এগারো বছরের এক বালিকাকে ধর্ষণের চেষ্টার পরে কেরোসিন তেল ঢেলে তার গায়ে আগুন লাগিয়ে দেওয়ার ঘটনার ২৪ ঘণ্টা পরেও মূল অভিযুক্তকে গ্রেফতার করতে পারেনি পুলিশ। শরীরের প্রায় ৭০ শতাংশ পুড়ে যাওয়া ওই বালিকা এখন হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। চিকিৎসকেরা জানিয়েছেন, তার অবস্থা আশঙ্কাজনক।
পুলিশ জানায়, বুধবার সন্ধ্যা সাড়ে ছ’টা নাগাদ সালকিয়ার টিকিয়াপাড়া কারশেডের কাছে শৌচকর্মে গিয়ে এক দুষ্কৃতীর হাতে আক্রান্ত হয় ওই বালিকা। পুলিশের প্রাথমিক তদন্তে জানা গিয়েছে, চতুর্থ শ্রেণির ওই ছাত্রীকে এলাকার পরিচিত এক দুষ্কৃতী মুখ চেপে ধরে ঝোপঝাড়ের মধ্যে টেনে নিয়ে গিয়ে ধর্ষণের চেষ্টা করে। বালিকাটি দুষ্কৃতীকে চিনতে পেরে বাড়ির লোককে সব বলে দেওয়ার ভয় দেখায়। ধরা পড়ার ভয়েই তখন ওই দুষ্কৃতী কিশোরীর গায়ে কেরোসিন ঢেলে আগুন লাগিয়ে দেয় বলে পুলিশের তদন্তকারী অফিসারদের অনুমান। আগুন লাগা অবস্থায় ওই বালিকা চিৎকার করতে করতে বাড়ির দিকে ছুটতে শুরু করে। কিছুটা ছুটে এসে রাস্তার পাশে জমে থাকা বৃষ্টির জলের মধ্যে শুয়ে পড়ে সে। তাকে ওই অবস্থায় দেখতে পেয়ে প্রথমে এক মহিলা ছুটে আসেন। এর পরে বাড়ির লোকজন তাকে প্রথমে হাওড়া জেলা হাসপাতালে নিয়ে গিয়ে ভর্তি করান। রাতেই আশঙ্কাজনক অবস্থায় তাকে এসএসকেএম হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়।
ঘটনার তদন্তে নেমে পুলিশ কারশেডের পাঁচিলের পাশে একটা ঝোপ থেকে একটি বোতল উদ্ধার করেছে। পুলিশের ধারণা, ওই বোতলে করে কেরোসিন আনা হয়েছিল। কিন্তু প্রশ্ন হল, ওই দুষ্কৃতী কি আগে থেকেই ওই জায়গায় কেরোসিন এনে রেখেছিল? এনে রাখলে কেন তা রেখেছিল? তা হলে কি কিশোরীকে ওই দুষ্কৃতী আগে থেকেই খুনের পরিকল্পনা করেছিল এবং তার জন্য ওই জলাজমিতে কেরোসিন মজুত করে রেখেছিল? তদন্তকারীরা এখনও এ সমস্ত প্রশ্নের উত্তর খুঁজে পাননি। তদন্তকারীদের দাবি, অভিযুক্ত ওই যুবক ধরা না পড়া পর্যন্ত এর প্রকৃত উত্তর পাওয়া যাবে না।
বৃহস্পতিবার হাওড়া সিটি পুলিশের ডিসি (সদর) নিশাত পারভেজ বলেন, “মেয়েটির বাড়ির লোকজনের অভিযোগ পেয়ে ওই রাতেই দুই যুবককে আটক করা হয়েছে। এই ঘটনায় মূল অভিযুক্ত কুন্দন মল্লিক নামে এলাকার এক দুষ্কৃতীকে খোঁজা হচ্ছে। ওই যুবকের নামে ধর্ষণের চেষ্টা ও আগুন লাগিয়ে খুনের চেষ্টার অভিযোগ দায়ের করা হয়েছে।”
সালকিয়ার তিনকড়িনাথ বসু লেনে যে জায়গায় ঘটনাটি ঘটেছে, সেটি টিকিয়াপাড়া কারশেডের পাঁচিলের পাশে আগাছার জঙ্গলে ভরা কয়েক বিঘের একটা নিচু জলা জমি। বৃষ্টির জল জমে রয়েছে চারপাশে। রেলের ওই জমির পাশেই গড়ে উঠেছে ৭০-৮০টি ঘরের বস্তি। ওই বস্তিতেই টালির চালের একটি ঘরে বাবা-মার সঙ্গে থাকে ওই বালিকা।
স্থানীয় বাসিন্দাদের অভিযোগ, গোটা এলাকা জুড়ে চলছে জুয়া আর সাট্টার ঠেক। অবাধে বিক্রি হচ্ছে গাঁজা, চোলাই মদ। সীমা দলুই নামে এক মহিলার অভিযোগ, “এই এলাকায় বিভিন্ন ধরনের অপকর্ম শুরু হয়েছে। মহিলাদের প্রায়ই নানা ভাবে উত্ত্যক্ত করে ওই দুষ্কৃতীরা। দিনের বেলাতেও ওই রাস্তা দিয়ে যাতায়াত করা যায় না।”
বুধবারের ঘটনার পর এ দিন বিকেলে ঘটনাস্থলে যান মধ্য হাওড়ার বিধায়ক ও রাজ্যের কৃষি বিপণন মন্ত্রী অরূপ রায়। বাসিন্দারা তাঁর কাছে এলাকার দুষ্কৃতী-রাজ নিয়ে অভিযোগ জানিয়েছেন। মন্ত্রী তাঁদের বলেন, “এ ব্যাপারে কড়া ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”
|