|
|
|
|
|
|
|
হিন্দু আইন অনুযায়ী, বাবা-মায়ের অবর্তমানে তাঁদের সম্পত্তিতে ছেলে-মেয়ের সমান অধিকার। অথচ বিধবা মা যদি ছেলেদের পরামর্শে বা চাপে উইল কিংবা রেজিস্টার্ড দানপত্রের মাধ্যমে সম্পত্তি শুধুমাত্র দুই ছেলের মধ্যেই ভাগ করে দেন এবং বিয়ে দেওয়ার যুক্তিতে একমাত্র মেয়েকে বঞ্চিত করেন, তবে সেটা আইনি না বেআইনি?
বেআইনি হলে অসহায় মেয়েটি কী ভাবে এই অন্যায় রুখে বাবা-মায়ের সম্পত্তির অধিকার পেতে পারেন?
সুদীপ
বর্তমান হিন্দু আইন অনুযায়ী বাবা-মায়ের অবর্তমানে ছেলেদের মতো মেয়েরাও তাঁদের সম্পত্তির সমান ভাগ পান। কাজেই মা যদি ছেলেদের উইল করে সব দিয়ে থাকেন, তবে পরবর্তী কালে সেটি কার্যকর করার ক্ষেত্রে বাধা দেওয়ার অধিকার আছে মেয়ের। সে ক্ষেত্রে ছেলেরা যখন মায়ের মৃত্যুর পর উইলের প্রোবেট নিতে আদালতে যাবেন, তখন মেয়ে উইলটির বৈধতা বা উইলটিকে চ্যালেঞ্জ করে তাতে বাধা দিতে পারেন। এ বার দেখতে হবে যে, সম্পত্তিটি মায়ের নিজেরই কি না। যদি তাঁরই হয়, তবে তিনি নিজের পছন্দ অনুযায়ী যে-কাউকে সম্পত্তি উইল করে দিয়ে যেতে পারেন। তাতে কোনও বাধা নেই।
অন্য দিকে, মা যদি সম্পত্তিটি রেজিস্টার্ড দানপত্র করে ছেলেদের দান করে থাকেন, তা হলে মেয়েটির পক্ষে এ ভাবে আটকানো একটু মুশকিলের ব্যাপার। কারণ দানপত্র সম্পাদনের সঙ্গে সঙ্গেই কার্যকর হয়। ফলে বাধা দেওয়া খুব সহজ নয়।
তবে এখানে যে গুরুত্বপূর্ণ বিষয়টি মাথায় রাখতে হবে, সেটি হল এটা ঠিক যে, নিজের সম্পত্তি যাকে খুশি দানপত্র করে দেওয়া যায়। কিন্তু অন্যায় প্ররোচনা দিয়ে বা চাপ সৃষ্টি করে, ভয় দেখিয়ে উইল বা দানপত্র করিয়ে নেওয়া বেআইনি। আইন বলছে, সম্পত্তিদাতাকে সম্পূর্ণ সুস্থ মস্তিষ্কে, অন্যের বিনা অনুরোধে, কোনও প্ররোচনা ছাড়া উইল বা দানপত্র করতে হবে। সুতরাং এ ক্ষেত্রে মেয়ে উইল বা দানপত্রটি চ্যালেঞ্জ করে আদালতের দ্বারস্থ হতে পারেন। এমনকী দেওয়ানি আদালতে গিয়ে রেজিস্টার্ড দানপত্র বাতিল করার আবেদন করে মামলাও করতে পারেন।
মাসিমা এবং মেসোমশাই নিঃসন্তান অবস্থায় মারা গিয়েছিলেন। মাসিমার নিজস্ব কিছু সম্পত্তি ছিল। উইল না-করে যাওয়ায় মা ওয়ারিশন সূত্রে সেই সম্পত্তি পান। বর্তমানে মায়ের অবস্থা ভাল নয়। তিনি উইলের ইচ্ছাপ্রকাশ করেন। এখন মা উইল করে দেওয়ার পর ওই সম্পত্তি কাউকে বিক্রি বা দান করে দিলে, সম্পত্তির ক্রেতারা বৈধতা পাবেন? না কি উইলে যাদের নাম আছে তাদের বৈধতা থাকবে। উইল করার পর সম্পত্তি বিক্রি করা যায়?
