১৯৮৮ সালের কথা। সে বছর জলপাইগুড়ি শহরের সাত তরুণপ্রদোষকুসুম দাস, দেবাশিস লালা, সৌরেন সেন, গৌতম ঘোষ, শ্যামল চৌধুরী, সুরজিৎ শূর এবং কৃষ্ণকিঙ্কর রায়নেপালের মুক্তিনাথ (উচ্চতা ১৩,৫০০ ফুট) অভিযান করেন।
সেই সময়ে অভিযানের আনন্দ যাতে বহু মানুষ অনুভব করতে পারেন, সে জন্যই জলপাইগুড়ি শহরে একটি সংস্থার প্রয়োজনীয়তা অনুভব করেন তাঁরা এবং সেই উদ্দেশ্যে একটি সিদ্ধান্তও নেওয়া হয় মুক্তিনাথে বসেই। শহরের বাবুপাড়ার লোকনাথ কমপ্লেকেসে ‘নেচার অ্যান্ড ট্রেকার্স ক্লাব অব জলপাইগুড়ি’ সেই নতুন সিদ্ধান্তেরই ফসল। |
প্রথম অবস্থায় নিজস্ব ঘর ছিল না। প্রথম মিটিং হয়েছিল সংস্থার প্রথম সম্পাদক শ্যামল চৌধুরীর কর্মস্থলে। তার পর পাঁচ থেকে সাত বছর পর্যন্ত সদস্যদের বাড়িতেই চলত সংস্থার কাজ। এর পর ঠিকানা হয় রাউত বিল্ডিংয়ে। আর সেখান থেকেই বর্তমান ঠিকানার নিজস্ব ঘরে। সংস্থাটির বহুবিধ কার্যসূচির মধ্যে রয়েছে পর্বতারোহণ, প্রকৃতি পর্যবেক্ষণ শিবির, প্রকৃতি সচেতনা কর্মসূচি, নদী রক্ষার জন্য সাইকেল র্যালি, উৎসবের সময় শহরে শব্দদূষণের বিরুদ্ধে প্রচার, ডিজাস্টার ম্যানেজমেন্ট ট্রেনিং, মেডিক্যাল এবং ফার্স্ট এড ক্যাম্প, প্লাস্টিক ক্যারিব্যাগ ব্যবহারের বিপদ সম্পর্কে সচেতনা গড়ে তোলা এবং বিভিন্ন র্যালির ব্যবস্থা গ্রহণ ইত্যাদি। সংস্থার একটি নিজস্ব জার্নাল আছে, ‘দুর্বার’।
সংস্থার সম্পাদক সৌরেন সেন জানান“ছাত্রছাত্রী, যুব সম্প্রদায় এবং সাধারণ মানুষের মধ্যে অ্যাডভেঞ্চার ও খেলাধুলার প্রতি আগ্রহ এবং প্রকৃতি সংরক্ষণের সচেতনতা গড়ে তোলাই আমাদের লক্ষ্য। এ বছর সংস্থার পঁচিশতম বর্ষপূর্তি। পঁচিশ বছর আগে যেখান থেকে পথ চলার শুরু, এ বছর ২২ অক্টোবর সেই মুক্তিনাথেই সংস্থার জন্মদিন পালন করা হবে। সংস্থা অনেকগুলি শৃঙ্গজয় অভিযান করেছে। তবে উত্তরবঙ্গ থেকে এখনও ৭,০০০ মিটারের বেশি উচ্চতার শৃঙ্গজয় হয়নি। আমাদের লক্ষ্য তাই ২২,০০০ ফুট বেশি উচ্চতার শৃঙ্গজয়!” তিনি আরও বলেন, মূলত সদস্যদের চাঁদাই সংস্থার আর্থিক খরচ জোগায়। তাই স্বাভাবিক ভাবেই নানা আর্থিক সমস্যা থেকে যায়। তবে উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন মন্ত্রী গৌতম দেব আশ্বাস দিয়েছেন আর্থিক সাহায্যের ব্যাপারে। সংস্থার সভাপতি প্রদোষকুসুম দাস বলেন, “সময় অনেক কিছুই বদলে দেয়, জানি। তবু পঁচিশ বছরের মতো দীর্ঘ সময়ও কিন্তু প্রকৃতির প্রতি আমাদের অকৃত্রিম ভালবাসা আর অ্যাডভেঞ্চারের নেশা এই দুটির মধ্যে একটিকেও বদলাতে পারেনি!”
