রাজ্যে পঞ্চায়েত নির্বাচনের ফল ঘোষণা হতে না হতেই শাসক দল ও বিরোধীদের মধ্যে সংঘর্ষ বেড়েই চলেছে। রাজ্য জুড়ে এই সন্ত্রাসের মধ্যে বুধবার উত্তর ২৪ পরগনার স্বরূপনগরে দুষ্কৃতীদের গুলিতে সিপিএমের এক পঞ্চায়েত প্রার্থীর ভাই ও দাদার জখম হওয়ার ঘটনা ঘটেছে। আশঙ্কাজনক অবস্থায় একজনকে বসিরহাট মহকুমা হাসপাতালে ও একজনকে কলকাতার আরজিকর হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়েছে। গুলি চালানোর ঘটনায় স্থানীয় জনতা একজনকে ধরে ফেলে গণধোলাই গিয়ে পুলিশের হাতে তুলে দিয়েছে। ধৃত সঞ্জয় রায় তৃণমূলের কর্মী বলে পুলিশ সূ্ত্রের খবর।
সিপিএমের পক্ষ এই ঘটনায় স্বরূপনগর পঞ্চায়েত সমিতির তৃণমূল প্রার্থী হাবিবুর রহমান গাজী ওরফে মুকুল-সহ কয়েকজনের বিরুদ্ধে অভিযোগ দায়ের করা হয়েছে। ঘটনার পর বসিরহাটের এসডিপিও অভিজিৎ বন্দ্যোপাধ্যায় বিশাল বাহিনী নিয়ে ঘটনাস্থলে যান। নামানো হয় র্যাফ। অভিজিৎবাবু বলেন, “সঞ্জয় রায়-সহ চারজনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। বাকিদের খোঁজে তল্লাশি চলছে।”
তৃণমূলের অভিযোগ, শাঁড়াপুল বাজারে মুকুলের একটি হার্ডওয়ারের দোকান রয়েছে। মঙ্গলবার দোকানের সামনে বোমাবাজি করে সিপিএম। বুধবার সকালে তা নিয়ে দু’পক্ষে বচসা বাধে। সিপিএমের অভিযোগ,আধঘণ্টা পরে বিডিও অফিসের সামনে দিয়ে মোটর সাইকেলে যাওয়ার সময় তাঁদের প্রার্থী সাত্তার গাজিকে গুলি করে তৃণমূলের লোকেরা। কিন্তু তা লক্ষ্যভ্রষ্ট হয়। সাত্তারকে গুলি করার খবর পেয়ে ভোগলবাড়ি গ্রামে তাঁর বাড়ি বেরিয়ে আসেন দাদা রফিকুল গাজি। কাছেই হটাৎগঞ্জ বাজার থেকে চলে আসেন ভাই জলিল গাজিও। |
এ দিন হাসপাতালে শুয়ে জলিল বলেন, “ভাইকে গুলি করা হয়েছে শুনে আসতেই দেখি ঢালিপাড়া মোড়ে রফিকুলের সঙ্গে মুকুলের বচসা হচ্ছে। গণ্ডগোল থামাতে এগিয়ে যেতেই মুকুল ও তার সঙ্গীরা রিভলভার বের করে গুলি চালাতে শুরু করে। একটা গুলি রফিকুলের পেট এফোঁড় ওফোঁড় করে দেয়। একটা গুলি লাগে আমার কোমরে। গুলি চালিয়ে মুকুল ও তার সঙ্গীরা পালিয়ে গেলেও সঞ্জয় নামে একজনকে ধরে ফেলে গ্রামবাসীরা।”
স্বরূপনগর ব্লক বামফ্রন্ট কমিটির আহ্বায়ক হামালউদ্দিন আহমেদ বলেন, “বড় ধরনের গণ্ডগোল বাধতে পারে বলে পুলিশকে আগে জানানো সত্ত্বেও মুকুল লোকজন নিয়ে আমাদের দলের প্রার্থীর উপরে হামলা চালাল, তাঁর দুই ভাইকে গুলি করে খুনের চেষ্টা করল। মুকুলকে অবিলম্বে গ্রেফতার না করা হলে আমাদের আন্দোলন চলবে।”
স্বরূপনগর পঞ্চায়েত সমিতির বিদায়ী সভাপতি ও তৃণমূল নেতা নারায়ণ গোস্বামী বলেন, “গুলি কারা চালিয়েছে পুলিশ তদন্ত করবে। তবে মুকুল বা সঞ্জয় কেউ এই ঘটনায় জড়িত নন।”
ভোটপরবর্তী সংঘর্ষ অব্যাহত দক্ষিণ ২৪ পরগনার ক্যানিং, বাসন্তীতেও। মঙ্গলবার রাতে ক্যানিংয়ের আমরাবেড়িয়া গ্রামের পঞ্চায়েতের কংগ্রেস প্রার্থী মাজেদা মণ্ডল, কংগ্রেস কর্মী আবুল শেখের বাড়িতে ঢুকে মারধর ও বাড়ি ভাঙচুরের অভিযোগ ওঠে তৃণমূলের বিরুদ্ধে। কংগ্রেসের একটি অফিসও ভাঙচুর করা হয় বলে ক্যানিং থানায় অভিযোগ করেছে কংগ্রেস। ক্যানিংয়ের কংগ্রেস নেতা তথা এআইসিসির সদস্য অর্ণব রায় বলেন, “নির্বাচনের পর থেকেই তৃণমূল সন্ত্রাস করছে। ওদের আক্রমণে আমাদের বেশ কিছু কর্মী সমর্থক ইতিমধ্যেই ঘরছাড়া।” বাসন্তীর খেড়িয়া, কলতলা, ক্যানিংয়ের গোলাবাড়ি এলাকায় আরএসপি এবং সিপিএম কর্মী সমর্থকদের বাড়িতে চড়াও হয়ে মারধর ও ভাঙচুরের অভিযোগ ওঠে তৃণমূলের বিরুদ্ধে। এমনকী, আরএসপি ও সিপিএম কর্মী সমর্থকদের বাড়িতে বিদ্যুৎ সংযোগ ছিন্ন করা হচ্ছে বলে অভিযোগ। যদিও এ নিয়ে কেউ অভিযোগ করেনি বলে পুলিশ জানিয়েছে। আরএসপির বিধায়ক তথা প্রাক্তন সেচমন্ত্রী সুভাষ নস্কর বলেন, “তৃণমূল নেত্রী বলেছিলেন বদলা নয়, বদল চাই। কিন্তু এখন তা বদল বদলায় পরিণত হয়েছে। ওদের মারধরে আমাদের বেশ কিছু কর্মী-সমর্থক জখম হয়েছেন।”
তৃণমূলের জেলা সহ-সভাপতি শক্তি মণ্ডল বলেন, “ভোটের আগে থেকেই বিরোধীরা কুৎসা করছে। তবুও মানুষ আমাদের পক্ষেই রায় দিয়েছেন। তা সত্ত্বেও ওরা অপপ্রচার চালাচ্ছে।” |