পেরেছেন আমরা ভাল ফল করেছি।”



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.