পঞ্চায়েতের ফল দেখে লোকসভা নিয়েও জল্পনা
ঞ্চায়েত ভোটের ফলাফলের নিরিখে লোকসভা ভোট নিয়ে স্বপ্ন দেখতে শুরু করেছেন তৃণমূলের হাওড়া জেলা নেতৃত্ব।
জেলার ১৫৭টির মধ্যে তারা নিজেদের ঝুলিতে পুরেছে ১২৩টি গ্রাম পঞ্চায়েত। সিপিএম এবং কংগ্রেস পেয়েছে যথাক্রমে ২৩টি এবং ১টি গ্রাম পঞ্চায়েত। ২০০৮ সালে কংগ্রেসের সঙ্গে জোট করে তৃণমূল ৬৮টি গ্রাম পঞ্চায়েত নিজেদের দখলে রাখতে পেরেছিল। কংগ্রেস পেয়েছিল ২২টি গ্রাম পঞ্চায়েত। অন্য দিকে, বামফ্রন্ট পেয়েছিল ৫৭টি গ্রাম পঞ্চায়েত। এ বারের নির্বাচনের তৃণমূল ঝড়ে অস্তিত্বের সঙ্কটে পড়ে গিয়েছে বামফ্রন্ট-কংগ্রেস। বামেরা পেয়েছে ২৩টি। তৃণমূল পেয়েছে ১২৩। কংগ্রেসকে একটি আসন নিয়েই দৌড় শেষ করতে হয়েছে।
জেলায় পঞ্চায়েত সমিতির সংখ্যা ১৪টি। সবগুলিই পেয়েছে তৃণমূল। ২০০৮ সালের পঞ্চায়েত নির্বাচনে বামফ্রন্ট পাঁচটি পঞ্চায়েত সমিতির দখল রাখতে পারলেও এ বারে তাদের প্রাপ্তি শূন্য। কংগ্রেসের হাতেও ছিল ২টি পঞ্চায়েত সমিতি। খালি হাত তাদেরও। বামফ্রন্টের হাত থেকে তৃণমূল ছিনিয়ে নিয়েছে জেলা পরিষদ। জেলা পরিষদের ৪০টি আসনের মধ্যে তৃণমূল পেয়েছে ৩৪টি আসন।
জেলায় দু’টি লোকসভা আসনের মধ্যে উলুবেড়িয়ার পুরোটা পড়ে পঞ্চায়েত এলাকায়। জেলার ১৪টি ব্লকের মধ্যে ৯টি ব্লক উলুবেড়িয়া লোকসভার অধীন। এই ৯টি ব্লকে পঞ্চায়েত নির্বাচনের ফল আগামী লোকসভা নির্বাচনের আগে তৃণমূল নেতৃত্বকে স্বস্তিতে রাখবে বলে জেলার রাজনৈতিক মহল সুনিশ্চিত।
উলুবেড়িয়া লোকসভা কেন্দ্রের অধীনে যে ৯টি ব্লক রয়েছে সেগুলি হল, উদয়নারায়ণপুর, আমতা ১ ও ২, বাগনান ১ ও ২, শ্যামপুর ১ ও ২ এবং উলুবেড়িয়া ১ ও ২। বর্তমান তৃণমূল সাংসদ সুলতান আহমেদ ২০০৯ সালে এই লোকসভা আসনে কংগ্রেসের সঙ্গে জোট করে সিপিএমের সাত বারের সাংসদ হান্নান মোল্লাকে হারিয়েছিলেন প্রায় ১ লক্ষ ভোটে।

সন্ত্রাসের জেরেই এই ফল,
অভিযোগ বিরোধী দলগুলির।
পায়ের তলায় মাটি হারিয়ে কুৎসা
করছে ওরা, বলছে শাসক শিবির।
এ বারের নির্বাচনে আমতা ১ ও ২ ব্লকের যথাক্রমে ১৩ ও ১৪টি গ্রাম পঞ্চায়েতের সব ক’টিতে জিতেছে তৃণমূল। বাগনান ২ ব্লকের ৭টির মধ্যে সব ক’টি, উদয়নারায়ণপুরের ১১টির মধ্যে ১০টি, উলুবেড়িয়া ১ ব্লকের ৯টির মধ্যে ৪টি, উলুবেড়িয়া ২ ব্লকের ৮টির মধ্যে ৭টি, শ্যামপুর ১ ব্লকের ১০টির মধ্যে ৬টি, শ্যামপুর ২ ব্লকের ৮টির মধ্যে ৭টি এবং বাগনান ১ ব্লকের ১০টির মধ্যে ৬টি গ্রাম পঞ্চায়েত দখল করেছে তৃণমূল। এই ৯টি ব্লকে থাকা ৮৮টি গ্রাম পঞ্চায়েতের মধ্যে বামফ্রন্ট পেয়েছে মাত্র ১৭টি। কংগ্রেস পেয়েছে মাত্র ১টি গ্রাম পঞ্চায়েত।
