|
|
|
|
অসমে আটক রাজধানী |
রেল অবরোধে দুর্ভোগ উত্তরবঙ্গে |
নিজস্ব প্রতিবেদন |
পৃথক রাজ্যের দাবিতে রেল অবরোধের জেরে ট্রেন চলাচল বিপর্যস্ত হয়ে পড়ল অসমে। রেশ পড়ল লাগোয়া উত্তরবঙ্গেও।
পৃথক বড়োল্যান্ড রাজ্যের দাবিতে বৃহস্পতিবার ১২ ঘণ্টার রেল অবরোধের ডাক দিয়েছিল অল বড়ো ছাত্র সংগঠন (আবসু)। এনডিএফবি-র আলোচনাপন্থী গোষ্ঠী ও বড়োল্যান্ড আদায় যৌথ মঞ্চ ‘পিজিএসিবিএম’ সেই আন্দোলনকে সমর্থন জানায়। বড়ো-ভূমির আরও প্রায় ৫০টি সংগঠনের মিলিত প্রতিনিধিরা কোকরাঝাড় স্টেশনে ভোর ৫টা থেকে অবরোধ শুরু করেন। টেঙাপাড়া থেকে দু’কিলোমিটার রেল লাইন আটকে বসে পড়েন হাজার চল্লিশ মানুষ। বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে অবরোধকারীর সংখ্যা পঞ্চাশ হাজার ছাড়িয়ে যায়। আন্দোলনকারীদের হাতে অসমকে ‘দ্বিখণ্ডিত’ করার দাবি লেখা প্ল্যাকার্ড। মুখে, মাথায় রং দিয়ে লেখা স্লোগান।
এই অবরোধের জেরে অসম ও উত্তরবঙ্গে আটকে পড়ে বহু ট্রেন। অনেক ট্রেন বাতিল হয়। সময় বদলাতে হয় অনেক ট্রেনের। কলকাতা থেকে পদাতিক এক্সপ্রেসে শিলিগুড়ি যাওয়ার পথে আটকে পড়েন প্রাক্তন রেলমন্ত্রী তথা তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক মুকুল রায়। প্রায় দু’ঘণ্টা দেরিতে পদাতিক এক্সপ্রেস নিউ জলপাইগুড়ি (এনজেপি) পৌঁছয়। বিকেলে কোকরাঝাড়ে অবরোধ উঠলেও ট্রেন চলাচল স্বাভাবিক হতে বহু জায়গায় রাত গড়িয়ে যায়। অসম থেকে চার কোম্পানি সিআরপি দার্জিলিং পাহাড়ে পাঠানো হলেও তারাও আটকে যায়। |
|
নিউ জলপাইগুড়ি স্টেশনে আটকে পড়া যাত্রীরা। ছবি: বিশ্বরূপ বসাক। |
উত্তর-পূর্ব সীমান্ত রেল সূত্রের খবর, দিল্লিগামী রাজধানী এক্সপ্রেস বঙ্গাইগাঁও এলাকায় দাঁড়িয়ে পড়ে। গুয়াহাটি রাজধানী এক্সপ্রেসকে সকাল ১০টা থেকে কয়েক দফায় রানিনগর, নিউ জলপাইগুড়ি, ধূপগুড়ি স্টেশনে দাঁড় করিয়ে রাখা হয়। গুয়াহাটি স্টেশনে দিনভর আটকে থাকে হাওড়াগামী কামরূপ এক্সপ্রেস। গুয়াহাটি নর্থ-ইস্ট এক্সপ্রেস কিষাণগঞ্জ স্টেশন লাগোয়া এলাকায় এ দিন দীর্ঘ ক্ষণ দাঁড়িয়ে ছিল। ডিব্রুগড়গামী কামরূপ এক্সপ্রেসে অবরোধের জেরে বিকেল পর্যন্ত নিউ কোচবিহার স্টেশনেই দাঁড়িয়ে ছিল। একই ভাবে অসমগামী সরাইঘাট এক্সপ্রেস নিউ আলিপুরদুয়ার স্টেশনে, নিউ কোচবিহার স্টেশনে দাদার এক্সপ্রে, আলিপুরদুয়ার জংশনে দিল্লি থেকে অসমগামী সম্পর্কক্রান্তি এক্সপ্রেস আটকে ছিল।
যাত্রী-ভোগান্তির দৃশ্য চোখে পড়ে নিউ জলপাইগুড়ি, নিউ কোচবিহার-সহ উত্তরবঙ্গের নানা স্টেশনে। ট্রেন নির্দিষ্ট সময়ে না আসায় প্ল্যাটফর্মেই চাদর বিছিয়ে বসে পড়েন অনেকেই। সকাল সাড়ে ৯টা থেকে এনজেপি-র এক নম্বর প্ল্যাটফর্মে দাঁড়িয়ে ছিল ব্রহ্মপুত্র মেল। যাত্রী বিশ্বজিৎ গঙ্গোপাধ্যায় বলেন, “পরশু রাতে দিল্লি থেকে ট্রেনে উঠেছি। কবে পৌঁছব, জানি না।” উত্তর-পূবর্র্ সীমান্ত রেলের মুখ্য জনসংযোগ আধিকারিক সুব্রত হাজং বলেন, “যাত্রীদের সব রকম পরিষেবা দেওয়ার চেষ্টা করেছি।” পূর্ব রেল সূত্রে জানা গিয়েছে, যে ট্রেনগুলি এ দিন ১২ ঘণ্টা ধরে আটকে ছিল, সেগুলি হাওড়া বা শিয়ালদহে সময়ে না ফিরলে ফিরতি পথে ছাড়তে ফের দেরি হতে পারে। সে ক্ষেত্রে একাধিক ট্রেনের সময়সূচির সামান্য হেরফের হতে পারে।
আবসু সভাপতি প্রমোদ বড়ো দুর্ভোগে পড়া ট্রেনযাত্রীদের কাছে ক্ষমা চেয়ে নেন। তাঁর বক্তব্য, “এটা আমাদের প্রথম পদক্ষেপ। ৫ অগস্ট থেকে আমরা ৬০ ঘণ্টা অসম বন্ধের ডাক দিয়েছি। এর পর হবে হাজার ঘণ্টার অর্থনৈতিক অবরোধ। আমাদের দাবি আর এড়িয়ে যাওয়া চলবে না।” এনডিএফবি-র সভাপতি ধীরেন বড়ো নিজেও অবরোধে অংশ নেন। তিনি বলেন, “২০০৫ থেকে শান্তির আশায়, পৃথক রাজ্যের আশায় সংঘর্ষ বিরতি চালাচ্ছি। এ বার আমাদের দাবি আদায় করে নেওয়ার সময় এসেছে।” |
|
|
|
|
|