উত্তম বিশ্বাস
আপনার মা যদি উইল করে কাউকে সম্পত্তি একবার দিয়েও থাকেন, তবুও তাঁর জীবদ্দশায় ফের তা যত বার খুশি বাতিল করতে পারেন। এমনকী উইল করার পরেও সেই উইল বাতিল করে ওই সম্পত্তিই অন্য কাউকে বিক্রি বা দান করে দিতে পারেন। সে ক্ষেত্রে বিক্রি বা দান করলে যিনি কিনছেন বা যাঁকে দান করে দেওয়া হচ্ছে, তাঁর বৈধতাই থাকবে।
উইল নাকচ করে আপনার মা ওই সম্পত্তিটি যদি কাউকে বিক্রি বা দান করে দেন, সে ক্ষেত্রে উইলে যাঁদের নাম আছে তাঁরা আর সম্পত্তি পেতে পারেন না। কারণ, উইল সম্পাদন করলেই তা সঙ্গে সঙ্গে কার্যকর হয় না। উইলকর্তার মৃত্যুর পর সময় মতো আদালতে উইলটি প্রোবেট নিতে হয়। যিনি উইল করছেন, তিনি তাঁর জীবদ্দশায় একাধিক বার উইল বদলাতে পারেন। তবে প্রত্যেক বার নতুন উইল করার সময় আগের উইলটি বাতিল ঘোষণা করতে হবে।
এ ক্ষেত্রে যদি ধরেও নিই যে, আপনার মা উইল করে সম্পত্তিটি কাউকে দিয়েছিলেন, তবুও আপনার মা বেঁচে থাকতে ওই উইলটি নাকচ করে সম্পত্তিটি কাউকে দান বা বিক্রি করতেই পারেন। তখন কিন্তু উইলে যাঁদের নাম ছিল তাঁদের আর বৈধতা থাকবে না।
আমার এক আত্মীয় গত ১৫ এপ্রিল মারা গিয়েছেন। বিভিন্ন ব্যাঙ্কের (রাষ্ট্রায়ত্ত ও বেসরকারি) ৬-৭টি ক্রেডিট কার্ড ব্যবহার করতেন তিনি। এখন তাঁর বিধবা স্ত্রীকে কার্ডগুলির বকেয়া টাকা মেটানোর জন্য নোটিস পাঠাচ্ছে ব্যাঙ্কগুলি। উনি তাঁর মৃত স্বামীর ক্রেডিট কার্ডের বকেয়া মেটাতে বাধ্য কি না, সেটা জানালে খুব উপকৃত হব।
তন্ময় বন্দ্যোপাধ্যায়, নৈহাটি
শুধু আপনার আত্মীয় নন। ক্রেডিট কার্ড নিয়ে হাজারো সমস্যার মুখে পড়েন অনেকেই। তবে আগে থেকে সতর্ক হলে বহু সমস্যাই এড়ানো সম্ভব হয়। যেমন এ ক্ষেত্রে কোনও কারণে ক্রেডিট কার্ড গ্রাহকের মৃত্যু হলে, তাঁর ঋণের দায় কারও উপর বর্তাবে কি না (কিংবা কার উপর বর্তাবে), তা শুরুর নথিতেই স্পষ্ট লেখা থাকে। তাই গোড়াতেই ওই বিষয়টি ভাল ভাবে পড়ে দেখতে হয়। সেখানে দায় অন্য কারও কাঁধে যাওয়ার কথা লেখা থাকলে, তবেই তা তাঁর উপর বর্তাবে। নইলে নয়।
কাজেই আপনি দেখুন ক্রেডিট কার্ডগুলি নেওয়ার সময় আপনার স্বামী যে ফর্ম ভরেছিলেন, তাতে কী শর্ত দিয়েছিলেন। সংশ্লিষ্ট ব্যাঙ্কগুলিতে গিয়ে ওই নথি দেখতে চাইতে পারেন কিংবা কীসের ভিত্তিতে তারা বকেয়া টাকা মেটানোর জন্য আপনাকে নোটিস পাঠাচ্ছে, তা-ও জানতে চাইতে পারেন। তা হলেই আপনার কাছে পুরো বিষয়টি পরিষ্কার হয়ে যাবে যে, ওই টাকা আপনি দিতে বাধ্য কি না। |
(আইনি পরামর্শ জয়ন্ত নারায়ণ চট্টোপাধ্যায়)
|
|
|
|
|
|