উলুবেড়িয়া লোকসভা কেন্দ্রের মধ্যেই রয়েছে হাওড়া জেলার একমাত্র কংগ্রেস বিধায়ক অসিত মিত্রের নির্বাচনী এলাকা আমতা।
এই বিধানসভা কেন্দ্রে পড়ে আমতা ২ ব্লকের ১৪টি এবং বাগনান ১ ব্লকের ৪টি গ্রাম পঞ্চায়েত। ২০০৮ সালের নির্বাচনে এই দু’টি ব্লক মিলিয়ে ৫টি গ্রাম পঞ্চায়েত ছিল কংগ্রেসের হাতে। এ বারে এই ১৮টি গ্রাম পঞ্চায়েতে ধুয়ে মুছে সাফ হয়ে গিয়েছে কংগ্রেস।
জেলার রাজনৈতিক মহলের বক্তব্য, গ্রাম পঞ্চায়েত এবং পঞ্চায়েত সমিতির মাধ্যমে সরাসরি মানুষের সঙ্গে যোগাযোগের সুযোগ পাওয়া যায়। নিজেদের দখলে থাকা ৭০টি গ্রাম পঞ্চায়েত এবং ৯টি পঞ্চায়েত সমিতিকে সামনে রেখে আগামী লোকসভা নির্বাচনে বিরোধীদের মোকাবিলা করবে তৃণমূল। এটা তাদের পক্ষে একটা বড় সুযোগ।
একই চিত্র দেখা যাচ্ছে জেলার অন্য লোকসভা কেন্দ্র হাওড়ার ক্ষেত্রেও। এই লোকসভার অধীনে রয়েছে মূলত পাঁচলা এবং সাঁকরাইল। মাস দুই আগে হয়ে যাওয়া লোকসভা নির্বাচনে অবশ্য সাঁকরাইল বিধানসভা কেন্দ্রে পিছিয়ে পড়েছিল তৃণমূল। এ বারের পঞ্চায়েত নির্বাচনেও সিপিএম এই ব্লকে ভাল ফল করেছে। তবে কংগ্রেস কোনও গ্রাম পঞ্চায়েত পায়নি। সাঁকরাইল পঞ্চায়েত সমিতিও পেয়েছে তৃণমূল। অন্য দিকে, পাঁচলায় ১১টির মধ্যে ৭টি গ্রাম পঞ্চায়েত এবং পঞ্চায়েত সমিতির দখল নিয়েছে তৃণমূল। এই ব্লকেও কোনও গ্রাম পঞ্চায়েত পায়নি কংগ্রেস। ফলে আগামী লোকসভা নির্বাচনে কংগ্রেসের সঙ্গ ছাড়াই বিরোধীদের পর্যুদস্ত করার মতো অবস্থায় এই দু’টি ব্লকে তৃণমূল পৌঁছে গিয়েছে বলে জেলার রাজনৈতিক মহল মনে করে।
জেলার অন্য তিনটি ব্লক, ডোমজুড়, জগৎবল্লভপুর এবং বালি-জগাছা মূলত পড়ে হুগলির শ্রীরামপুর লোকসভা কেন্দ্রে। এই তিনটি ব্লকেও বামফ্রন্ট ধরাসায়ী হয়েছে হয়েছে তৃণমূলের কাছে। কংগ্রেসও পা রাখতে পারেনি। তিনটি পঞ্চায়েত সমিতি চলে গিয়েছে তৃণমূলের হাতে। আগামী লোকসভা নির্বাচনে এই তিনটি ব্লক শ্রীরামপুরের তৃণমূল প্রার্থীকে উজাড় করে সাহায্য করবে বলে এই দলের নেতাদের দাবি।
