কুপিয়ে খুন করেই ক্ষান্ত হয়নি আততায়ীরা। বিএ দ্বিতীয় বর্ষের, বছর কুড়ির ওই ছাত্রীর দেহটি বিছানার সঙ্গে এমন ভাবে গুটিয়ে ঘরের কোণায় রেখে দিয়েছিল তারা যে প্রাথমিক ভাবে পুলিশ তাঁকে খুঁজেই পায়নি। নদিয়ার বগুলায় ওই ছাত্রী খুনের পাশাপশি দুষ্কৃতীরা কুপিয়ে ক্ষতবিক্ষত করে গিয়েছে ওই বাড়ির কর্ত্রীকেও। মধ্য চল্লিশের ওই মহিলাকে আশঙ্কাজনক অবস্থায় বৃহস্পতিবার সকালে ভর্তি করা হয়েছে শক্তিনগর জেলা হাসপাতালে। এ দিন রাতে তাঁকে কলকাতার এনআরএস হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে। নিহত ওই ছাত্রীর ময়নাতদন্তও কলকাতার ওই সরকারি হাসপাতালে হবে বলে জানা গিয়েছে।
ওই বাড়ির পরিচারিকা এবং প্রতিবেশীদের দাবি ওই কলেজ পড়ুয়াকে খুনের আগে ধর্ষণ করা হয়েছিল। বাড়ির কর্ত্রীকেও শারীরিক অত্যাচার করা হয়েছে বলে দাবি স্থানীয় বাসিন্দাদের। নদিয়ার পুলিশ সুপার সব্যসাচীরমণ মিশ্র অবশ্য বলেন, “ময়না-তদন্তের রিপোর্ট না পওয়া পর্যন্ত ধর্ষণ করা হয়েছিল কিনা তা বলা সম্ভব নয়। প্রাথমিক তদন্তে অনুমান, ব্যক্তিগত কোনও রোষ থেকেই এই খুন। এর সঙ্গে রাজনীতির কোনও সম্পর্ক নেই।” |
স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, হাঁসখালির বগুলার বাসিন্দা ওই মাঝ বয়সী মহিলা স্থানীয় একটি কলেজে শিক্ষাকর্মী। সিপিএমের সক্রিয় কর্মী বলেও এলাকায় তাঁর পরিচিতি রয়েছে। এক সময়ে দলের বগুলা লোকাল কমিটির সদস্যও ছিলেন। তবে বছর দুয়েক ধরে দলের সদস্য পদ আর পুনর্নবীকরণ করাননি বলে জানা গিয়েছে। অবিবাহিত ওই মহিলা বাবা-মা মারা যাওয়ার পরে বাড়িতে একাই থাকতেন। কিছু দিন ধরে রাতে অবশ্য তাঁর কাছে শুতে আসত বাড়ির পরিচারিকার মেয়ে, ওই ছাত্রীটি। সাত সকালে ওই পরিচারিকা কাজে এলেই মেয়েটি ফিরে যেত বাড়িতে।
বুধবারও তার ব্যতিক্রম হয়নি। রাতে শুতে এসেছিল ওই ছাত্রী। এ দিন সকালে ওই পরিচারিকা এসে দেখেন শৌচাগারের নল দিয়ে মৃদু ধারায় রক্ত বেরিয়ে আসছে। প্রথমটায় তিনি তত আমল দেননি। কিন্তু সন্দেহ হওয়ায় দরজা ধাক্কা দিয়ে মেয়ের নাম ধরে ডাকাডাকি শুরু করেন তিনি। বেশ কিছুক্ষণ ধরে ধাক্কা ধাক্কি সত্ত্বেও দরজা না খোলায় পাড়া-পড়শিদের ডাকেন ওই পরিচারিকা। আর তখনই নজরে পড়ে এক তলা বাড়ির ছাদের দরজাটা খোলা। পাড়ার ছেলেরাই পাঁচিল টপকে ছাদে উঠে ওই খোলা দরজা দিয়ে নীচে নেমে দেখেন শৌচাগার থেকে গোঙানির শব্দ আসছে। ভেজানো দরজা ঠেলতেই দেখা যায় বাড়ির কর্ত্রী রক্তাক্ত অবস্থায় পড়ে রয়েছেন।
খবর দেওয়া হয় হাঁসখালি থানায়। পুলিশ এসে ওই মহিলাকে নিয়েই ব্যস্ত হয়ে পড়ে। ওই ছাত্রীটির খোঁজই পাওয়া যাচ্ছিল না। আচমকা নজরে পড়ে ঘরের কোণায় রাখা বিছানার পুঁটলি থেকে একটি হাত বেরিয়ে আছে। তা খুলতেই বেরিয়ে পড়ে ওই ছাত্রীর দেহ। নিহত ছাত্রী এবং বাড়ির কর্ত্রীর অবিন্যস্ত পোশাক দেখে পড়শিদের অনুমান আঘাত করার আগে তাঁদের ধর্ষণ করা হয়েছে।
কিন্তু কেন? নিহত ছাত্রীর পরিবার সূত্রে জানা গিয়েছে, মেয়েটির সঙ্গে পাশের গ্রামের এক যুবকের সম্পর্ক ছিল। নিহতের মা বলেন, “আমি বহু বার ওই ছেলেটার সঙ্গে সম্পর্ক রাখতে বারণ করেছিলাম। দিন কয়েক আগে মেয়েও জানিয়েছিল, ওই সম্পর্ক সে আর রাখবে না। তার জেরেই কি এমন হল?” পুলিশ ওই যুবকের খোঁজ করছে। এ ব্যাপারে অন্য কেউ জড়িতে কিনা খতিয়ে দেখা হচ্ছে তাও।
খুনি কে? সে ব্যাপারে নিশ্চিত না হলেও পুলিশের এক কর্তা অবশ্য জানান, খুনিরা একা ছিল না। তিনি বলেন, “প্রবল আক্রোশ থেকে খুন করা হয়েছে, এটা স্পষ্ট। এবং অনেকে মিলেই এ কাজ করেছে।” এই খুনের প্রতিবাদে, এ দিন দুপুর থেকে বগুলা শ্রীকৃষ্ণ কলেজের সামনে বগুলা-কৃষ্ণনগর রাজ্য সড়ক অবরোধ করেন স্থানীয় বাসিন্দারা। |