|
|
|
|
কোথায় হবে নয়া রাজধানী, গৃহযুদ্ধের পথে অন্ধ্রপ্রদেশ |
শঙ্খদীপ দাস • হায়দরাবাদ |
বারোশো মানুষ খেতে পারেন একসঙ্গে! ভরা বিকেলেই সেই প্যারাডাইস রেস্তোরাঁ ভর্তি! ঝিরি ঝিরি বৃষ্টি উপেক্ষা করে চারমিনার চত্বর মশগুল ইদ-বাজারে। এমনকি হাইটেক শহর গাচ্ছিবউলি-মনিকোণ্ডাও প্রত্যয়ের সঙ্গে জানান দিচ্ছে, সুদিন ফের এল বলে! অনিশ্চয়তা কাটিয়ে এ ভাবেই যখন জেগে উঠছে হায়দরাবাদ, তখন নয়া রাজধানীর খোঁজে অশান্তির অশনিসঙ্কেত অন্ধ্রে। হায়দরাবাদ হাতছাড়া হওয়ার ‘দুঃখ’ তো রয়েছেই। এ বার নতুন রাজধানীর সন্ধান বিতর্কে ভবিষ্যতে গৃহযুদ্ধ বাধতে পারে বলে মনে করছেন অনেকেই।
কী রকম?
তার আগে হায়দরাবাদের ‘হকিকত’টা একটু বলি। গত প্রায় চার বছর পৃথক তেলেঙ্গানার দাবিতে আন্দোলন-অশান্তির জেরে এ শহরের উন্নয়ন যেন থমকে গিয়েছিল। গুগল, আমাজন, মাইক্রোসফট, ফেসবুক, ডেল, উইপ্রো-সহ প্রায় তেরোশো দেশি, বিদেশি এবং বহুজাতিক তথ্যপ্রযুক্তি সংস্থা ও তার অনুসারী সংস্থার ঘাঁটি এই শহর জুড়ে। কিন্তু একটি তথ্যপ্রযুক্তি সংস্থার কর্ণধার বি ভি মোহন রেড্ডি জানালেন, “রাজ্য ভাগ নিয়ে অনিশ্চয়তায় ব্যবসা সম্প্রসারণে হাত দিচ্ছিলেন না কেউই। নতুন বিনিয়োগও চলে যাচ্ছিল বেঙ্গালুরু, মহীশূর, চেন্নাইয়ে।” কিন্তু দোলাচলের মেঘ কাটতেই হায়দরাবাদের পুরনো মেজাজ ফিরবে বলে আশাবাদী মোহন। উচ্ছ্বসিত জমি-ব্যবসায়ীদের সংগঠনের প্রধান রাজেশ্বর রাও। যিনি জানাচ্ছেন, গত চার বছরে যখন তর তর করে বেড়েছে দাক্ষিণাত্যের সব রাজধানীর ঘর-বাড়ির দর, তখন হায়দরাবাদে সব থমকে। কিন্তু এ বার পাল্লা দেবে হায়দরাবাদ।”
শুধু রাজেশ্বর রাও কেন, সেই সম্ভাবনার কথা আজ জানিয়েছে ক্রিসিলও। বস্তুত অর্থনীতির সেই সূত্র ধরেই এ বার সমস্যা শুরুর আশঙ্কা অন্ধ্রে। কেন না নতুন রাজধানীর পত্তন মানেই বিনিয়োগ হবে। অন্ধ্রের অন্দরে এখন সেজন্যই টানাটানি শুরু হয়েছে নয়া রাজধানীর ঠিকানা নিয়ে।
অন্ধ্র ভাগের পর ৭২ ঘণ্টাও কাটেনি, ক্ষুদ্র সেচমন্ত্রী টি জি ভেঙ্কটেশ, এবং আরও দুই মন্ত্রী প্রতাপ রেড্ডি ও মহম্মদ আহমাদুল্লাহ জানিয়েছেন, নতুন রাজধানীর পত্তন হওয়া উচিত রায়লসীমার কুর্নুলে। ১৯৫৩ সালে মাদ্রাজ প্রেসিডেন্সি থেকে নতুন অন্ধ্র হওয়ার পর প্রথম তিন বছর কুর্নুলই ছিল রাজধানী। ভেঙ্কটেশের বক্তব্য, “রায়লসীমা আর বঞ্চনা সইবে না। অতীতে এক বার রাজধানী ছাড়তে হয়েছে, এ বার আবার হায়দরাবাদ ছাড়তে হল। কুর্নুলকেই ফিরিয়ে দিতে হবে অতীত গৌরব।”
কিন্তু বিজয়ওয়াড়ার রাজনীতিকরা তা শুনবেন কেন? এমনিতে অন্ধ্র ভাগের বিরোধিতা করছেন সেখানকার কংগ্রেস সাংসদ লাগারাপটি রাজগোপাল। কিন্তু তলে তলে কংগ্রেস হাইকম্যান্ডকে জানিয়েছেন, যদি বিজয়ওয়াড়া নতুন রাজ্যের রাজধানী হয়, তবেই বিদ্রোহে ক্ষান্ত দেবেন তিনি। তাঁর ল্যাঙ্কো ইন্ডাস্ট্রিজের বিপুল বিনিয়োগ রয়েছে তেলেঙ্গানায়। তাই রাজ্য ভাগের বিরোধিতা করছিলেন লাগারাপটি। এ বার তাঁর খেসারত চাইছেন তিনি।
