রাজ্যজুড়ে সদ্যসমাপ্ত পঞ্চায়েত ভোটে শাসকদলের জয়জয়কার হলেও নদিয়া জেলায় বামেরা বেশ ভাল ফল করেছে। হাড্ডাহাড্ডি লড়াই হয়েছে শাসক-বিরোধীদের। কিন্তু জেলার তেহট্ট মহকুমায় বিরোধীদের দাপটে পায়ের তলায় কার্যত মাটি খুঁইয়েছে সবুজ শিবির। গত বিধানসভার মতো গ্রাম পঞ্চায়েতেও ভোটেও একই পথে হাটল তেহট্ট। ২০১১ সালের পরিবর্তনের ঝড়ে জেলায় খড়কুটোর মতো উড়ে গিয়েছিল বামেরা। জেলার ১৭টি বিধানসভার মধ্যে মাত্র তিনটি গিয়েছিল তাদের ঝুলিতে। আর তিনটি আসনই এসেছিল তেহট্ট থেকে। এ বারের পঞ্চায়েত নির্বাচনেও সেখানে লালদুর্গ থাকল অটুট।
মহকুমার মোট ৩৬টি গ্রাম পঞ্চায়েতের মধ্যে ১৭টিতে জিতেছে বামফ্রন্ট। ত্রিশঙ্কুর জট কেটে আরও বেশ কয়েকটি পঞ্চায়েত করায়ত্ত করার ব্যাপারে আশাবাদী বাম নেতৃত্ব। চারটি পঞ্চায়েত সমিতির মধ্যে তিনটির দখল নিয়েছে বামফ্রন্ট। বামেদের সবথেকে নজরকাড়া ফল হয়েছে জেলা পরিষদে। মহকুমার মোট ১১টি জেলা পরিষদের আসনের সবকটিতেই জিতেছে তারা।
অথচ গতবারের চিত্রটা কিন্তু বামেদের পক্ষে খুব একটা স্বস্তিদায়ক ছিল না। ২০০৮ সালের পঞ্চায়েত ভোটে তেহট্টের ৩৬টি গ্রাম পঞ্চায়েতের মধ্যে হাতেগোনা দু’একটি ছাড়া বাকি সবগুলির দখল নিয়েছিল বামবিরোধী জোট। চারটে পঞ্চায়েত সমিতির কোনটিরই দখল নিতে পারেনি বামেরা। জেলা পরিষদের ন’টি আসনের মধ্যে একটি পেয়েছিল কংগ্রেস। বাকি আটটি অবশ্য বামফ্রন্ট পেয়েছিল। |
রাজ্যময় এই পরিবর্তনের বাজারে মহকুমায় বামেদের নজরকাড়া ফলের রহস্যটা কী?
বাম নেতাদের কথায়, গত নির্বাচনে তেহট্টের বেশিরভাগ গ্রাম পঞ্চায়েত পেয়েছিল বামবিরোধী জোট। গত পাঁচ বছরে সেই পঞ্চায়েতগুলোর কাজে সাধারণ মানুষ তিতিবিরক্ত। এরই মধ্যে বামফ্রন্ট জনসংযোগ বাড়ানোর পাশাপাশি নির্বাচনে প্রার্থী বাছাইয়ে নতুন মুখকে গুরুত্ব দেওয়া থেকে শুরু করে পুরনো ভুল শুধরে নেওয়া সবই করেছে। ঘুরে দাঁড়ানোর ক্ষেত্রে বিধানসভা নির্বাচনে মহকুমার তিনটি বিধানসভা কেন্দ্রে জয়ও অনেকটা খুঁটির কাজ করেছে।
অন্যদিকে তৃণমূল ও কংগ্রেসের জোট না হওয়া এবং উভয় দলেরই গোষ্ঠীবিবাদ তাদের বাড়তি অক্সিজেন জুগিয়েছে বলেই মনে করেন জেলার বাম নেতারা। তেহট্টে জেলা পরিষদের কোনও আসনেই শাসকদল দাঁত ফোটাতে না পারলেও নদিয়া জেলা পরিষদের দখল অবশ্য শাসকদলই নিয়েছে। জেলা পরিষদের ৪৭ টি আসনের মধ্যে তৃণমূল পেয়েছে ২৫ টি বামফ্রন্ট ও কংগ্রেস পেয়েছে যথাক্রমে ২১ টি ও ১ টি আসন।
সিপিএমের জেলা সম্পাদক সুমিত দে অবশ্য বলছেন, ‘‘সংখ্যার বিচারে যাই হোক না কেন নৈতিকভাবে তৃণমূল জেলা পরিষদে হেরেছে। বেশ কিছু জেলা পরিষদের আসন জেতার জন্য শাসকদল প্রশাসনের সাহায্যে সন্ত্রাস চালিয়েছে। তা নাহলে জেলা পরিষদ আমরাই পেতাম।’’
কিন্তু রাজ্যজুড়ে মসৃণ জয়ের পরেও শাসকদলকে সীমান্তের এই প্রান্তিক জনপদে এমন নাকানিচোবানি খেতে হল কেন? তৃণমূলের জেলা সভাপতি গৌরীশঙ্কর দত্ত বলছেন, ‘‘তেহট্টের চারটি ব্লককে নিয়েই আমরা বসব। মহকুমা জুড়ে তৃণমূলের এমন হাল হল কেন তার ময়নাতদন্ত করা হবে। তারপর সাংগঠনিকভাবে যাবতীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে। |