আইনজীবীদের পথ অবরোধে অচল হল আসানসোল শহর। বিকেলে দু’ঘণ্টা ধরে জিটি রোড অবরোধ করে রাখায় সমস্যায় পড়লেন ছাত্রছাত্রী থেকে নিত্যযাত্রী সকলেই। অবরোধ ওঠার পরেও যান চলাচল স্বাভাবিক হতে সময় লাগল আরও কিছুক্ষণ।
বৃহস্পতিবার আসানসোল আদালতের বার অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক বাণী মণ্ডল জানান, দিন চারেক আগে তাঁদের এক সহকর্মী, আসানসোল আদালতের আইনজীবী অঙ্কুর দাসের সঙ্গে স্থানীয় এক প্রভাবশালী ব্যবসায়ী পুত্রের বচসা বাধে। মারামারিও হয়। বাণীবাবুর অভিযোগ, তখন ওই আইনজীবী পেশাগত পোশাক পড়ে আদালতে যাচ্ছিলেন। সেই অবস্থাতে রাস্তাতেই তাঁকে মারধর করা হয় ও তাঁর গাড়িতেও ভাঙচুর করা হয়। পরে আসানসোল দক্ষিণ থানায় এ নিয়ে একটি অভিযোগও দায়ের করা হয়। |
পুলিশের উপরে ক্ষোভে আসানসোলে জি টি রোডে অবরোধ করলেন আইনজীবীরা। আটকে যানবাহন। |
বাণীবাবুর অভিযোগ, পুলিশ এরপরেও ওই ব্যবসায়ী পুত্রকে ধরেনি। তাঁর বিরুদ্ধে কোনওরকম আইনানুগ ব্যবস্থাও নেয়নি। ফলে আসানসোলের আইনজীবী মহল নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছেন বলে বারের সম্পাদকের দাবি। এই ঘটনার প্রতিবাদেই এ দিনের আন্দোলন।
কিন্তু প্রশ্ন উঠেছে, এভাবে ব্যস্ত সময়ে আগাম কিছু না জানিয়ে জিটি রোড অবরোধ করা কতটা ঠিক? কারণ সাধারণ মানুষকে তো নাজেহাল হতেই হয়েছে। বাণীবাবুর অবশ্য সাফাই, “পুলিশই আমাদের এভাবে আন্দোলন করতে বাধ্য করেছে।” তাঁর আরও যুক্তি, এ দিন তাঁরা রাস্তা অবরোধ করেননি। রাস্তায় দাঁড়িয়েই আন্দোলন করছেন, তাঁদের প্রতি পুলিশি আচরণের কথা মানুষজনকে জানিয়েছেন। তবে প্রচুর আইনজীবী আন্দোলনে সামিল হওয়ায় রাস্তায় গাড়ি চলাচল বিঘ্নিত হয়েছে।
বিকেল সাড়ে তিনটে নাগাদ দেখা যায় কয়েক’শো আইনজীবী হঠাৎই বিএনআর মোড়ের কাছে জিটি রোডের মাঝামাঝি দাঁড়িয়ে পড়েন। ব্যস্ত রাস্তায় এভাবে অবরোধ শুরু হওয়ায় সার বেঁধে গাড়ি দাঁড়িয়ে পড়ে। আসানসোলের দিকে গির্জামোড় পর্যন্ত, বরাকরের দিকে এলআইসি মোড় পর্যন্ত, এবং সেনর্যালে রোডে রেল টানেল পর্যন্ত সার বেঁধে গাড়ির লম্বা লাইন পড়ে যায়। ওই সময়ে আসানসোলের একাধিক স্কুলও ছুটি হয়। ফলে স্কুল পড়ুয়াবোঝাই পুলকার, বড় বাসও দাঁড়িয়ে পড়ে। চরম অসুবিধায় পড়েন সাধারণ যাত্রীরা। থমকে যান আসানসোল স্টেশনে যাওয়া মানুষজনও। যাত্রীরা জানান, অনেক আকুতি করেও বিক্ষোভরত আইনজীবীদের টলানো যায়নি। |
গাড়ি না চলায় হেঁটেই বাড়ির পথে পড়ুয়ারা। |
আইনজীবীদের এহেন আচরণে বিরক্ত পথচারীদের কটু মন্তব্য করতেও শোনা যায়। আসানসোল আদালতের একাধিক প্রবীণ আইনজীবীও ঘটনার সমালোচনা করেছন। কিন্তু বিতর্কে না জড়াতে চেয়ে সহকর্মীদের বিরুদ্ধে প্রকাশ্যে মুখ খুলতে চাননি। অভিযোগ, ঘন্টা দু’য়েক এই অবস্থা চলার পরেও অবরোধ তোলার অনুরোধ নিয়ে ঘটনাস্থলে আসেনি পুলিশ। পরিস্থিতি ক্রমেই জটিল হয়ে পড়ে। অসন্তোষ ছড়িয়ে পড়ে। আইনজীবীদের একাংশও এই কর্মসূচীকে আর চালিয়ে যেতে না চাওয়ায় বিকাল সাড়ে পাঁচটা নাগাদ আইনজীবীরা রাস্তা থেকে সরে দাঁড়ান। তবে যান চলাচল স্বাভাবিক হতে আরও কিছুটা সময় লেগে যায়।
|
বৃহস্পতিবার বিকেলের নিজস্ব চিত্র। |