বিশাখাপত্তনমেও গুঞ্জন চলছে। হায়দরাবাদ থেকে বিশাখাপত্তনের দূরত্ব অনেক। সে জন্য সেখানেও ক্ষোভ ছিল বহু দিন। সেখানকার ছাত্রছাত্রী, রাজনীতিক এমনকী আইনজীবীদের মঞ্চ দাবি তুলেছেন, তাঁদের শহরই রাজধানীর মর্যাদা পাওয়ার যোগ্য। কারণ বিশাখাপত্তনমে বন্দর রয়েছে, আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর ও রেল যোগাযোগ রয়েছে। এত অর্থনৈতিক সমৃদ্ধি অন্ধ্রের আর কোনও জেলায় নেই।
আবেগের কাছে এই যুক্তি টিকছে না। দক্ষিণের নেল্লোর, কাডাপ্পার মতো জেলার দাবি, নয়া রাজধানী হোক তিরুমালায়, প্রভু বালাজির পায়ের কাছে। কংগ্রেস নেতা সুধাকর বাবুর কথায়, প্রবাদ আছে বালাজি যাঁর মাথায় হাত রাখেন, তাঁরই মঙ্গল হয়। তাই তিরুমালার চেয়ে ভাল জায়গা আর হয় না। অন্ধ্রের এই অংশে জগন্মোহন রেড্ডির প্রতাপ প্রবল। অন্ধ্রে যে ভাবে তাঁর দাপট বাড়ছে, তাতে ক্ষমতায় এলে জগনও এ ব্যাপারে সর্বশক্তি ঢেলে দেবেন বলে মনে করছেন অনেকেই। অন্ধ্র প্রশাসনেরও একটা মত রয়েছে। আপাতত সচিবালয়ের শীর্ষ আমলাদের কথায়, বিষয়টা মঙ্গল-অমঙ্গলের নয়। নতুন রাজধানী শহর পত্তনে এক লপ্তে প্রায় ১৫ হাজার একর জমির প্রয়োজন। তা একমাত্র পাওয়া যেতে পারে প্রকাশম জেলার ওঙ্গলে। বিশাখাপত্তনম ও নেল্লোরের থেকে ওঙ্গলের দূরত্ব সমান। ফলে বঞ্চনার অভিযোগও থাকবে না।
তবে রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, শেষমেশ হয়তো লড়াইটা হবে রাজনৈতিক কারণেই। কংগ্রেস, টিডিপি, ওয়াই এস আর কংগ্রেস নির্বিশেষে গৃহযুদ্ধও লাগতে পারে। তার ব্যাখ্যায় বলা হচ্ছে, অন্ধ্রের ৪২ জন সাংসদের প্রায় ৭০ শতাংশ বড় ব্যবসায়ী এবং জমিজমার কারবারি। এমনকী সম্প্রতি যে কে এস রাও-কে কেন্দ্রে বস্ত্রমন্ত্রী করেছেন সনিয়া-মনমোহন, তাঁরও বিপুল ইমারতি কারবার। দ্বন্দ্বটা সেখানেই। রাজ্য ভাগ ঘোষণার সময় কংগ্রেস হাইকম্যান্ডের তরফে বলা হয়, নতুন রাজধানী পত্তনে অর্থ সাহায্য করবে কেন্দ্র। গত কাল টিডিপি নেতা চন্দ্রবাবু নায়ডু বলেছেন, সেই সাহায্যের অঙ্ক হওয়া উচিত অন্তত ৪ লক্ষ কোটি টাকা। তার সিকিভাগও যদি বিনিয়োগ হয়, তা হলে আমদানির বহরটা আন্দাজ করুন। ব্যবসায়ী-সাংসদদের ক’জনই বা ছাড়বেন সেই মওকা!
আপাতত স্বস্তি ও সম্ভাবনার আশায় বুক বাঁধছে নবাবের শহর।
|
ইস্তফার ঢল কংগ্রেসে |
তেলেঙ্গানা গঠনের প্রতিবাদে অন্ধ্রপ্রদেশের অন্য এলাকা থেকে নির্বাচিত কংগ্রেসের এক মন্ত্রী, নয় বিধায়ক এবং চার বিধান পরিষদের সদস্য পদত্যাগ করেছেন। তবে পদ ছাড়লেও তাঁরা আপাতত কংগ্রেসেই থাকছেন। সেই সঙ্গে অন্ধ্রের আরও কয়েক জন মন্ত্রীও পদত্যাগের হুমকি দিয়েছেন। দু’দিন আগেই দল ছাড়ার কথা ঘোষণা করেছিলেন অন্ধ্রের কংগ্রেস সাংসদ রায়াপতি সম্বাশিব রাও। বৃহস্পতিবার তিনি বলেন, “এখনও আমি যদি কংগ্রেসে থাকি, তবে জনতা আমাকে ধোলাই দেবে।” তবে এত চাপ সত্বেও তেলেঙ্গানা গঠনের সিদ্ধান্ত থেকে পিছিয়ে আসার যে কোনও প্রশ্নই নেই, তা স্পষ্ট করে দিয়েছেন দলের সাধারণ সম্পাদক দিগ্বিজয় সিংহ। কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সুশীলকুমার শিন্দে বলেন,“কংগ্রেস একটা সিদ্ধান্ত নিয়েছে। তার বিরুদ্ধে অনেকে বিক্ষোভ দেখাচ্ছেন। এটা তাঁদের গণতান্ত্রিক অধিকার।” |
পুরনো খবর: গোলাপের পাপড়ি ছুড়লেন চন্দ্রশেখর |
|
|
|
|
|