সকাল সওয়া সাতটা। প্রায় ফাঁকা একটি রাস্তায় ঊর্ধ্বশ্বাসে সাইকেল চালাচ্ছে এক যুবক। পিছনে পিছনে ছুটছেন বছর উনিশের এক তরুণী। চিৎকার করছেন, ‘‘ওকে ধরুন! ওকে ধরুন!’’
প্রায় ৩০০ মিটার রাস্তা এ ভাবে ওই যুবককে তাড়া করে ছুটলেন সেই তরুণী। তাঁর চিৎকারে এলাকার কয়েক জন ছুটে এসে ধরে ফেললেন সাইকেল আরোহীকে। তরুণী তাঁদের জানালেন, নির্জন রাস্তায় তাঁর শ্লীলতাহানির চেষ্টা করেছিল ওই যুবক।
ঘটনাস্থল: বালির শান্তিরাম রাস্তা। কলেজপড়ুয়া ওই তরুণীর সাহসিকতায় বৃহস্পতিবার সকালে হাতেনাতে ধরা পড়ে যায় বছর বাইশের ওই যুবক। পরে পুলিশ তাকে গ্রেফতার করে বালি থানায় নিয়ে যায়। ধৃত অরিন্দম মাকালের বিরুদ্ধে রাস্তা আটকে শ্লীলতাহানির মামলা দায়ের করা হয়েছে। এ দিন হাওড়া আদালতে তোলা হলে চার দিনের পুলিশি হেফাজতের নির্দেশ দেন বিচারক।
কী ঘটেছিল? পুলিশ জানায়, বালির রামনবমীতলা এলাকার বাসিন্দা ওই তরুণী হুগলির একটি কলেজের প্রথম বর্ষের ছাত্রী। প্রতি মঙ্গল ও বৃহস্পতিবার তিনি বালির শান্তিরাম রাস্তায় পড়তে যান। এ দিনও সকাল সাতটা নাগাদ বাড়ি থেকে বেরিয়ে সেখানেই যাচ্ছিলেন তিনি। ওই তরুণী জানান, ফাঁকা গলি দিয়ে যাওয়ার সময়ে ওই সাইকেল আরোহী তাঁকে পাশ কাটিয়ে ওই শিক্ষকের বাড়ির দিকে চলে যায়। তিনি বলেন, “ব্যাগ কাঁধে ওই যুবককে দেখে ভেবেছিলাম ব্যাচে নতুন ছাত্র ভর্তি হয়েছে।” |
কিন্তু কিছুক্ষণের মধ্যেই ওই তরুণীর ভুল ভেঙে যায়। তিনি দেখেন, গলির শেষ প্রান্ত থেকে সাইকেল ঘুরিয়ে যুবকটি তাঁর দিকেই আসছে। তা দেখে তিনি রাস্তার এক পাশে সরে দাঁড়ান। তরুণীর অভিযোগ, তাঁর কাছে এসে সাইকেল থামিয়ে যুবকটি তার হাত ও জামা ধরে টানাটানি করতে থাকে। আচমকা ওই ঘটনায় প্রথমে ভয় পেয়ে গেলেও পরে তিনি চিৎকার শুরু করেন। ওই যুবক তখন দ্রুত গতিতে সাইকেল চালিয়ে চম্পট দেয়।
এ দিন নিজের বাড়িতে বসে ওই তরুণী বলেন, “প্রথমে কয়েক সেকেন্ডের জন্য হতভম্ব হয়ে গিয়েছিলাম। তার পরেই ভাবলাম, ওকে ধরতেই হবে। মেয়েদের সঙ্গে এমন ব্যবহার করার জন্য ওকে শিক্ষা দেওয়া দরকার। তাই আমিও ওই সাইকেলের পিছনে ছুটতে লাগলাম।” পুলিশ জানায়, তরুণীটিকে পিছনে দৌড়তে দেখে সাইকেলের গতি বাড়িয়ে দেয় অরিন্দম। এর মধ্যে আরও লোক জুটে যায়। বাঁকের ডাঙা লেনের কাছে একটি গলির সামনে সাইকেল থেকে পড়ে যায় ওই যুবক। সাইকেল ফেলে রেখেই সে দৌড়তে শুরু করে। তরুণী জানান, ওই সময়ে তাঁদের বাড়িতে যে যুবক সংবাদপত্র দেন, তিনিও সেখান দিয়ে আসছিলেন। সবাই মিলে ধরে ফেলেন অরিন্দমকে।
এর মধ্যে ওই তরুণী মোবাইলে ফোন করেন তাঁর বাবাকে। তিনি বলেন, “ফোন ধরতেই মেয়ে কাঁদতে থাকে। বলে, এখনই চলে এস। ভাবলাম, বোধহয় কোনও দুর্ঘটনা ঘটেছে। কিন্তু এ রকম যে ঘটতে পারে, তা ভাবতেও পারিনি।”
পুলিশ জানায়, বালির দুর্গাপুর এলাকার বাসিন্দা অরিন্দম স্থানীয় একটি জুট মিলে ঠিকা শ্রমিকের কাজ করে। পুলিশের দাবি, ওই যুবক তাদের জানিয়েছে, বালির ঘোষপাড়ার বাসিন্দা এক যুবক নাকি তাকে এই কাজ করার জন্য পাঁচশো টাকা দিয়েছে। কাজ হয়ে গেলে তাকে আরও এক হাজার টাকা দেওয়ার প্রতিশ্রুতিও দিয়েছে ওই যুবক। বুধবার রাতে ঘোষপাড়া এলাকার একটি চায়ের দোকানে বসেই ওই যুবকই এই পরিকল্পনা করেছে বলে অরিন্দমের দাবি। তদন্তকারীরা জানান, সেই যুবকের খোঁজ চলছে।
এই ঘটনার বিষয়ে হাওড়া সিটি পুলিশের ডিসি (সদর) নিশাত পারভেজ বলেন, “ধৃত যুবক সত্যি বলছে কি না, খতিয়ে দেখা হচ্ছে।”
এ দিন ঘটনার পরে ওই তরুণীর বাড়িতে যান রাজ্যের কৃষি বিপণন মন্ত্রী অরূপ রায়। তিনি পুলিশের কর্তাদের সঙ্গেও কথা বলেন। পরে তিনি বলেন, “পুলিশকে বলেছি, এমন ঘটনা ঘটলে তাঁরা যেন অপরাধীর রাজনৈতিক পরিচয় না দেখেন। অভিযুক্ত যে দলেরই হোক না কেন, আগে তাকে গ্রেফতার করতে হবে।” |