|
|
|
|
ঘরবন্দি রইলেন হতাশ নায়ক চন্দ্রশেখর |
নিজস্ব সংবাদদাতা • হায়দরাবাদ |
পৃথক তেলেঙ্গানা গঠনের সাময়িক আনন্দটুকু বাদ দিলে গত কাল উৎকণ্ঠা বিশেষ গোপন করতে পারেননি তিনি। আজও দিনের বেশির ভাগ সময় নিজেকে ঘরবন্দিই রাখলেন কলভাকুন্তল চন্দ্রশেখর রাও!
কেন? তাঁর দীর্ঘদিনের ঘনিষ্ঠ সহযোগী তথা তামিল অভিনেত্রী বিজয়া শান্তি জবাবটা এড়িয়ে যেতে চাইলেন ঠিকই। কিন্তু রাজনৈতিক হাল-হকিকত বেশ বুঝিয়ে দিচ্ছে, তেলেঙ্গানার খুশির দিনে সব থেকে বড় সঙ্কট চন্দ্রশেখরেরই। গত ১২ বছর ধরে তেলেঙ্গানার দাবিতে অনশন-আন্দোলন করেছেন। সাংসদ পদ থেকে ইস্তফা দিয়েছেন। কিন্তু তেলেঙ্গানা রাজ্য গঠন হলে চন্দ্রশেখরই যে তার মুখ্যমন্ত্রী হবেন, তেমন কোনও সম্ভাবনা চোখে পড়ছে না।
অন্ধ্রের অনেকেই বরং মনে করছেন, লোকসভা ও বিধানসভা ভোটের আগে মোক্ষম সময়ে কংগ্রেসই লাভের গুড় খেয়ে গেল। রাজ্য ভাগ হল, কিন্তু কৌশলে সেই আলোচনায় চন্দ্রশেখরকে সামিলই করলেন না কংগ্রেস শীর্ষ নেতৃত্ব। উল্টে পৃথক তেলেঙ্গানার আবেগের প্রতি দরদ দেখিয়ে কৃতিত্বের সবটাই শুষে নিতে চাইছেন দিগ্বিজয় সিংহরা। ফলে পরিস্থিতি এখন এমনই যে, নিজের হাতে গড়ে তোলা তেলেঙ্গানা রাষ্ট্র সমিতিকে কংগ্রেসের সঙ্গে মিশিয়ে দেওয়া ছাড়া চন্দ্রশেখরের উপায়ান্তর নেই। এমনকী ঘরোয়া আলোচনায় সে কথা ঠারেঠোরে স্বীকারও করে নিলেন চন্দ্রশেখর পুত্র কে টি রাম রাও। বললেন, “সংসদে পৃথক তেলেঙ্গানা বিল পাশ হলে এই প্রক্রিয়া নিয়ে আলোচনা হতেই পারে।” |
 |
সেই পরিস্থিতিতেও চন্দ্রশেখরের স্থান কোথায়? কংগ্রেস শীর্ষ সূত্রে বলা হচ্ছে, লোকসভা নির্বাচনের আগেই তেলেঙ্গানা গঠনের প্রক্রিয়া সম্পন্ন করতে চাইছে হাইকম্যান্ড। যাতে ভোটে যাওয়ার আগে অন্ধ্র ও তেলেঙ্গানা দুই রাজ্যেই ক্ষমতায় থাকে কংগ্রেস। তেলেঙ্গানার সম্ভাব্য ১১৭টি বিধানসভা আসনের মধ্যে এই মুহূর্তে কংগ্রেসের কাছে রয়েছে ৪৯টি আসন। তেলেঙ্গানা রাষ্ট্র সমিতির রয়েছে মাত্র ১৭টি। সেই সমীকরণকে সামনে রেখে তেলেঙ্গানার মুখ্যমন্ত্রী বাছাই নিয়ে টানাপোড়েন কার্যত আজ থেকেই শুরু হয়ে গিয়েছে কংগ্রেসের অন্দরে। কেউ এগিয়ে রাখছেন অন্ধ্রের বর্তমান উপমুখ্যমন্ত্রী দামোদর রাজানরসিংহকে, কেউ এগিয়ে রাখছেন পঞ্চায়েতি রাজ মন্ত্রী জনা রেড্ডিকে, কেউ বা কেন্দ্রীয় মন্ত্রী জয়পাল রেড্ডির কথা বলছেন। এ ব্যাপারে প্রকাশ্যে বিবৃতিও দিতে শুরু করেছে বিভিন্ন গোষ্ঠী।
এই অবস্থায় আজ ক্ষোভ গোপন রাখেননি চন্দ্রশেখর পুত্রও। সটান তোপ দাগলেন, “আসলে পৃথক তেলেঙ্গানা কখনওই চায়নি কংগ্রেস। স্রেফ রাহুল গাঁধীকে প্রধানমন্ত্রী করার জন্য এই সিদ্ধান্ত নিল। যাতে অন্ধ্র না হোক, তেলেঙ্গানা থেকে কিছু আসন পাওয়া যায়।” ঘনিষ্ঠ মহলে অন্ধ্রের কংগ্রেস নেতাদের কেউ কেউ এই অভিযোগ মেনেও নিচ্ছেন। বস্তুত, জগন্মোহন রেড্ডি কংগ্রেস ছাড়ার পর এখন গোটা অন্ধ্রে তাঁরই প্রতিপত্তি। অন্ধ্রের পঞ্চায়েত ভোটে জেলে বসেও কংগ্রেসকে যথেষ্ট বেগ দিয়েছেন জগন। এমনকী অনেকে এ-ও বলছেন, আগামী লোকসভা ভোটে অন্ধ্রে রেকর্ড তলানিতে ঠেকবে কংগ্রেসের আসন সংখ্যা। সেই কারণেই অন্তত তেলেঙ্গানার সম্ভাব্য ১৭টি লোকসভা আসন নিশ্চিত করতে চাইছেন সনিয়া-রাহুল। এই ১৭টি আসনের মধ্যে এখন কংগ্রেসের রয়েছে ১২টি। নতুন রাজ্য ঘোষণার পর তা আরও বাড়বে বলেই আশা রয়েছে হাইকম্যান্ডের। তাই তেলেঙ্গানা গঠন নিয়ে রীতিমতো সময়সীমা বেঁধে এগোতে চাইছে কংগ্রেস। যাতে ভোটের আগে সরকার গড়ে বড় কোনও ঘোষণাও করে দেওয়া যায়। সেই সঙ্গে আশা, লোকসভা ভোটের আগে জগন্মোহনই হয়তো আপস করে নেবেন কংগ্রেসের সঙ্গে।
ঘোর অনিশ্চয়তা শুধু চন্দ্রশেখরকে নিয়ে। অবশ্য ইতিহাস মনে রাখবে তাঁকে। |
|
|
 |
|
|