কেন্দ্রীয় রেল প্রতিমন্ত্রী অধীর চৌধুরীর খাস তালুক মুর্শিদাবাদে শাসকদলের একপ্রকার সলিলসমাধিই হয়েছে। জেলায় থমকে গিয়েছে ঘাসফুলের জয়যাত্রা। মাত্র ৬টি গ্রাম পঞ্চায়েত গিয়েছে শাসকদলের দখলে। মিলেছে গুটিকতক পঞ্চায়েত সমিতি। সাকুল্যে ১টি জেলা পরিষদের আসন পেয়েছে তৃণমূল। শাসকদল জেলায় যে অকিঞ্চিৎকর প্রভাব ফেলতে পেরেছে তার বেশিটাই সাগরদিঘি এলাকায়।
রাজ্যের খাদ্য প্রক্রিয়াকরণ মন্ত্রী সুব্রত সাহার এলাকা সাগরদিঘিতে ১১টি গ্রাম পঞ্চায়েতের মধ্যে এককভাবে তিনটির দখল নিয়েছে। বোখরা-১, সাগরদিঘি ও বন্যেশ্বর গ্রাম পঞ্চায়েতে জয় নিশ্চিত করেছে শাসকদল। বন্যেশ্বর গ্রাম পঞ্চায়েত বরাবরই সিপিএমের শক্ত ঘাঁটি বলে পরিচিত। সেখানে বাম-কংগ্রেসকে উড়িয়ে দিয়ে ১৮টি আসনের মধ্যে ১১টি পেয়েছে তৃণমূল। সাগরদিঘির বাড়ালা পঞ্চায়েতও ‘লাল-গড়’ বলে পরিচিত। সেখানে ১৮টি আসনের মধ্যে ৭টি গেছে শাসকদলের ঝুলিতে। এই পঞ্চায়েতে তৃণমূল বোর্ড গড়তে না পারলেও সিপিএমের দুর্গে চিড় ধরাতে পারাটাই একটা অসাধ্য সাধন বলে মানছেন এলাকাবাসীরা। অতীতে কংগ্রেস চেষ্টার কোনও কসুর না করেও বাড়ালা পঞ্চায়েতে দাঁত ফোটাতে পারেনি। ব্লকের ৪টি গ্রাম পঞ্চায়েতে ত্রিশঙ্কু হয়ে আছে। ওই পঞ্চায়েতগুলির কয়েকটিতে তৃণমূল একক বৃহত্তম দল। ফলে জোড়াতালি দিয়ে ওই পঞ্চায়েতগুলিতে শাসকদলের বোর্ড গঠনের সম্ভাবনা রয়েছে। পঞ্চায়েত সমিতির ৩৩টি আসনের মধ্যে ১৬টিতে ঘাসফুল ফুটেছে। ব্লকের ৩টি জেলা পরিষদের আসনের মধ্যে ১টি জয়ী হয়েছে তৃণমূল। জেলার প্রায় সর্বত্র, এমনকী কংগ্রেস ছেড়ে বেরিয়ে আসা প্রাক্তন মন্ত্রী হুমায়ুন কবীরের এলাকাতেও ঘাসফুল মুখ থুবড়ে পড়েছে। কিন্তু কোন জাদুবলে শাসকদল মাথা তুলে দাঁড়ালো সাগরদিঘিতে? কংগ্রেসের জেলা সম্পাদক আমিনুল ইসলাম বলেন, “পুলিশি প্রহরায় মন্ত্রী সুব্রত সাহা ভোটের আগে এলাকা চষে বেরিয়ে লাগাতার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। মানুষ তাঁর প্রতিশ্রুতিতে ভরসা রেখে শাসকদলের দিকে ঝুঁকেছে। তাছাড়া বহু জায়গায় পুলিশ তৃণমূলের হয়ে ভোট করেছে।” অন্য দিকে সিপিএম শাসকদলের উত্থানের পিছনে পঞ্চায়েত সমিতি চালানোয় নিজেদের ব্যর্থতাকেই দায়ী করছে। আত্মসমালোচনার ঢংয়ে সিপিএমের জেলা কমিটির সদস্য জ্যোতিরূপ বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, “আমাদের পঞ্চায়েত সমিতি চালানোর ব্যর্থতার বিরুদ্ধে মানুষ শাসকদলের উপর ভরসা রেখেছে। ভোটাররা ভেবেছেন রাজ্যের মন্ত্রী সুব্রতবাবু উন্নয়ন করবেন। তাছাড়া ভোটের আগে জনসংযোগ বাড়ানোর জন্য এলাকায় মন্ত্রীর ঘন ঘন আনাগোনাও তৃণমূলের ভাল ফলের পিছনে কাজ করেছে।” আর ভাল ফলে তৃপ্ত সুব্রতবাবু বলছেন, “এই দু’বছরে এলাকার প্রতিটি গ্রামে গিয়েছি। মানুষ সহজেই আমার নাগাল পান। আমাকে চেনেন, জানেন। এটাই সাফল্যের পাটিগণিত।” |