ট্রাফিক পুলিশের কিয়স্ক দখল করে বসে আছে বিমা কর্মী। পাশে গাছতলায় জিরিয়ে নিচ্ছেন পুলিশ আধিকারিক। জাতীয় সড়ক দিয়ে যাওয়া গাড়ি ধাওয়া করে আনছে সিভিক পুলিশ। কিয়স্কে বসেই যে সব গাড়ির বিমা থাকে না তাদের জোর করে বিমা করিয়ে দিচ্ছেন ওই কর্মী। কর্তব্যরত পুলিশ ও সিভিক পুলিশের হাতে পৌঁছে যাচ্ছে ‘রফা’র অংশ। দীর্ঘদিন ধরেই এমন কাণ্ডকারখানা চলছে বলে অভিযোগ তুলে বৃহস্পতিবার দুর্গাপুরের ডিভিসি মোড়ে জাতীয় সড়ক অবরোধ করলেন এলাকাবাসী। পুলিশ গিয়ে কিয়স্ক থেকে গ্রেফতার করে এক বিমাকর্মীকে।
ডিভিসি মোড়ে ট্রাফিক অব্যবস্থা নিয়ে বাসিন্দা ও যাত্রীদের ক্ষোভ দীর্ঘদিনের। তাঁদের অভিযোগ, কাগজপত্র পরীক্ষার নামে সিগন্যাল না পেয়ে দাঁড়িয়ে থাকা মোটরবাইকের চাবি খুলে নেন সিভিক পুলিশ কর্মীরা। ফলে, সামনে দ্রুত গতিতে গাড়ি আসছে দেখেও সরে যেতে পারেন না তাঁরা। দুর্ঘটনার সম্ভাবনা তৈরি হয়। স্থানীয় বাসিন্দা রামপদ ঘোষের কথায়, “জাতীয় সড়কে সব চেয়ে বিপজ্জনক মোড় এই ডিভিসি মোড়। দুর্ঘটনা লেগেই আছে। অথচ গাড়ির কাগজপত্র পরীক্ষার জন্য এই জায়গাকেই বেছে নিয়েছে কিছু পুলিশ ও সিভিক পুলিশ।” আর এক বাসিন্দা বিল্বনাথ আদকের অভিযোগ, “ট্রাফিক নিয়ন্ত্রণের জন্য কিয়স্ক তৈরি হয়েছে। অথচ, সেখানে ট্রাফিক পুলিশ থাকে না। বসে থাকে বিমা কর্মী। পুলিশ গাড়ি ধাওয়া করে সেখানে আনে। বিমাকর্মী বিমা করিয়ে দেন। তাঁর সঙ্গে পুলিশের রফা আছে।” |
পুলিশ ও বিমাকর্মীর আঁতাতের অভিযোগে তখন চলছে বিক্ষোভ। —নিজস্ব চিত্র। |
এলাকার বাসিন্দারা জানান, বৃহস্পতিবার বিকাল ৩টে নাগাদ তাঁরা দেখেন, একটি লরিকে ধাওয়া করে কিয়স্কের কাছে নিয়ে যাচ্ছে দুই সিভিক পুলিশকর্মী। কিয়স্কে থাকা বিমাকর্মী নির্দেশ দিচ্ছেন পুলিশকে। এর পরেই ক্ষোভে ফেটে পড়েন তাঁরা। কিয়স্কের ভিতরে ওই বিমাকর্মীকে আটকে দোষী পুলিশ ও সিভিক পুলিশ কর্মীদের শাস্তির দাবিতে বিক্ষোভ শুরু করেন তাঁরা। বুধবার সন্ধ্যায় এই মোড়েই লরির ধাক্কায় মৃত্যু হয় মোটরবাইক আরোহী এক চিত্র সাংবাদিক দীপক গুরুঙ্গ। তার পর থেকেই ক্ষোভে ফুঁসছেন এলাকাবাসী। তাঁদের অভিযোগ, বিপজ্জনক এই মোড়ে ইদানীং ট্রাফিক নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা ঢিলেঢালা। তাই এমন ঘটছে।
এ দিন অবরোধে আটকে পড়েন দক্ষিণবঙ্গ পরিবহণ নিগমের চেয়ারম্যান তমোনাশ ঘোষ। তিনি ঘটনার কথা শুনে ফোন করেন রাজ্যের পরিবহণ মন্ত্রীকে। পরে তিনি বলেন, “এখানকার পুলিশ ও সিভিক পুলিশের একাংশের বিরুদ্ধে হয়রান করার অভিযোগ উঠেছে। পুলিশের কিয়স্ক দখল করে কাজ করছে বিমাকর্মী। এ সব বরদাস্ত করা হবে না।” তিনি আরও বলেন, “পরিবহণ মন্ত্রীকে বিষয়টি জানিয়েছি। ফিরে গিয়ে মুখ্যমন্ত্রীকেও জানাব।” আধ ঘণ্টা অবরোধ চলার পরে আসেন ট্রাফিক পুলিশের ওসি আরএস যাদব। গ্রেফতার করা হয় ওই বিমাকর্মী শ্যামল লোহারকে। এডিসিপি (পূর্ব) সুনীল যাদব জানান, ওই ব্যক্তি বেশ কয়েকটি বিমা সংস্থার হয়ে কাজ করে বলে প্রাথমিক ভাবে জানা গিয়েছে। দায়িত্বে থাকা পুলিশ আধিকারিকের বিরুদ্ধেও উপযুক্ত ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে জানান তিনি। |