তৃণমূলের জেলা নেতৃত্বের বক্তব্য, পঞ্চায়েত নির্বাচন উপলক্ষে তাঁরা লোকসভা নির্বাচনের মহড়াও সেরে নিলেন। তাঁদের দাবি, গ্রাম পঞ্চায়েত এবং পঞ্চায়েত সমিতিগুলিকেই যদি ঠিক ভাবে কাজে লাগানো যায়, তা হলে অন্য কোনও দলের (পড়ুন কংগ্রেস) সাহায্য ছাড়াই লোকসভা নির্বাচনে কিস্তি মাত করা যাবে।
কংগ্রেসের পক্ষ থেকে অবশ্য অভিযোগ করা হয়েছে সন্ত্রাস করে পঞ্চায়েতের দখল করেছে তৃণমূল। দলের বিধায়ক অসিত মিত্র বলেন, “সন্ত্রাসের আবহ তৈরি করে তৃণমূল পঞ্চায়েত নির্বাচনকে প্রহসনে পরিণত করেছে। লোকসভা নির্বাচনে অন্য ফল হবে।” সিপিএমের জেলা সম্পাদক বিপ্লব মজুমদার বলেন, “রাজ্য পুলিশের সাহায্য নিয়ে কেন্দ্রীয় বাহিনীকে বসিয়ে সন্ত্রাস করে কী ভাবে নির্বাচনে জিততে হয়, তা এই নির্বাচনে হাতে কলমে পরীক্ষা করল তৃণমূল। একই পদ্ধতি তারা প্রয়োগ করবে লোকসভা নির্বাচনেও। একটাই ভরসার কথা, তখন থাকবেন ভিন রাজ্যের পর্যবেক্ষক। পঞ্চায়েত নির্বাচনে রাজ্যের পর্যবেক্ষকদের যে ভাবে ব্যবহার করা হয়েছে, লোকসভায় সেটা আর করা যাবে না।”
তৃণমূলের জেলা সভাপতি তথা রাজ্যের কৃষি বিপণনমন্ত্রী অরূপ রায় এবং উলুবেড়িয়ার সাংসদ সুলতান আহমেদ বলেন, “মানুষের কাছ থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে গিয়েছে সিপিএম ও কংগ্রেস। পায়ের তলায় মাটি হারিয়ে কুৎসা রটনা করছে তারা।”

স্কুলের নথিপত্র তছনছ
তালা ভেঙে স্কুলে ঢুকে নথিপত্র ছিঁড়ে, পুড়িয়ে দিল দুষ্কৃতীরা। নষ্ট করা হল কম্পিউটার। সোমবার রাতে ঘটনাটি ঘটেছে হুগলি জেলার বলাগড় থানার গুপ্তিপাড়া উচ্চ বালিকা বিদ্যালয়ে। মঙ্গলবার সকালে বিষয়টি নজরে আসতে স্কুল কর্তৃপক্ষ পুলিশে খবর দেন। স্কুল সূত্রে জানানো হয়েছে, প্রধান শিক্ষিকার ঘর, কম্পিউটার রুমে ঢুকে নথিপত্র তছনছ করা হয়। অনেক নথি পুড়িয়ে দেওয়া হয়। কম্পিউটারের তার ছিঁড়ে ফেলা হয়। বিদ্যালয় পরিচালন কমিটির সম্পাদক প্রসেনজিৎ মণ্ডল বলেন, “কে বা কারা এমন করল, বুঝতে পারছি না। পুলিশ তদন্ত করে বের করুক।” পুলিশ জানিয়েছে, কেন শুধু নথিপত্র নষ্ট করা হল, তা তদন্ত করে দেখা হচ্ছে। এর সঙ্গে স্কুলের পরিচিত কেউ যুক্ত কি না, তা-ও দেখা হচ্ছে বলে জানিয়েছেন তদন্তকারী অফিসারেরা।



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.