পাঁচ মাস আগে ইংরেজবাজার বিধানসভা কেন্দ্রের উপনির্বাচনেই অশনি সঙ্কেত ছিল। প্রয়াত বরকত গনি খানের খাস তালুকে পঞ্চায়েত ভোটের ফলও আশানুরূপ হয়নি। এর পরে মালদহে জেলা পরিষদ গঠনে স্পষ্ট অবস্থান নিতে আবু হাসেম (ডালু) খান চৌধুরীদের টালবাহানায় ক্ষুব্ধ প্রদেশ কংগ্রেসের বড় অংশ।
দুই ত্রিশঙ্কু জেলা পরিষদ উত্তর দিনাজপুর ও মালদহের ব্যাপারে সবিস্তার আলোচনার জন্য কাল, শনিবার প্রদেশ কংগ্রেস দফতরে বৈঠক ডাকা হয়েছে। দুই জেলার কংগ্রেস নেতৃত্বেরই সেখানে থাকার কথা। প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি প্রদীপ ভট্টাচার্য-সহ দলের রাজ্য নেতৃত্বের আনুষ্ঠানিক বক্তব্য, জেলার কর্মীদের মনোভাব মাথায় রেখে, জেলার নেতৃত্বের মত নিয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। কথা বলা হবে এআইসিসি-র সঙ্গেও। কিন্তু উত্তর দিনাজপুরে দীপা দাশমুন্সির কংগ্রেস ইতিমধ্যেই তাদের অবস্থান স্পষ্ট করে দিয়ে জানিয়েছে, তারা বিরোধী আসনেই বসবে। যা এখনও করে উঠতে পারেনি মালদহে ডালুবাবুদের কংগ্রেস। অথচ সেখানে জেলা সভাধিপতি পদের জন্য প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার কথা বলে সমস্যার সমাধান করে ফেলা সম্ভব বলে প্রদেশ কংগ্রেস নেতৃত্বের বড় অংশ মনে করছেন।
মালদহে কংগ্রেস ও বামফ্রন্ট, দু’পক্ষই ১৬টি করে আসন পেয়েছে জেলা পরিষদে। তৃণমূল পেয়েছে ৬টি। তৃণমূল না বাম, কাদের সমর্থন নিয়ে জেলা পরিষদ গড়া হবে তা-ই নিয়ে চার ঘণ্টা বৈঠক করেও কোনও সূত্র বার করতে পারেনি জেলা কংগ্রেস! জেলা সভাপতি ডালুবাবু তৃণমূল ও বাম, দু’দিকের দরজাই খোলা রাখার কথা বলেছেন। প্রয়োজনে তৃণমূল নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে দেখা করার কথাও বলে রেখেছেন। প্রদেশ কংগ্রেস নেতৃত্বের বড় অংশই কিন্তু মনে করছেন, এত কিছুর দরকার ছিল না। তাঁদের যুক্তি, কংগ্রেস মালদহে জেলা পরিষদের সভাধিপতির জন্য প্রতিদ্বন্দ্বিতা করুক। বামফ্রন্টও প্রার্থী দেবে বলেই প্রত্যাশিত। তখন তৃণমূলকে বরং চাপে ফেলা যাবে। প্রদেশ কংগ্রেসের এক নেতার কথায়, “মালদহে পুরো আলোচনাটা চলছে কার সমর্থন নেওয়া হবে, তা-ই নিয়ে। কিন্তু আমাদের তো কারও সমর্থন চাইতে যাওয়ার দরকার নেই! কংগ্রেসকে বোর্ড গড়ার জন্য তৃণমূল যদি ভোট দিয়ে সমর্থন করে, তখন বলা যাবে আমরা তো চাইনি। আর যদি তারা ভোটে বিরত থাকে, তখন বলতে পারব, বামফ্রন্টকে সুবিধা করে দেওয়ার জন্য তৃণমূল এল না কংগ্রেসের দিকে।”
প্রশ্নের মুখে পড়ে ডালুবাবু-সহ মালদহ জেলা কংগ্রেস নেতৃত্বও বলছেন, প্রদেশ নেতৃত্বের সঙ্গে কথা বলেই চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। কোনও কারণে সভাধিপতি পদ বামেদের দিকে গেলেও স্থায়ী কমিটিতে অবশ্য কংগ্রেসেরই পাল্লা ভারী থাকবে। ডালুবাবু যেমন কেন্দ্রীয় মন্ত্রী হওয়ায় ভোট দিতে পারবেন না, তেমনই তৃণমূলের দুই বিধায়কই মন্ত্রী হওয়ায় ভোটাধিকার পাবেন না। কিন্তু জেলায় কংগ্রেসের ৭ বিধায়ক এবং আরও এক সাংসদ ভোট দিতে পারবেন। জেলা পরিষদের কর্মাধ্যক্ষ পদ পেতেও কংগ্রেস বড় দাবিদার থাকবে। তৃণমূল যত শক্তি বাড়াচ্ছে, ভোট কাটাকাটিতে আবার ফায়দা
তুলে নিচ্ছে বামেরা। এমনকী, জোট না হলে ডালুবাবু বা মৌসম বেনজির নূরের লোকসভা আসনও খুব নিরাপদ নয়। পরিস্থিতি বুঝে ডালুবাবু তৃণমূলের দরজা খুলে রাখার চেষ্টা করছেন বলেই দলের একাংশের ধারণা। যা নিয়ে গনি পরিবারের মধ্যেই ভিন্ন মত আছে। স্বভাবতই গভীর হচ্ছে সঙ্কট!
|