|
বাপী লাহিড়ি তরাই বা ডুয়ার্সে এলে সঙ্গত দেয় তাঁর স্যাক্সোফোন। দীর্ঘ সাতাশ বছর ধরে এই যন্ত্রটি বাজিয়ে আসছেন সুদীপ দত্ত। বাড়িতেই ছিল সুরের আবহ। বাবা অতুলচন্দ্র ছিলেন ধ্রুপদিয়া। তবলা, হারমোনিয়াম কিংবা এস্রাজেও পারদর্শী ছিলেন তিনি। বড়দার বেহালা বা মেজদার স্প্যানিশ গিটার শুনে তাঁর বড় হয়ে ওঠা। জলপাইগুড়ির পাণ্ডাপাড়া রো-এর বাসিন্দা সুদীপ প্রথমে হাতে তুলে ছিলেন হাওয়াইয়ান গিটার। তালিম নেন প্রদীপ মুখোপাধ্যায়ের কাছে। আর স্যাক্সোফোন নামের বাদ্যযন্ত্রটিযা তাঁকে সাফল্যের সিঁড়িতে পৌঁছে দিয়েছে, তা রপ্ত করেছেন স্রেফ শুনে শুনেই! আর এর সঙ্গে জড়িয়ে ছিল নিরলস চর্চা, যার সুবাদে একদিন পৌঁছে যান আমজনতার দরবারে। স্বশিক্ষিত স্যাক্সোফোনিস্ট সুদীপ রাজ্যের সীমা পেরিয়ে পৌঁছে গেছেন অসম, পটনা, নেপাল, ভুটান, শিলং কিংবা অরুণাচল প্রদেশও পেরিয়ে বাংলাদেশের মাটিতে! বাজিয়েছেন মহম্মদ আজিজ, অনুরাধা পড়ওয়াল, জলি মুখোপাধ্যায়, শান, বিনোদ রাঠৌর বা সুলক্ষ্মণা পণ্ডিতের মতো খ্যাতিমান সঙ্গীতশিল্পীদের সঙ্গে। তাঁর জীবন, জীবিকা, স্বপ্ন ও সাধনা অবিচল রয়ে গেছে আজও সেই স্যাক্সোফোন ঘিরেই।
|
রবীন্দ্রসঙ্গীত সাধনায় উৎসর্গীকৃত অভিজিৎ চক্রবর্তী। জন্ম উত্তরবঙ্গের কোচবিহারে। এক জন স্বনামধন্য শিল্পী এবং সঙ্গীত প্রশিক্ষক হিসেবে তিনি প্রতিষ্ঠিত। পৈতৃক বাড়ি শিলিগুড়িতে। সঙ্গীতে হাতেখড়ি রতন চট্টোপাধ্যায়ের কাছে এবং পরে কুমকুম মুখোপাধ্যায়। তালিম ডঃ স্বপ্না ঘোষালের কাছে। রবীন্দ্র গবেষক সুভাষ চৌধুরী এবং দ্বিজেন মুখোপাধ্যায়ের মতো শিল্পীর সান্নিধ্যে আসেন তিনি। ১৯৯৪ সালে বিশ্বভারতীর মিউজিক বোর্ড-এর শিল্পী হিসেবে অনুমোদন পান অভিজিৎ। শুরু হয় তাঁর পথচলা। আকাশবাণীর বিশেষ শিল্পী হিসেবে জায়গা করে নিয়েছেন। তিনি আজ নিজের প্রচেষ্টায় উত্তরবঙ্গের প্রতিষ্ঠিত শিল্পী এবং নবীন শিল্পীদের তালিম দিয়ে দূরর্দশন, বিভিন্ন চ্যানেলে সঙ্গীত পরিবেশনের সুযোগ করে দিচ্ছেন। সে সব অনুষ্ঠানের ভিডিও ক্যাসেটও নিজে সংরক্ষণ করে রেখেছেন। আবৃত্তি এবং নৃত্য শিল্পীরাও জায়গা পাচ্ছেন সেখানে। |
লেখা ও ছবি: গৌতমী ভট্টাচার্য।
|
নিজের চেষ্টায় শিলিগুড়িতে তৈরি করেন বিচিত্রা সঙ্গীত সংস্থা। উত্তরবাংলা এবং দক্ষিণ বাংলার শিল্পীকে একত্রিত করার সফল প্রয়াস চালিয়ে যাচ্ছেন নিরলস মানুষটি। যার তথ্য প্রমাণিত। সকলকে নিয়ে পথচলার এক মহৎ প্রচেষ্টা তাঁর মধ্যে। কর্মব্যস্ত জীবনের অপর এক অধ্যায়ে তিনি প্রতিবন্ধী সংস্থায় ছাত্রদের বিনা পারিশ্রমিকে সঙ্গীতে তালিম দিয়েছেন, ভবিষ্যতেও দেওয়ার ইচ্ছে রাখেন। তাঁর সান্নিধ্যে আজ অনেক ছাত্র-ছাত্রী সুপ্রতিষ্ঠিত। প্রিয় গান ‘মহাবিশ্বে মহাকাশে মহাকাল মাঝে’। অভিজিৎ স্বপ্ন দেখেন জীবনে অনেক ভালো কাজ করবার।
|